হযরত আমির খসরু দেহলভী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬২৫- ৭২৫ হিজরী)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যখন হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইন্তিকাল হল তখন হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলত্বান মুহম্মদ তুঘলক্ব-এর সাথে লখনুতে ছফরে যাওয়ার কারণে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ছফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে তিনি অনেক রোনাজারী কান্নাকাটিতে মশগুল হয়ে পড়লেন।
তিনি একথা বলে ক্রন্দন করতে ছিলেন যে, শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিদায়ের পরে আমি আর জীবিত থাকব না। এর পরেও তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন।
বর্ণিত আছে যে, হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি ১৮ই রবিউচ্ছানী ৭২৫ হিজরীতে এবং আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি ১৮ই শাওয়াল ৭২৫ হিজরীতে বিদায় নেন। আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
হযরত আমির হাসান বিন আলা সান্জারী
দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৬০-৭৩৬ হিজরী)
হযরত আমির হাসান বিন আ’লা সান্জারী দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বীয় যামানার সমস্ত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান ও অধিক সম্মান হাছিল হয়েছিল। তিনি সুলত্বানুল মাশায়িখ হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি-এর অধিক নৈকট্য, দয়া ও ইহ্সানের কারনে অন্যান্য মুরীদগণের চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য ছিলেন। উত্তম মুয়ামিলাত, আভ্যন্তরীন পবিত্রতা ও অন্যান্য সকল সৎগুণাবলীতে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন ছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি ইলমে মা’রিফাতের সমস্ত গুনাবলীতে গুনাম্বিত ছিলেন। যদিও তিনি এবং হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি একে অপরের বন্ধু ছিলেন তথাপিও হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপর উনার কিছুটা বড়ত্ব অর্জিত ছিল। তিনি হযরত সুলত্বান গিয়াসুদ্দীন বলবান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শানে অনেক কাছিদা লিখেছিলেন কিন্তু আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছীদার মধ্যে তার ব্যাপারে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। তবে তিনি সুলত্বান গিয়াসুদ্দীন বলবান-এর সন্তান অরজমন্দ খান শহীদ (যিনি তার পিতার সময়কালে মুলতানের গভর্নর ছিলেন) -এর শানে অনেক ক্বাছীদা লিখেছেন। যখন আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি মুলতান ছিলেন তখন খান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি শায়খ মুসলিহুদ্দীন সা’দী সিরাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে মুলতান আসার দরখাস্ত করলেন। কিন্তু শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুলতানে আসার ব্যাপারে রাজী হলেন না বরং বললেন, আমি এখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি, আমার তথায় যাওয়ার শক্তি নেই। এছাড়াও হিন্দুস্থানে ছফর করার মানসিকতাও এখন আমার নেই।
আর আমীর খসরু ও শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর পরস্পরের দেখা-সাক্ষাতের যে ঘটনা বর্ণিত আছে তা মুলত: ভিত্তিহীন কথা।
মীর হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তার লিখিত কিতাব ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ -এর মধ্যে শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক মালফুযাতসমূহকে একত্রিত করেছেন এই কিতাব তাঁর সুস্পষ্ট, সুন্দর ও সহজ ভাষায় হওয়াতে তা হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ মু’তাকিদগণের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, যদি আমার সমস্ত লিখা মীর হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নামে সম্পৃক্ত হতো, আর তাঁর লিখা কেবলমাত্র ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ কিতাবখানা আমার নামে সম্পৃক্ত হতো (তবে কতইনা ভাল হতো)।” এ কথা এরই সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বীয় শায়খের প্রতি চুড়ান্ত পর্যায়ের মুহব্বত ছিল।
ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, একদা আমি সুলত্বানুল মাশায়িখ হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক খিদমতে হাজির হলাম। তিনি তখন স্বীয় আসন মুবারকে বসা ছিলেন। আমি চৌকাঠের উপরে বসে পরলাম। প্রবল বাতাসের চাপে বার বার দরজা বন্ধ হচ্ছিল। যার জন্য আমি ঐ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পরে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন যে, আমি দরওয়াজা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কেন দরজা ছেড়ে দিচ্ছো না? আমি বিনীতভাবে বললাম আমি (এজন্য) উহা ধরে রেখেছি যাতে বাতাসের চাপে উহা বন্ধ হয়ে না যায়। তখন তিনি মুচকি হেসে বললেন- তোমার যা চাহিদা তা এভাবেই শক্ত করে ধরে রাখবে।
(অসমাপ্ত)