[শয়তান যে মানুষকে নেক ছূরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী-খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিম সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ধ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তিমূলক রচনা। মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। (ইনশাআল্লাহ)]
(ধারাবাহিক)
১৪। পানির অভাবে অপরিচ্ছন্নতা সৃষ্টি হয়। সেজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে পানি সরবরাহ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবে।
মুসলমানদের শক্তিকে ধ্বংস করে দেবার জন্য বইটিতে নীচের মতামতগুলো প্রকাশ করা হয়েছে-
১. স্বগোত্রীয় প্রীতি এবং জাতিগত অহংকার সম্পর্কে মুসলমানদের উগ্র এবং অন্ধ স্বদেশ প্রেমে এমনভাবে উম্মাদ করতে হবে যাতে প্রাক ইসলামিক যুগের বীরত্বের প্রতি পুনঃ মনোনিবেশ করে। মিশরে ফিরআউনের যুগ, ইরানের ম্যাগী সময়কাল, ইরাকের ব্যাবিলনীয় সময়, অটোম্যানদের আঠিলা চেঙ্গিস যুগের অরাজক অবস্থা পুনঃ জাগরিত হয়। (তারা এ বিষয়ে একটা লম্বা তালিকা প্রণয়ন করেছে।) ২. গোপনে বা প্রকাশ্যে নীচের অপকর্মগুলো অবশ্যই করতে হবে। শরাব, জুয়া, ব্যাভিচার, শুকরের গোশত খাওয়া এবং খেলাধুলার দলগুলোর মদ্যে প্রতিযোগিতা। এসব করতে গিয়ে মুসলিম দেশগুলোর খ্রিস্টান, ইহুদী, ম্যাাগিয়ান এবং অন্যান্য অমুসলিমদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে। আর এ কাজে যারা নিয়োজিত থাকবে তাদেরকে কমনওয়েলথ মন্ত্রণালয়ের কোষাগার থেকে বেশি পরিমান বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. জিহাদ সম্পর্কে তাদের মনে সংশয়ের বীজ বপন করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে জিহাদ ছিল একটা সাময়িক হুকুমমাত্র যা বর্তমানে অচল হয়ে গেছে। ৪. শিয়াদের মন থেকে এ ধারণা দূর করে দিতে হবে যে, কাফিররা মন্দ নয়। সেজন্যে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করবে যেমন “আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুুসমূহ হালাল করা হল। আহ্লে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে।” (সূরা মায়িদা, আয়াত-৫)
তাদেরকে বলবে, নবীর এক স্ত্রী ছিল ইহুদী, যার নাম ছিল সাফিয়া। আর মারিয়া নামেও এক খ্রিস্টান স্ত্রী ছিল। তারা তো মন্দ ছিল না।
( হযরত সাফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা একজন ইহুদী সর্দারের কন্যা তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং উম্মুল মু’মিনীর এর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। আর মারিয়া কিবতিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মিশরের এক সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান বংশে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনিও ইসলাম কবুল করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীম রদ্বিয়অল্লাহু তায়ালা আনহু মূলত মারিয়া কিবতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর মুবারক রেহেম শরীফে আসেন। সুতরাং সাফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে ইহুদী এবং মারিয়া কিবতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে খ্রিস্টান বলা চরম বেয়াদবি এবং কুফরী কাজ।)
৫. মুসলমানদের মধ্যে এ ধারণার জন্ম দিতে হবে যে, “নবীগণ ইসলাম বলতে যা বুঝিয়েছেন তাই পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। সেদিক থেকে ইহুদী ধর্ম এবং খ্রিস্টান ধর্মও আসলে ইসলাম। এ মতবাদকে নীচের যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করবে।
কুরআন সব ধর্মের সবাইকে মুসলমান নাম দিয়েছে। যেমন ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, আমাকে একজন মুসলিম হিসেবে কতল কর।” আর হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস্্ সালাম তাদের দোয়ায় বলেছেন, “হে আমাদের রব (আল্লাহ পাক) আমাদিগকে মুসলমান বানান এবং আমাদের বংশধরদের থেকেও মুসলিম জনতা তৈরী করুন।” হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্্ সালাম তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, “মরতে হলে একমাত্র মুসলমান হিসেবে মরবে।”
(সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্্ সালামগণ একই মৌলিক নীতি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সকল রসূলগণের শরীয়ত বা আদেশ নিষেধ এক রকম নয়। ঈমান আনা এবং শরীয়ত অনুসরণ করাটাই হল ইসলাম। প্রেত্যেক নবী আলাইহিমুস্্ সালামগণের শরীয়ত অন্যদের চেয়ে ভিন্ন রকমের, সেজন্য ইসলাম পালনও ছিল ভিন্ন রকম। আল্লাহ পাক-এর রসূল হিসেবে উলুল আ’যম রসূলগণ ওহীর মাধ্যমে নতুন শরীয়ত প্রণয়ন করেছিলেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইসলাম এনেছেন সেটা দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত অন্খুন্ন থাকবে। সূরা আল ইমরানের ১৯তম এবং ৮৫তম আয়াত শরীফে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইহুদী খ্রিস্টানদেরকে তাদের পূর্বের ধর্ম ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, “যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আনীত ইসলাম কবুল করবে না, তারা বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না এবং অনন্তকাল দোযখের আগুণে জ্বলবে।” পূর্বোক্ত নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম তৎকালীন ইসলামকে মান্য করতে বলেছেন। গির্জায় যাওয়ার সেই শরীয়ত এখন আর কার্যকর নয়। (চলবে)
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২