মূলঃ এম সিদ্দিক গূমুজ, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ রুহুল হাসান
[শয়তান যে মানুষকে নেক ছূরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী-খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রীষ্টীয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য।
“Confession of a British Spy and British enmity against Islam”
গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। (ইনশাআল্লাহ)]
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এ (খালিদ) লোকটি, যার জন্যে আমি কাজ করতাম, সে ছিল চরিত্রহীন এবং নেশাগ্রস্থ। কেন জানি সে আমাকে বিশ্বাস করতো। কারণ সম্ভবত এটা যে আমি তাকে সবসময় মেনে চলতাম। সে গোপনে শরীয়ত অমান্য করতো কিন্তু বন্ধুদের সামনে শরীয়ত অনুসরণের ভান করতো। সে শুক্রবারে নামাযে যেতো, ঠিকই কিন্তু অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রে কি করতো এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না।
সকালের নাস্তা আমি দোকানে গিয়ে সেরে নিতাম। কাজের পর, যোহরের নামাযের জন্যে আমি মসজিদে যেতাম এবং আছরের নামায পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করতাম। আছরের নামাযের পর, আমি যেতাম আহমেদ আফেন্দীর কাছে, সেখানে তিনি আমাকে ঘন্টা দুয়েক কুরআনুল কারীম পাঠ করা এবং আরবী ও তুর্কী ভাষা শিক্ষা দিতেন। শুক্রবার এলেই আমার সমস্ত সপ্তাহের আয় তার হাতে তুলে দিতাম এবং তিনি আমাকে খুব ভালভাবে শিখাতেন। কিভাবে কুরআনুল কারীম তিলওয়াত করতে হয়, ইসলাম পালনের প্রয়োজনীয়তা কি এবং আরবী ও তুর্কী ভাষার জটিল বিষয়গুলো সবই তিনি যতœ করে আমাকে শিখাতেন। যখন আহমেদ আফেন্দী জানলেন আমি একা, তিনি তার একজন মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে রাজি হইনি।
তিনি তবু পিড়াপিড়ী করতে লাগলেন এবং বুঝালেন যে বিয়ে করা হচ্ছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে আমার সুন্নত থেকে সরে যায় সে আমার উম্মত নয়’।” আমি উপলদ্ধি করলাম যে এ ঘটনাটি আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে ফলে তাকে মিথ্য বলতে হল যে, আমার বিয়ে করার শারীরিক ক্ষমতা নেই। এভাবে আমাদের উভয়ের ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব অব্যহত রাখতে সক্ষম হই।
ইস্তাম্বুলে আমার দু’বছরের অবস্থান যখন শেষ হয়ে এলো, আমি আহমেদ আফেন্দিকে বললাম, “আমি এবার দেশে ফিরে যেতে চাই।” তিনি বললেন, না যেওনা। কেন যাবে? ইস্তাম্বুলে তুমি যা চাবে তাই খুঁজে পাবে। আল্লাহ পাক একই সাথে দ্বীন ও দুনিয়া দিয়ে ভরে দিয়েছেন এই শহরকে। তুমি বলেছো যে তোমার বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। আর কোন ভাই বোনও নেই তবে কেন তুমি এই ইস্তাম্বুল শহরেই স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছোনা?” আমার ব্যাপারে আহমেদ আফেন্দীর মনে একটা নির্ভরশীলতা তৈরী হয়েছিল। সে কারণেই তিনি আমাকে ছেড়ে দিতে রাজী হননি বরং চাপ প্রয়োগ করেছিলেন যাতে ইস্তম্বুলে আমি আমার আবাস গড়ি। কিন্তু আমার দেশপ্রেমজনিত কর্তব্য জ্ঞান আমাকে তাড়া দিচ্ছিলো আমি যেন লণ্ডন ফিরে যাই, ফিরে গিয়ে খিলাফতের কেন্দ্রভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদান করি এবং নতুন নির্দেশনা লাভ করি।
ইস্তাম্বুলে অবস্থানকালীন সময়গুলোতে আমি প্রতিমাসে উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ে আমার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক রিপোর্ট পাঠাতাম। আমার মনে পড়ে, একটি প্রশ্নে আমি জানতে চেয়েছিলাম যে আমি যে কাঠমিস্ত্রীর নিকট কাজ করছি, সে আমার সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে চায়, এ অবস্থায় আমার কি করণীয়? উত্তর ছিল, তোমার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তুমি তাও করতে পার। এ রকম উত্তরে আমি সাঙ্ঘাতিক অপমান বোধ করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি জানি যে এ ধরনের পাপাচার ইংল্যান্ডে খুবই সাধারণ তবু আমার ক্ষেত্রে এরকম কখনো ঘটেনি যে আমার উপরওয়ালারা আমাকে এরকম কাজ করতে আদেশ করবে। আমি তাহলে কি করবো! আমার নেশার বাটি তলা পর্যন্ত সাবাড় করা ব্যতীত আর কিছুই করার ছিলনা। সুতরাং আমি চুপ হয়ে গেলাম এবং নিরবে কাজ করতে লাগলাম।
(চলবে)
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ