[শয়তান যে মানুষকে নেক ছূরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী-খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রীষ্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। “Confession of a British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। (ইনশাআল্লাহ)]
(ধারাবাহিক)
সুন্নিদের মতে চতুর্থ খলীফা এবং শিয়াদের মতে প্রথম খলীফা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নাজফে শুয়ে আছেন। নাজফ থেকে এক ঘন্টার হাঁটার পথ বা এক ফেরসা হচ্ছে কুফা। কুফা ছিলো হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের সময় রাজধানী। যখন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শহীদ হন তখন তার দুই ছাহেবজাদা হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজফে সমাহিত করেন। সময়ে নাজফে উন্নতির ছোঁয়া লেগে যায় এবং কুফা শহর ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে। শিয়া ধর্মানুসারীরা নাজফে এসে জামায়েত হয় এবং এভাবে সেখানে বসতবাড়ী, মাদ্রাসা এবং বাজার গড়ে উঠে।
নিম্নলিখিত কারণে ইস্তাম্বুলের খলীফা ছিলেন নাজফবাসীদের উপর সহানুভূতিশীল।
১. ইরানের শিয়া প্রশাসন এখানকার শিয়াদের সমর্থক। খলীফার হস্তক্ষেপ এখানে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং এক পর্যায়ে যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণ হতে পারে।
২. নজফের অধিবাসীরা একদল সশস্ত্র উপজাতীকে তাদের দলে ভিড়িয়েছিল, যারা শিয়াদের সমর্থন করতো। যদিও অস্ত্র এবং দলগত দিক থেকে তাদের অবস্থান তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, সে কারণে খলীফা কোন অহেতুক ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়াটাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করতেন না।
৩. সমগ্র বিশ্বের সকল শিয়ার ওপর বিশেষত আফ্রিকা ও ইন্ডিয়ার শিয়াদের নজফের শিয়াদের ছিল কর্তৃত্ব। খলীফা কর্তৃক তাদের বিরক্তির কিছু কারণ ঘটালে সমগ্র শিয়ারা খলীফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারতো।
৪. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৌহিত্র এবং হযরত ফাতিমরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পুত্র হযরত ইমাম হুসাইন বিন আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা শহীদ হন কারবালাতে।
ইরাকের অধিবাসীগণ মদীনায় গিয়ে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমন্ত্রণ করেন যেন তিনি ইরাকে এসে খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর পরিবারবর্গ যখন কারবালায় এসে পৌছেন ইরাকবাসীরা তখন তাদের সংকল্প পরিত্যাগ করে এবং দামেস্কে বসবাসরত উমাইয়া খলীফা ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার নির্দেশে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে গ্রেফতার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর পরিবারবর্গ শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত বীরত্বের সাথে ইরাকী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর পরিবারবর্গের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। যদিও এতে আপাত বিজয়ী হয় ইরাকী বাহিনী। সেদিন থেকে শিয়ারা কারবালাকে তাদের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে মেনে নিয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে শিয়ারা এখানে এসে জামায়েত হয় এবং এত বড় সমাবেশের মত কোন সমাবেশ আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যায় না। (চলবে)
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫