ভাষান্তরঃ মুহম্মদ রুহুল হাসান
[শয়তান যে মানুষকে নেক ছূরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী-খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। “Confession of a British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। (ইনশাআল্লাহ)]
(ধারাবাহিক)
আমি বললাম, প্রিয় শিক্ষক! ‘ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা যে বাতিল’- এ ব্যাপারে কি আপনার কোন মতামত পেতে পারি?
উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ তারা বাতিল। তিনি আরও বললেন, তাদের থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।”
আমি যখন কারণ জানতে চাইলাম, তিনি উত্তর দিলেন, “এটা অপমানের প্রতিশোধ নেবার মানসেই করা হয়ে থাকে। তবে তারা আমাদেরকে অবিশ্বাসীর চোখে দেখে এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করে। যে কারণে আমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করি।”
আমি তাকে বললাম, “পরিচ্ছন্নতা কি ঈমানের অঙ্গ নয়? অথচ দেখুন, শান-ই-শরীফ (হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাযার শরীফ) এলাকার রাস্তা-ঘাট সব নোংরা এবং অপরিষ্কার। এমনকি মাদ্রাসা যাকে বিদ্যাপীঠ বলা হয় তাও পরিষ্কার বলে ধরা যায় না।”
উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ একথা সত্যি। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ, তবে কিছু করার নেই কেননা শিয়ারা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুব একটা গা করে না।”
নজফের শিয়া পণ্ডিতের কাছ থেকে আমি যে উত্তর পেয়েছিলাম মন্ত্রণালয়ের এই লোকের সঙ্গে তার বেশ মিল ছিল। নজফের সেই পণ্ডিতের সাথে এই লোকের মিল দেখে আমি সত্যি অবাক হলাম। উপরন্তু সেই লোকটিও ফার্সীতে কথা বলছে।
সচিব বললেন, তুমি যদি বাকী চার জনের সেখানকার আসল লোকগুলির সাথে কথাবার্তা বলে থাকো, তাহলে এই নকল ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করলেই বোঝা যাবে আসল নকলে কি অদ্ভূত মিল।
আমি বললাম, আমি জানি ‘শায়খুল ইসলাম’ কি চিন্তা করেন। কেননা ইস্তাম্বুলে থাকা অবস্থায় আমার শিক্ষক আহমেদ আফিন্দি আমাকে শায়খুল ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
সচিব তখন বললেন, তবে যাও শায়খুল ইসলামের সেই মডেলের সাথে আলাপ করতে থাকো।
আমি শায়খুল ইসলামের মডেলের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, “খলীফাকে অনুসরণ করা কি ফরয?”
উত্তরে সে বললো, ‘হ্যাঁ’ এটা ওয়াজিব। সে আরও বললো, এটা এ কারণে ওয়াজিব যেহেতু আল্লাহ পাক ও তাঁর রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানা ফরয।”
যখন আমি তাকে বললাম, “এর স্বপক্ষে তিনি কি দলীল দিতে পারেন?”
উত্তরে তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ পাক-এর এই আয়াত শোননি?- “আল্লাহ পাক, নবী এবং তোমাদের মধ্যকার উলীল আমরকে মান্য কর।”
আমি বললাম, “এই আয়াত শরীফ কি তাই বলে যে, ইয়াজীদকে আমাদের মানতে হবে? ইয়াজীদ তার সৈন্যদল দিয়ে মদীনা শরীফ লুণ্ঠন করেছিল, যে আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৌহিত্র হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করেছে। মান্য করতে হবে ওয়ালীদকে, যে শরাব পান করতো?”
তার উত্তর ছিল, “বৎস! ইয়াজীদ আল্লাহ পাক-এর অনুমতিক্রমে খলীফা হয়েছিলেন। সে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করার হুকুম দেননি। সুতরাং শিয়াদের মিথ্যা প্রচারে ভুল করো না। ভাল করে কিতাব পড়বে। আসলে সে ভুল করেছিল। এজন্যে সে তওবা করেছিল (সে ছিল অনুতপ্ত এবং এ জন্যে আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও অনুকম্পা চেয়েছে)।”
[এ বর্ণনা সম্পূর্ণ ভুল। শুদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে, “হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করার ক্ষেত্রে ইয়াজীদ অবশ্যই দায়ী। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া মতে, ইয়াজীদ চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে সে কাফির।”]
(অসমাপ্ত)
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫