মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত আমির খসরু দেহলভী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬২৫- ৭২৫ হিজরী)
হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন, তৎকালীন সময়ে সুলত্বানুশ শুয়ারা, বুরহানুল ফুদ্বালা, ওদিয়ে খিতাবাত তথা কথাবার্তায়, বাক্যালাপে ও মনুষত্বে শীর্ষস্থানীয় আলিম ও অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব।
অল্প কথায় অধিক অর্থ বুঝানোর ক্ষেত্রে এবং সর্বপ্রকার বাক্যালাপ ও কথাবার্তায় তিনি যেমন পূর্ণতা হাছিল করেছিলেন যা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কোন কবিগণই অর্জন করতে পারেন নি। তিনি স্বীয় কবিতাগুলো তাঁর শায়খের মুবারক নির্দেশানুযায়ী এবং ইস্পাহানী তর্জ-তরীকায় লিপিবদ্ধ করেছেন।
মূলতঃ তাঁর এরূপ প্রজ্ঞাসম্পন্ন কবিতা লিখতে পারার কারণ হলো তিনি ছিলেন হাক্বীক্বী ইলম্ ও ফজল তথা হাক্বীক্বী তাছাউফের অধিকারী ও আল্লাহওয়ালাদের গুণে গুণান্বিত। যদিও তিনি রাজ্য পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তথাপিও তাঁর ব্যক্তিগত আমল আখলাক, স্বভাব চরিত্রের সাথে অন্যান্য, দুনিয়াদার রাজা-বাদশাদের আমল আখলাকের মিল ছিল না (অনেক তারতম্য ছিল)। যার সুস্পষ্ট একটি দলীল হচ্ছে তাঁর সমস্ত কবিতা বা শে’র সমূহের মধ্যে সমস্ত মাশায়িখগণই প্রচুর ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ অনুভব করতেন। এবং ফাসিক ফুজ্জারদের অন্তর উক্ত বরকত (ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ) থেকে বঞ্চিত হত। তা তারা গ্রহণ করতে পারতোনা এবং তাদের অন্তরে এর কোন প্রকার তাছির হত না।
বর্ণিত আছে যে, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ নামাযে সাত পাড়া কুরআন শরীফ পাঠ করতেন। একদা হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হে তরক তোমার কর্মব্যস্ততার কি অবস্থা? হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উত্তরে বললেন, হে আমার শায়খ রাতের শেষাংশে অধিকাংশ সময়ই রোনাজারী কান্নাকাটি ইত্যাদিতেই কেটে যায়। এতদশ্রবণে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। কিছুটা নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে।
সাইয়্যিদুল আউলিয়া কিতাবের লেখক জনাব সাইয়্যিদ মুহম্মদ ছহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি ভূমিষ্ট হন তখন সেই এলাকায় একজন অপরিচিত মজ্জুব বুযূর্গ ব্যক্তি অবস্থান করতেন। তখন আমীর খসরুকে একটি নতুন কাপড়ে জড়িয়ে উক্ত বুযূর্গের সামনে পেশ করা হলো। তিনি তাঁকে দেখে বললেন, তুমি এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে এসেছ যিনি খাক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চেয়েও দু’কদম সামনে আগানো (অগ্রসর)।
সম্ভবত সেই মজ্জুব বুযুর্গের বক্তব্য ‘দু’কদম অগ্রসর’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমীর খসরু রহমতুল্লাইহি আলাইহি-এর কাছীদা বা গজল পাঠে অগ্রসর হওয়া। কেননা অনান্য বুযূর্গানে দ্বীন গণও তাঁর শানে বলেছেন যে, আমীর খসরু কাছীদা বা গজল পাঠে হযরত খাক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সমপর্যায়।
তিনি শায়খুল মাশায়িখ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পুরাতন বন্ধু এবং মুরীদগণের অন্যতম। তাঁর শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি তাঁর সীমাহীন বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মুহব্বত ছিল। এবং শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁকে সীমাহীন ভাল বাসতেন। আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি শায়খের খিদমত ও ছোহবতে যতটুকু নৈকট্য লাভ করেছিলেন তা অন্য কারো মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। তাঁর আদত ছিল এমন যে তিনি প্রতিনিয়ত বাদ ইশা শায়খের খিদমতে হাজির হতেন এবং সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও আরজী পেশ করতেন।
শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহিকে স্বীয় হস্ত মুবারকে লিখা যেই চিঠি মুবারক দিয়েছিলেন তম্মধ্যে একটি হলো এরূপ-
“শরীর হিফাজতের পরে ঐসকল কার্যাবলী থেকে বিরত থাকবে যা শরীয়তে অবৈধ। নিজের সময়কে গুরুত্ব দিবে এবং স্বীয় জীবনের ঐ সকল সময়কে গনীমত মনে করবে যে সময়টুকু তুমি ভাল কাজে ব্যয় করতে পেরেছ। নিজের জীবনের অবসর সময়কে বেকার ও অপ্রাসঙ্গিক কাজে নষ্ট করবে না। যদি স্বীয় ক্বলবে ছিনা প্রশস্ত হওয়ার কুওয়াত পয়দা হয় তাহলে (আরো বেশি) ছিনা প্রশস্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। কেননা তরীক্বতের পথে এর (ছিনা প্রশস্ত হওয়ার আকাঙ্খার) যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সত্যান্বেষী ও কল্যাণকামী হওয়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করবে।”
(অসমাপ্ত)