ভাষান্তরঃ আল্লামা মুহম্মদ রুহুল হাসান।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা- ৩৬
ভাষান্তরঃ আল্লামা মুহম্মদ রুহুল হাসান।
শয়তান যে মানুষকে নেক চূরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী-খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। “Confession of a British Spy and British enmity against Islam গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। (ইনশাআল্লাহ)]
(ধারাবাহিক)
১৮। মুসলমানরা যখন কোন মাহফিলে একত্রিত হয়, ওয়ায়েজগণ মুসলমানদের ঈমান দৃঢ় করেন এবং ভাল কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯। আমর বিল মারূপ (সৎ কাজের আদেশ) এবং নাহি আনিল মুনকার (অসৎ কাজের নিষেধ) পালন করা ফরজ।
২০। মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য বাড়াবার জন্য একের অধিক বিবাহ করা সুন্নাহ (শর্ত সাপেক্ষে)।
২১। একজন মানুষকে হিদায়েতের পথে নিয়ে আসা সমস্ত পৃথিবী পাওয়ার চেয়ে উত্তম।
২২। সকল মুসলমানদের জানা আছে যে, কেউ যদিকোন কল্যাণকর পথ দেখায় তবে সেই পথ অনুসরন করে যারা সওয়াব অর্জন করবে, সেই বাক্তিত্ব সেই সওয়াবের ভাগী হবেন।
২৩। মুসলমানগণ কুরআন ও হাদীছকে গভীর শ্রদ্ধা সহকারে ধারণ ও অনুসরণ করে। তারা বিশ্বাস করে এই দুই উৎসের অনুসরণই বেহেশত।
পাবার পথ।
বইটিতে মুসলমানদের উক্ত বিশ্বস্ত অবস্থানগুলোকে আরো পঙ্গু এবং ব্যাপকভাবে দুর্বল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং সেটা সফল করার
জন্য বইটিতে পথ দেখানো হয়েছেঃ
১। বিবাদমান গোত্র সমূহের মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে। অবিশ্বাসকে জোরদার করবে এবং বিভিন্ন সাহিত্য প্রকাশনার মাধ্যমে মতবিরোধকে জাগিয়ে তুলবে।
স্কুলে শিক্ষালাভ এবং প্রকাশনায় বাধা দেবে। যেখানে সম্ভব সাহিত্য
২। তথা বইপত্র জ্বালিয়ে দেবে। মুসলিম ছেলে মেয়েরা যাতে অজ্ঞ থেকে যায় সে জন্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের নিন্দাবাদ করবে যাতে মুসলিম অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে না পাঠায়।
৩-৪। তাদেরকে বেহেশতের কথা বলবে এবং বোঝাবে পৃথিবীর জন্য কাজকর্ম করার প্রয়োজন নেই। তাছাউফের নামে বিভ্রিান্তির পরিধিকে বিস্তৃত
করবে। তাদেরকে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বইপত্র পড়তে দিয়ে বিশেষত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এহইয়াউ উলুমুদ্দিন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মসনবী শরীফ, মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বইপত্র পুড়ানোর নামে তাদের মধ্যে একধরনের অসচতেনতাবোধ জাগিয়ে তুলবে। (নাউজুবিল্লাহ)
(গুপ্তচর হেমপায়কে গড়তে দেয়া বইটিতে মূলতঃ সুক্ষ্মভাবে তাছাউফের বিরুদ্ধে বলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং মানুষকে প্রকৃত তাছাউফের শিক্ষা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদেরকে ওলীআল্লাহদের সোহবত থেকে দূরে রাখার জন্যই তাদের এ বক্তব্য। কারণ ওলীআল্লাহদের সোহবত ইখতিয়ার না করলে কারো পক্ষে হাক্বীক্বীভাবে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ের মহব্বত ও মারেফাত ও মারেফাত এবং তায়াল্লুক ও নেছহত হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ইসলাম কখনই শুধু বেহেস্তের আশায় বসে থেকে কাজকর্ম করতে নিষেধ করেনি। বরং হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক পুরুষের জন্য উপার্জন করা ফরয।” কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর হালাল রুজির সন্ধ্যানে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়। মুলতঃ হেমপারের বইটিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ইসলাম হয়তো কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে এবং বৈরাগ্যকে পছন্দ করে কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আবার সূক্ষ্মভাবে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বই এর নাম বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি মসনবী শরীফ, মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বইগুলোর নাম উল্লেখ করেছে। অথ্য বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক না করুন, যদি কোন কারণে পৃথিবীতে কুরআন মজীদ এবং হাদীছ শরীফের শিক্ষা না থাকে এবং শুধু এহইয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাবখানা থাকে তবে মানুষ শুধু এহইয়াউ উলুমিদ্দীন পড়ে আবার পরিপূর্ণ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মসনবী শরীফে তাছাউফের যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষা মূলতঃ মানুষের চরিত্রকে সুন্দরভাবে গঠন করে, উন্নত করে, নির্মল করে। মানুষের সব অসৎ স্বভাবগুলো দূর হয়ে যায় এবং সব সুন্দর, সং স্বভাবগুলো অর্জিত হয়। মূলতঃ তাছাউফই হচ্ছে ইসলামের মূল। আজকের সমাজে এতসব ফিৎনা ফাসাদের মূল কারণ হচ্ছে তাছাউফ বর্জিত সব শিক্ষা। তাছাউফের শিক্ষার ফলে মানুষের অন্তর থেকে দূর হয় অহংকার, হিংসা, ঈর্ষাপরায়ণতা, মিথ্যা, দীবত, লোও এতসব যদ স্বভাবগুলো আর অর্জিত হয় অল্পেষ্কৃষ্টি, ধৈর্য্য, সত্যবাদিতা, ন্যায় পরায়ণতা, এসকল সৎস্বভাব। মানুষ যদি ইসলামের এই মূল শিক্ষা তাছাউফের শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তবে একজন মানুষ পৃথিবীর যে কোন কাজে যে কোন পদে অধিষ্ঠিত হোক না কেন সেই কাজ এবং সেই দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালিত হবে। কিন্তু তাছাউফের শিক্ষা ব্যতীত অন্য যতই শিক্ষাই থাকুক না কেন তা মানুষের চরিত্র গঠন করেনা ফলে পৃথিবীতে দেখা দেয় অশান্তি, নৈরাজ্য, ফিৎনা-ফাসাদ, মারামারি ইত্যাদি। সুতরাং তাছাউফের শিক্ষা মানুষের মধ্যে অসচেতনতা বোধ তো তৈরী করেই না বরং তৈরী করে চরম পর্যায়ের সচেতনতা বোধ।) (চলবে)
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২