মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত ক্বাজী মুহিউদ্দিন কাশানী কুদ্দিসা সিররুহুল আযীয (৬৫৮-৭১৯)
হযরত শায়খ ক্বাজী মুহিউদ্দিন কাশানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদগণের মধ্যে কামালিয়ত, ইলম, যুহুদ, তাক্বওয়া, ইত্যাদি বিশেষ গুণে অন্যতম প্রসিদ্ধ ছিলেন। ইলম ও কারামতের উৎস ও ওস্তাদ হিসেবে শায়খের নিকট বাইয়াত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই সমস্ত দুনিয়ার প্রত্যান্ত অঞ্চলেও তিনি সুপরিচিত হয়ে যান। হাদিয়া তোহফা ইত্যাদি যা কিছুই তার নিকট আসত তা সবই তিনি স্বীয় শায়খের দরবার শরীফে নিয়ে গরীব মিসকিন শ্রেণীর লোকদেরকে বন্টন করে দিতেন। তাঁর স্বীয় শায়খের অধিকাংশ মালফুযাত মুখস্ত ছিল। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাঁকে খিলাফত দেন তখন একখানা কাগজে লিখে দিয়েছিলেন-
“তুমি দুনিয়া বিরাগী হবে, দুনিয়া এবং দুনিয়াদারদের প্রতি মায়েল হবে না, জায়গীর গ্রহন করবে না, রাজা-বাদশাদের দেয়া নজরানা গ্রহণ করবে না, যদি তুমি খালি হাতেও থাক এমতাবস্থায় তোমার কাছে কোন ভিক্ষুক আসলে উহাকে নিয়ামত মনে করবে। আমি যেই নির্দেশ করলাম সে অনুযায়ী আমল করবে। আমার বিশ্বাস তুমি অনুরূপই করতে পারবে। তাহলেই তুমি আমার উপযুক্ত খলীফা। আর যদি তা না পার তবে আমার খিলাফত আল্লাহ পাক এর কাছে সোপর্দ।
বর্ণিত আছে যে, একদা ক্বাজী মুহিউদ্দিন কাশানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট জিজ্ঞাসা (আরজ) করলেন, মহান আল্লাহ পাক-এর মোরাকাবা, হযরত রসূলে মাকবুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মোরাকাবা ও শায়খের মোরাকাবা আলাদা আলাদা হবে? নাকি একই সাথে হবে? হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উত্তরে বলেন, দু’ভাবেই (আলাদা অথবা একসাথে) করা যায়।
যখন একই সাথে মোরাকাবা করবে তখন এই ধারণা করবে যে, আমি মহান আল্লাহ পাক-এর সামনে হাজির আছি। এবং আল্লাহ পাক এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ডান পার্শ্বে ও আমাকে দেখতেছেন ও আমার শায়খ মুর্শিদ ক্বিবলা আমার বাম পার্শ্বে রয়েছেন।
বর্ণিত আছে যে, ক্বাজী মুহিউদ্দিন কাশানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যখন দারিদ্রতা ও অভাবী জীবন শুরু হলো তখন তাঁর মুরীদ মু’তাক্বিদগণ যারা হাদিয়া তোহফা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল তাদের এই দারিদ্র অবস্থা বরদাশ্ত হলোনা তাই শায়খের একজন এবং এহেন দারিদ্র অবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি তাঁর এ অবস্থা সুলতান আলাউদ্দিন খিলজিকে জানালেন। তখন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী শায়খের নাম আওদাহ-এর কাজীর হিসাবে লিখে দিলেন।
এই সংবাদ যখন কাজী মুহিউদ্দীন কাশানী রহমতুল্লাহি আলাইহি অবগত হলেন তখন তিনি এই কথা স্বীয় শায়খকে জানালেন ও বললেন (হে আমার মুর্শিদ ক্বিবলা) এই শাহী নির্দেশ আমার মর্জি ব্যতীতই জারী করা হয়েছে কিন্তু এখন আপনার মুবারক নির্দেশ অনুযায়ী আপনি যা বলেন তাই করব। তখন হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন নিশ্চয়ই তোমার অন্তরে এধরনের খেয়াল ছিল যার কারণেই তুমি এ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছ। শায়খের এরূপ উত্তর শ্রবন করে কাজী মুহিউদ্দীন কাশানী রহমতুল্লাহি আলাইহি খুবই চিন্তিত, লজ্জিত ও পেরেশান হয়ে পরলেন। ভালভাবে উলব্ধি করলে যে অবশ্যই শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রতি নারাজ হয়েছেন। শায়খ তখন তাঁকে দেয়া খিলাফতনামা ফেরত নিয়ে এক কর্ণারে নিক্ষেপ করলেন। এক বছর যাবত শায়খ কাজী ছাহেবের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। এক বছর পরে যখন কাজী ছাহেব তার পুরাতন অভ্যাসে ফিরে আসলেন তখন শায়খ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। এবং তাকে নতুন করে বাইয়াত করালেন। শায়খ নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হায়াত মুবারকে থাকতেই তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। মহান আল্লাহ পাক তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০