মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত আমির খসরু দেহলভী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬২৫- ৭২৫ হিজরী)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এছাড়া সিয়ারুল আওলিয়া কিতাবের লিখক বলেছেন যে, আমির খসরু এর উপর তার শায়খের যত দান ও ইহসান হয়েছে তা আমির খসরু নিজেই বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে একটি তিনি নিজেই এরূপ লিখেছেন- একদা হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, “আমি সমস্ত দুনিয়া থেকে বিছিন্ন হয়ে গেলাম শুধু তোমার থেকে আলাদা নয়।”
একবার এক ব্যক্তি খুব আগ্রহের সাথে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট আরজ করলেন যে, “আপনি যেভাবে আমির খসরুকে দেখেন (মুহব্বত করেন) একবারের জন্য হলেও আমাকে অনুরূপ রহমত ও ইহসানের দৃষ্টিতে দেখুন।” তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর কোন উত্তর দিলেন না বরং তিনি আমাকে (আমির খসরুকে) বললেন, আমার অন্তরে তখন একথা আসল যে, আমি প্রশ্নকারীকে বলে দেই “তুমি প্রথমে আমির খসরু এর মত গ্রহণযোগ্যতা হাছিল কর।”
একদা তিনি আমাকে বললেন, হে আমির খসরু! তুমি আমার জন্য দোয়া কর। কেননা আমার স্থায়িত্বের উপরেই তোমার স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। একথাগুলো উপস্থিত লোকেরা শায়খের সামনে কয়েকবার দোহরালেন তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই উহা সংঘটিত হবে।
শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে মহান আল্লাহ পাক-এর মুবারক দরবারে সোপর্দ করে এই ওয়াদা করেছিলেন যে, যখন আমি জান্নাতে যাব তখন তোমাকেও সাথে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
একবার আমি শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি আমাকে তাঁর নিকটে ডাকছেন। স্বপ্নের দৃশ্যটা এই ছিল যে, হযরত শায়খ নজীবুদ্দীন মুতাওয়াক্কিল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘরের সামনে অনেক পানি প্রবাহমান ছিল তখন আমি এক সুউচ্চ আসনে বসা ছিলাম যা দেখে হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি খুব আনন্দিত ও খুশী হলেন। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আমীর খসরু! আমার অন্তরে একথা উদয় হয়েছে যে, আমি মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার তোমার জন্য আমার চাহিদামত দোয়া করি (অর্থাৎ তোমার মৃত্যুর জন্য দোয়া করি) কেননা আমি মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের দরবারে চাই যেন তিনি আমার দোয়া কবুল করেন। (তুমি মৃত্যুবরণ পূর্বক আমার কাছে চলে আসো।)
একদা আমি শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক যবানের আওয়াজ শুনলাম তিনি বলছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে যে, স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমির খসরুকে প্রসংশাসুলভ লক্বব দিয়ে স্বরণ করেছেন। (সুবহানাল্লাহ)
অদৃশ্য থেকে আমার নিকটে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেয়া খিতাব শুনানো হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই মুবারক সম্বোধনের কারণেই মহান আল্লাহ পাক এই খাদেমকে অনেক নিয়মত দান করেছেন। এ বান্দাকে “খাজা তরকুল্লাহ” এ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছিল।
এ খাদেমকে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের হাত মুবারকে লিখা কয়েকখানা চিঠি দিয়েছিলেন যা তিনি তাবিজ বানিয়ে রেখেছিলেন এবং তা তার কবরে দিয়ে দেয়ার জন্য বলেছিলেন। (এবং তিনি বলেছিলেন যে) ইনশাআল্লাহ শায়খের এই মুবারক লিখার বদৌলতে মহান আল্লাহ পাক আমাকে ক্ষমা করবেন।
একবার শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে তাঁর নিকটে ডেকে বললেন, (হে খসরু) আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি তাহলো- শায়খ ছদরুদ্দীন ইবনে শায়খুল ইসলাম হযরত বাহাউদ্দীন যাকারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার নিকটে তাশরীফ এনেছেন। আমি তাঁকে তা’যীম-তাকরীম করলাম এবং তিনিও এত বিনয়ের সাথে এসেছেন যা বর্ণনাতীত। এই অবস্থায় আমি দেখলাম (হে খসরু) তুমিও দৌড়ে আসছিলে যখন তুমি আমার নিকট এসে পৌঁছলে তখন মা’রিফতে ইলাহী এর বয়ান শুরু হলো। এমতাবস্থায় মুয়াজ্জিন ফজরের আজান দিলেন আমারও চক্ষু খুলে গেল। স্বপ্নও ভেঙ্গে গেল। অতঃপর শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে বললেন, দেখ! ইহা কত বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার, তখন আমি বললাম, হে আমার শায়খ ইহা সবই আপনার মুবারক ফয়েজের ওসীলায়। ইহা শুনে তিনি উঁচু আওয়াজে ক্রন্দন করতে লাগলেন। আমি উহা দেখে অশ্রুশিক্ত হয়ে গেলাম। এর পরেই তিনি স্বীয় হাত মুবারক দ্বারা তাঁর খাছ টুপি মুবারক আমাকে পরিধান করালেন ও বললেন মাশায়েখে কিরামগণের কথাকে সর্বদা স্বরণ রাখবে।
শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শানে দু’টি শে’র বলেছেন তাহলো-
“গদ্যে ও পদ্যে অন্য কেহ আমির খসরু এর সমকক্ষ নয়, রাজত্ব ও রাজত্বমূলক বাক্যই তাঁর শান। আমাদের এ খসরু নাছির খসরু নয় রবং তিনি অনেক উঁচু মাক্বামের অধিকারী।” (চলবে)