ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
(৮২০-৯০১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
من عرف نفسه فقد عرف ربه
যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পারলেন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকেও চিনতে পারবেন।
এ হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে অনেক নিগুঢ় তত্ত্ব নিহিত রয়েছে। আর এ বিষয়ে (পূর্বোক্ত বর্ণনায়) একটি ইশকাল রয়েছে তা হচ্ছে- এভাবে মহান রব্বুল আলামীন উনার জাতে পাক নাপাকী ও গান্দা মাক্বামাত এর সাথে সংশ্লিষ্ট হয় যা প্রকাশ্যভাবেই অসম্ভব বা সমীচীন নয়।
ছূফীয়ানে কিরামগণ এ বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, একথার উপরে সমস্ত মুসলিম উম্মাহ একমত যে, সমস্ত নাপাকী ও খারাবী এর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত ও মদদ ছাড়া ভাল মন্দ কোন কিছুই বেঁচে থাকতে পারে না। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত ও মদদের মাধ্যমে সবকিছুর (ভাল মন্দের) সঙ্গী হওয়াটা দোষের কিছুই নয়। একথাও সকলের জানা রয়েছে যে, ক্রিয়া কর্তা ছাড়া এবং ছিফত মাওছুফ ছাড়া অস্তিত্বে আসতে পারে না। কোন কোন লোকের বক্তব্য হচ্ছে- প্রতিটি মানুষের রূহই তার বিচারক এবং উহা মানুষের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথেই বিদ্যমান রয়েছে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এবং হায়াত ইত্যাদি সবই রূহের সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং জিসম এর মধ্যে রূহের অবস্থান এমন যে, শরীরের মধ্যস্থিত রক্ত বা অন্যান্য নাপাক জিনিস রূহের পবিত্রতার ক্ষেত্রে কোন তাছির ফেলতে পারে না। অধিক বাক্যালাপকারীরা মহান আল্লাহ পাক উনার মাখলূকাতের সঙ্গী হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক সমস্ত কায়িনাতকে ভালমন্দের প্রতিফল দেয়া, সমস্ত নিয়ামতরাজী বণ্টনসহ যাবতীয় সকল অসম্ভব বিষয়াবলী স্বীয় কুদরতের দ্বারাই সম্পন্ন করেন। এ বিষয়টিও তারা শুধু বাহ্যিকভাবে বিশ্লেষণ করে থাকে। (মহান আল্লাহ পাক তিনিই সঠিক পথের হিদায়েতকারী)
শের:
گفت توکے دیدی اں رخسار را. چشم مجنوں بایداں دیداررا. تانیاید عشق مجنو نے بدید کے بو دلیلی نجا تو نے پدید
گربچشم من نہ بینی روئے اوتوتیا سازی زخاک کوئے او.
তুমি ঐ হুসাইন রুখসারকে দেখনি? তাকে দেখার জন্য ইশক ও মুহব্বতের চক্ষু প্রয়োজন। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার মধ্যে ইশক পয়দা না হয় ততক্ষণ তুমি অন্য কোন আশিক ব্যক্তিকে দেখে তার থেকে লাইলী-এর ন্যায় ইশকির মাক্বাম হাসিল কর। তারপরেও যদি তোমার মাশুককে স্বীয় চোখে দেখতে না পাও তবে তাঁর বাড়ির রাস্তার মাটিকে সুরমা বানিয়ে চোখে লাগিয়ে দাও।
যখন রিয়াযত মাশাক্কাত করণেওয়ালা লোকদের কোশেশ তাদের মনজিলে মাকছুদে পৌঁছতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তখন আমি তাদের আকাঙ্খা পূর্ণ করার জন্যই কলম হাতে নিয়েছি। যাতে যেসকল লোক ক্বলবের পবিত্রতা থেকে মাহরূম তাদেরকে মহান রব্বুল আলামীন উনার গুপ্তভেদ এর মুরাক্বাবা দ্বারা উহা অবগত করিয়ে দেই।
তখনই ওই সকল লোক নিজেদেরকে æমহান রব্বুল আলামীন উনার সাথে এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক উনাকে নিজেদের সাথে” এ বিষয়টি বুঝতে পারেন। যে সকল লোক মহান আল্লাহ পাক উনাকে নিজের থেকে দূরে মনে করে সেই মূলত বেয়াদব এবং আল্লাহ পাক উনার হুকুম আহকাম এর বিরোধিতাকারী। সর্বপ্রকার নিয়ামত থেকে সর্বাধিক মাহরূম ওই ব্যক্তি যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে নিজের সাথী মনে করে না। ওয়াসসালাম
মাকতুব: মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী নাম মুবারক এর বর্ণনা: ওহে ভাই! শরহে আদাবুল মুরীদীন কিতাবে আমাার শায়খ উনার লিখিত প্রসিদ্ধ কিতাব æমানাযিলুচ্ছায়িরীন” থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদে বিশ্বাসীগণের পরিভাষা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী নাম মুবারক উনার পবিত্রতম জাতে পাক-এরই অন্তর্ভুক্ত। মূলত যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তির মহান আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদ সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝে না আসবে ততক্ষণে সে আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী নাম মুবারক সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে পারবে না। মহান রব্বুল আলামীন উনার ইচ্ছায় আমার এই মাকতূব দ্বারা আসমায়ে ইলাহী-এর হাক্বীক্বত সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাবে।
প্রথমে উহাকে একটি উদাহরণ দ্বারা বুঝে নাও। যেমন- কোন একটি স্থানে একটি গভীর পানির কূপ রয়েছে। যা উহার জাত, ছিফত, আছবাব, নফস ও অস্তিত্বসহ বিদ্যমান রয়েছে। ওই পানিই সমস্ত শস্য ক্ষেতে দিয়ে সিক্ত করা হয়, সমস্ত স্থানে উহাকে ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং অন্যান্য যাবতীয় প্রয়োজন যথা ওযু, গোসল, খাওয়া দাওয়া, বরতন, প্লেট ও কাপড় চোপড় ধৌত করাসহ জরুরত মিটানো হয় তথা সর্বক্ষেত্রেই উহা ব্যবহার করা হয়। (চলবে
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮৮
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৯৪