ভাষান্তর: আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
[শয়তান যে মানুষকে নেক ছূরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী-খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ধ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। (ইনশাআল্লাহ)] (ধারাবাহিক) ওহাবী মতবাদের নীল নকশা বইটিতে আরও লেখা ছিল- ৯. আরবী শিক্ষা বন্ধ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবে। আরবী ভাষা বাদে অন্যান্য ভাষা যেমন ফার্সী, কুর্দিশ এবং পশতু এ সকল ভাষাসমূহকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করবে। আরব দেশসমূহে বিদেশী ভাষা প্রবেশ করিয়ে দেবে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের প্রাঞ্জল আরবী ভাষা ও তার সাহিত্যগুণকে নষ্ট করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক ভাষাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করবে। ১০. সরকারী আমলাদের পাশে আমাদের নিজস্ব লোক বসাতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে এ সকল লোকদের সচিব পর্যায়ে নিয়োগ দিতে হবে। যাদের মাধ্যমে আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের অভিলাষগুলো পূরণ করবো। এ কাজ করার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে দাস ব্যবসা অবলম্বন করা। প্রথমে আমাদের গুপ্তচরদের ভালভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং পরে তাদের দাস এবং রক্ষিতার ছদ্মবেশে পাঠাতে হবে। মুসলিম রাজন্যবর্গ বা আমলা স্থানীয় ব্যক্তিদের স্ত্রী, সন্তান এবং তাদের পরিচিত জনদের মাঝে এ সকল দাস বা রক্ষিতাদের বিক্রী করতে হবে। এভাবে যাদেরকে বিক্রী করা হবে তারা ধীরে ধীরে মালিকের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌছবে এবং মুসলিম শাসকদের এমনভাবে ঘিরে থাকবে যেমন চুড়ি হাতের মধ্যে জড়িয়ে থাকে। ১১. আমাদের মিশনারী অঞ্চলের পরিধি বিস্তৃত করতে হবে যাতে সমাজের যে কোন শ্রেণী এবং পেশার লোকদের মধ্যে বিশেষত ওষুধ ব্যবসা, প্রকৌশল এবং হিসাব-নিকাশের কর্মকা-ে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করা যায়। আমাদের প্রকাশনা এবং প্রচারকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। চার্চ, স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরী, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নামের আড়ালে আমরা মুসলিম দেশগুলোতে আমাদের কর্মকা- চালিয়ে যাবো এবং যতদূর সম্ভব চতুর্দিকে এর বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। বিনামূল্যে আমাদের লাখ লাখ খ্রিষ্টান ধর্মের বই পুস্তক ছড়াতে হবে। ইসলামের ইতিহাসের পাশাপাশি আমাদের খ্রিষ্ট ধর্মের ইতিহাস এবং সরকারী আইন প্রকাশ করতে হবে। বিভিন্ন চার্চ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে পুরোহিত ও নান এর ছদ্মবেশে আমাদের এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে এবং ধর্মীয় আন্দোলনের নেতা হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। তারা একইসাথে ইসলাম জগতের সকল গতি প্রবাহ এবং আন্দোলনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের রিপোর্ট করবে। তাছাড়া অধ্যাপক, বৈজ্ঞানিক এবং গবেষক ইত্যাদি নামের আড়ালে আমরা গড়ে তুলবো একদল খ্রিষ্টান বাহিনী যারা ইসলামের ইতিহাস বিকৃত বা নিশ্চিহ্ন করার তৎপরতা চালাবে। এরা ইসলামের জীবন পদ্ধতি, আচার-আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ সব আয়ত্ব করে ইসলামের বই-পুস্তক নষ্ট করবে এবং ইসলামী শিক্ষাকে নির্মূল করার চেষ্টা করবে। ১২. মুসলমান যুবক, বালক এবং মেয়েদের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে হবে এবং ইসলামের ব্যাপারে তাদের মনে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে হবে। স্কুল, বই-পত্র, ম্যাগাজিন, খেলাধূলার ক্লাব গঠন, প্রকাশনা, সিনেমা, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণরূপে তাদের অন্তর থেকে নৈতিক মূল্যবোধ সরিয়ে ফেলবো এবং আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্টরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মুসলিম যুব সমাজকে ফাঁদে ফেলার জন্যে প্রয়োজনে গোপনে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে ইহুদী, খ্রিষ্টান এবং অমুসলিম যুবকদের জ্ঞান দান এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ১৩. গৃহযুদ্ধ এবং গণবিদ্রোহ সৃষ্টিকে উসকে দিতে হবে। মুসলমানদেরকে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যাস্ত রাখতে হবে। একইভাবে অমুসলিমদের সাথেও যুদ্ধে লিপ্ত রাখতে হবে যাতে তাদের শক্তি নষ্ট হয় এবং উন্নতি ও ঐক্য বজায় রাখা বাধাগ্রস্থ হয়। তাদের মানসিক উৎকর্ষতা এবং আর্থিক ক্ষমতার উৎস যেন সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়। যুব ও কর্মশক্তিকে নষ্ট করে তাদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে হবে। ১৪. তাদের অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে ক্ষতি সাধন করতে হবে। উপার্জনের সকল উৎস, কৃষি ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থা, পানি সংযোগ এবং নদীর প্রবাহ এককথায় সবকিছু নষ্ট করতে হবে। লোকজনদেরকে করতে হবে কর্মবিমুখ, অলস এবং ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি অমনযোগী। অলসদের জন্য খেলার মাঠ উম্মুক্ত করতে হবে। মাদক দ্রব্য এবং শরাব পান করাকে সহজতর করতে হবে।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২