ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়েও মারবে আবার গঙ্গা ব্যারেজে বাধা দিয়েও মারবে। এটাই কী ভারতে সৎ প্রতিবেশী আচরণ? দেশপ্রেমিক সরকার গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করতে পারে না।

সংখ্যা: ২৫৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

ভারত কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি এবং সিল্ট ফ্লাসিংয়ের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি-ভাগীরথী নদীতে ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা আঁটে। এজন্যই গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা নামক স্থানে ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়। আর ১৯৭৫ সালে তা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় এবং চালুর পর থেকে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এই ব্যারেজের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন আ’লীগ সরকারের সাথে ভারত সরকার গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ত্রিশ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- এই পরিমাণ পানি ভারতীয়রা বাংলাদেশকে দেয়না এবং চুক্তির গ্যারান্টি ক্লোজ পর্যন্ত মেনে চলে না। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা নির্ভর নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে। দেখা দেয় মরুময়তা। পরিবেশেও এর বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। এতে করে ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহে দারিদ্র্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। আর অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে। বর্তমানে ফারাক্কার প্রভাবে এদেশের ৫ কোটি মানুষ গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পদ্মা নির্ভর প্রায় ৪৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার গৃহস্থালির পানি সরবরাহ, কৃষি, মৎস্য, বনজসম্পদ, নৌচলাচল, শিল্প কারখানা এবং সুন্দরবনসহ দেশের এক তৃতীয়াংশ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার।

ফারাক্কার ভয়াবহতা কাটিয়ে তুলতে ১৯৮০ সালে তালবাড়ীয়ায় গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি সমীক্ষার পর পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ মালায় বলা হয়, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গড়াইসহ ১৬টি নদী নাব্যতা ফিরেও পাবে। সেই সাথে দূর হবে এই অঞ্চলের লবণাক্ততার আগ্রাসন এবং ফিরে আসবে ফারাক্কার প্রভাবে বিনষ্ট হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য। গঙ্গা ব্যারেজের প্রথম সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৬১ সালে অক্টোবরে। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান ওয়াপদা ‘মেজর প্রজেক্ট অন দ্য গ্যাঞ্জেস’ শীর্ষক এই সমীক্ষা চালায়।

এরপর দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। সাত বছরের বেশি সময় ধরে সমীক্ষা, কর্মশালা ও সভা-সেমিনারের পর ২০১৪ সালে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়।

২০১৪ সালের মার্চেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের গ্রীন সিগন্যাল না পাওয়ায় দফায় দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছর (২০১৬ ঈসায়ী) মে মাসে এই প্রকল্পের ৬ষ্ঠ দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। চীনের প্রস্তাবনায় সরকার সম্মত না হলে এই প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। এই প্রকল্পটি নিয়ে ভারতের হাস্যকর আপত্তিটি হচ্ছে- গঙ্গা ব্যারেজ বাস্তবায়ন হলে এর অভ্যন্তরে থাকা পানি উল্টো স্রোতে ভারতীয় অংশে আঘাত হানবে। ফলে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে- এমন হাস্যকর আশঙ্কার কথা লিখিতভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছে দিল্লি।

এদিকে ভারতের এমন আপত্তির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। দিল্লীকে লিখিতভাবে জানানো হয়, তাদের এহেন আশঙ্কা ভিত্তিহীন। কারণ, গঙ্গা ব্যরাজের পানি ‘ব্যাক ফ্লো’ হয়ে কোনোভাবেই ভারতীয় অংশে আঘাত হানবে না। আর ব্যাক ফ্লো হলেও প্রায় ২শ’ কিলোমিটার দূরে ঢেউ যেয়ে ভারতীয় অংশে ভাঙন ধরানোর প্রশ্নই আসে না। এ জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে যৌথ সমীক্ষা করার প্রস্তাবও রাখা হয়। এরপরও ভারতের সাড়া মেলেনি। যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ থেমে আছে।

গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পটির সমীক্ষা চলাকালে একাধিকবার বলা হয়েছে, রিপোর্ট পেশ করা হলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করবেন। সমীক্ষা শেষে রিপোর্টও পেশ হয়েছে প্রায় চার বছর। কিন্তু এখন পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছয় কোটি মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্ন গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। এই এলাকার মানুষের প্রশ্ন কবে শুরু হবে এই প্রকল্পের কাজ? সরকার দেশের উন্নয়নে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করলেও এই প্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর অন্যতম বলে মনে করেন দেশের পানি বিশেষজ্ঞরাও। ইতোপূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক সহায়তাও খোঁজা হয়। এ পর্যায়ে মালয়েশিয়া ও চীন আগ্রহ প্রকাশ করে।

চীনের ‘থ্রি গর্জিয়াস’ ড্যাম নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিকল্প গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের জন্য একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। চীনের দেয়া ওই প্রতিবেদনে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে দেশীয় সমীক্ষা রিপোর্টের সাথে একমত পোষণ করা হয়েছে। ব্যারেজটি নির্মাণ হবে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ থেকে ৫৮ কিলোমিটার ভাটিতে। এই ব্যারেজ নির্মাণে দেশীয় সমীক্ষায় যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার চেয়েও ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি চায় চীনের প্রতিষ্ঠানটি। চায়না কোম্পানির প্রস্তাবনায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির বড় একটি অংশ খরচ হবে জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে। বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও এখারকার ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করে জাতীয় গ্রীডে নিতে যে পরিমাণ ব্যয় হবে-সেই খরচ সমীক্ষা রিপোর্টে ধরা ছিল না। চলতি ২০১৬ সালের ২৫ মে চায়না পাওয়ার কোম্পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। পাউবো’র এ সংক্রান্ত কমিটি চায়না পাওয়ার কোম্পানির প্রস্তাবনাটি মতামতসহ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পাউবো’র মতামতে বলা হয়, চায়না পাওয়ারের প্রস্তাবনাটি সঠিক। সরকার চায়না পাওয়ারের সাথে চুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

এতে করে তাদের ব্যয় দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটি নির্মাণে ভারতের আপত্তি এখনো বহাল রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানাবিধ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েও এ ব্যাপারে ভারতের ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে ভারতের অমূলক আপত্তিকে কেন্দ্র করে হতাশ সরকার।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, সরকার যেখানে গঙ্গা ব্যারেজের যৌক্তিক কারণ দেখাতে পেরেছে এবং ভারতের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছে পাশাপাশি চীন থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব পেয়েছে এই ত্রিমুখী সুবিধার বিপরীতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ কোনোক্রমেই স্থবির থাকতে পারে না। ভারতের প্রতি সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেশের জনগণ বরদাশত করতে পারে না। ভারতের কারণে দেশের হাজার বিলিয়ন ডলার ক্ষতি এবং হাজার হাজার বিলিয়ন ডলারের আয় বন্ধ থাকতে পারে না। দেশের এতো বিরাট স্বার্থ যে সরকারের কাছে উপেক্ষিত হয় সে সরকার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের সরকার হতে পারে না। এ সহজ কিন্তু ধারালো সত্যটি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার অনুভব করবেন এটাই জনপ্রত্যাশা।

-আল্লামা মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫১

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

অবশেষে জামাতীরা স্বীকার করিল যে, মুক্তি পাইতে চাহিলে মুরীদ হইতে হয়। আল্লাহ পাক-এর ওলী বা দরবেশ হইতে পারিলে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জামাতীরা তাহা নয় বলিয়াই আখিরাত তো দূরের কথা দুনিয়াতেই তাহারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার। আর মইত্যা রাজাকারের ফতওয়া অনুযায়ী তো- তাহাকেই কতল করা ওয়াজিব।