বলাবাহুল্য মদ নিয়ে জোট সরকারের আমলে পর পর তিনবার আলোচনার ঝড় উঠল। এর অবশ্য গুরুতর কারণ রয়েছে। যেহেতু বর্তমানে জোট সরকারের অংশীদার এবং ধর্মীয় অভিভাবক হচ্ছে দেশের নামধারী প্রধান দু’টি বা তিনটি ইসলামিক দল আর তাদের নেতারা হচ্ছে যথাক্রমে তথাকথিত শায়খুল হাদীছ, মুফতি, মাওলানা মুফাস্সিরে কুরআন, জাতীয় খতীব, ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক ইত্যাদি দাবীদার ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে ৪ঠা মে ২০০২ সালে যমুনা ডিস্টিলারি কোম্পানীকে দেশের দ্বিতীয় মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানরূপে লাইসেন্স দেয়া হয়। ২০০৩ সালের বাজেটে সরকার মদের দাম কমায়। আর ২০০৪ সালে নন-অ্যালকোহলিক লেবেলে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় অর্থাৎ মদ ক্রাউন ও হান্টার নামক ক্যানে সারা দেশে ছড়িয়ে যায়। এ সম্পর্কে পত্রিকান্তর প্রকাশিত হয়, “হান্টার ও ক্রাউন” নামের দু’টি নেশা উদ্রেককারী পানীয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহর বন্দর-গ্রাম এমনকি প্রত্যন্ত চর এলাকার হাট-বাজার ছেয়ে গেছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়ায় যুবক শ্রেণী এই পানীয় পানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের নাকের ডগায় নিতান্ত মুনাফার লোভেই এই পানীয়গুলো বাজারজাত করা হচ্ছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। শিল্প মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ বিএসটিআই-এর অনুমোদন নিয়েই এই নেশাযুক্ত পানীয় ছড়িয়ে গেছে দেশের সর্বত্র। নন-অ্যালকোহলিক পানীয় হিসেবে বিএসটিআই থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলেও এসব ড্রিংকে সুস্পষ্টভাবেই অ্যালকোহল বা মদের উপকরণের (নেশা উদ্রেককারী উপাদান) অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। প্রচলিত বিয়ারে যে পরিমাণ অ্যালকোহল মিশ্রিত থাকে হান্টার ও ক্রাউন ড্রিংকে তার প্রায় কাছাকাছি পরিমাণ অ্যালকোহল থাকায় এসব পানীয়কে নন-অ্যালকোহলিক বেভারেজ হিসেবে কিভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। মূলতঃ মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত প্রচলিত আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়েই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্বিবাদে এই নেশাজাতীয় পানীয় বাজারজাত করায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ অ্যালকোহলমুক্ত বলা হলেও বিয়ারের চেয়ে মাত্র দশমিক ২ ভাগ কম অ্যালকোহল দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে হান্টার মল্ট বেভারেজ, যা বিয়ারের চেয়ে মোটেই কম নেশা উদ্রেককারী নয়। ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকেও রয়েছে নেশার উপকরণ অ্যালকোহল। এই ড্রিংকগুলোর ক্যানের গায়ে ও বিজ্ঞাপনে নন-অ্যালকোহলিক বেভারেজ-এর কথা লেখা রয়েছে। কিন্তু এসব ক্যান বিশেষ করে, হান্টার মল্ট বেভারেজের ক্যানের যে প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের ধোকা দেয়া হয়েছে তা এক কথায় প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। হান্টার-এর ক্যান-এ দেখা গেছে যে, এর গায়ে ক্যানের গায়ের রং এ নীল কাগজের একটি স্টিকারে নন-অ্যালকোহলিক বেভারেজ লেখা রয়েছে। কিন্তু সেই স্টিকারটি তুলে ফেললেই তার নিচে টিনের ক্যানে ৪ দশমিক ৮ ভাগ অ্যালকোহল রয়েছে বলে উল্লেখ আছে। তবে গত ক’দিন যাবৎ এই প্রতারণা নিয়ে সচেতন জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিলে ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড ভিন্ন আঙ্গিকে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। গত রবিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) মতিঝিল এলাকার একটি কনফেকশনারি দোকান থেকে হান্টার-এর কৌটা কিনে এনে দেখা যায় পূর্বে যে জায়গায় ৪ দশমিক ৮ অ্যালকোহল থাকার কথা লেখা ছিল সে জায়গায় ঘষে তা তুলে ফেলা হয়েছে। এভাবেই ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড সাধারণ জনগণের কাছে তাদের উৎপাদিত পানীয়কে নন-অ্যালকোহলিক বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তবে ইতোমধ্যেই দেশের বড় শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত এলাকায় এই পানীয়টি বিয়ারের মতো বলে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে গেছে। যুবক ও উঠতি বয়সের তরুণ-কিশোররা এটি পান করে নেশা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। (১১ই ফেব্রুয়ারী দৈনিক ইনকিলাব) ইসলামের দৃষ্টিতে হান্টার বাজারজাত করণের দায়বদ্ধতা মাওলানা মন্ত্রী এড়াতে পারেন কি? ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে তবে আমি উমর বিন খত্তাব (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে) তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
পাঠক! এই হচ্ছে ইসলামী আদর্শের নমুনা। যেটা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “প্রত্যেকেই রক্ষক তাকে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক কত দূরবর্তী দায়িত্বের জন্য দায়বদ্ধ হতে পারেন বর্ণিত ঘটনা তারই একটি উদাহরণ মাত্র। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, ক্রাউন এবং হান্টার বাজারজাত করণের দায় আইনানুগভাবে বিদ্ধ হয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও তার অন্তর্ভুক্ত বিএসটিআই এর প্রতি। যেমন প্রকাশিত প্রতিবেদনে পত্রস্থ হয়েছে “শিল্প মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ বিএসটিআই এর অনুমোদন নিয়েই এই নেশাযুক্ত পানীয় ছড়িয়ে গেছে দেশের সর্বত্র।” পাঠক! দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত গত ১২ই ফেব্রুয়ারীর রিপোর্টে প্রকাশিত এই বক্তব্যের কারণেই নয় বরং ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যেহেতু দেশের প্রচলিত আইনে এটি একটি শিল্পজাত দ্রব্য অতএব তা শিল্প মন্ত্রণালয়েরই অধীন বিষয়। সুতরাং ফোরাতের কুকুর মারা গেলে যেমন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করতেন এখানেও তেমনি ক্রাউন ও হান্টারের মত একটি মদ শিল্প কিভাবে গড়ে উঠতে পারল, বাজারজাত হতে পারল তার জন্য অনুরূপ শিল্পমন্ত্রীকেই দায়বদ্ধ হতে হয়। অথচ বর্তমান শিল্পমন্ত্রী একটি নামধারী ইসলামী দলের আমীর। যারা এদেশে ইসলামী বিপ্লব ঘটানোর, খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবীদার। আর সংশ্লিষ্ট ঘটনাই প্রমাণ করে যে সত্যিকার অর্থে তারা ইসলামী খিলাফতের জন্য আদৌ যোগ্যতাধারী না ক্ষমতার শাসনের জন্য হারামকে হালাল কারী। তথা ইসলামী দায়িত্ব বোধ থেকে কত দূরে অবস্থানকারী। মদ নিয়েও মৌসুমী এবং পক্ষপাতদুষ্ট আন্দোলন
অভিযোগ রয়েছে এদেশে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে যেসব আন্দোলনকারী রয়েছে তাদের অনেকেই আবার কাদিয়ানীদের থেকে টাকা খান। এবং সে প্রাপ্তি যোগটা মন মত না হলেই তারা ফুঁসে উঠেন। এ কারণে দেখা যায় যে, এসব আন্দোলনকারীরা লাগাতার ভাবে কিছু করেন না। হঠাৎ ফুঁসে উঠেন আবার চুপসে যান। এরপর আবার ফুলে ফেপে উঠেন আবার নিস্তেজ হয়ে যান। কারণ বলতে গেলে ঐ একটাই হিসেবের কম বেশ।
পাশাপাশি অন্য সব ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মন্ত্রীত্ব, এমপি, বিদেশী ডেলিগেশনে অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি মনমত প্রাপ্তি হলেই সব ঠাণ্ডা। আর তাতে ব্যাঘাত ঘটলেই, ফতোয়ার বিরুদ্ধে রূলনিশি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ হত্যাকা-, মাদ্রাসা শিক্ষার সুবিধাদান ইত্যাদি ইস্যু চাঙ্গা হয়ে উঠে। এরকম অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী যখন তাদেরকে পাশে বসিয়ে হালকা চা নাস্তা খাইয়ে ভবিষ্যতের সুখ স্বপ্নের বিবরণ দিয়ে মিষ্ট কথায় তুষ্ট করে দেন তখন তারা আবার সুবোধ বালকে পরিণত হন। মদ নিয়েও তারা এ রকম মৌসুমী আন্দোলন দেখালেন। ৪ঠা মে ২০০২-এ যখন সরকার যমুনা ডিস্টিলারী কোম্পানীকে মদের লাইসেন্স দিল তখন তারা চুপ থাকলেন। ২০০৩ সালে বাজেটে যখন মদের দাম কমানো হলো তখনও তারা চুপ থাকলেন। কিন্তু ২০০৪-এ যখন পূর্বোক্ত যমুনা গ্রুপেরই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন বেভারেজ কোম্পানী নিজস্ব উদ্যোগে ক্রাউন ও হান্টার বের করল তখন তারা আওয়াজ তুললেন। অর্থাৎ প্রথম দু’টি ক্ষেত্রে যেহেতু সরকার সম্পৃক্ত ছিল সেহেতু ধর্মের নামধারী সরকার জোট সরকারকে রক্ষা করতে তাদের মত তথাকথিত ধর্মবেত্তাগণ নীরব ছিলেন। তবে এ অভিযোগ উঠেছে, এবার যেহেতু পূর্বোক্ত কোম্পানী নিজ উদ্যোগে মদ বাজারজাত করণের ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু তার আগে তথাকথিত ধর্মবেত্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য যথাযথ হাদিয়া নজরানা পাঠায়নি সেহেতু এবার তারা সরব হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে এবারের বিবৃতি দাতা তথাকথিত শায়খুল হাদীছ, মুফতী, খতিব, মুহিউদ্দীন কেউ বিগত দু’ক্ষেত্রে কোন কথা বলেননি। এমনকি তথাকথিত মুফাস্সিরে কুরআন যে সাংসদ এবার সংসদে হান্টারের বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে কিছু বলেছে সেও বিগত দুই ক্ষেত্রে কিছুই বলেনি। অর্থাৎ তাদের সব কিছুই মৌসুমী, স্বার্থবাদী ও লোক দেখানো বটে। মদ বেচার টাকা খেয়েছে তথাকথিত ইসলামী দৈনিক ইনকিলাবের মালিক-কর্মচারীঃ
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আতিয়া সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশজনের প্রতি লা’নত করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে, (২) যে মদ তৈরীর ফরমায়েশ দেয়, (৩) যে মদ পান করে, (৪) যে মদ বহন করে, (৫) যার জন্য মদ বহন করা হয়, (৬) যে মদ পান করায়, (৭) যে মদ বিক্রি করে, (৮) যে এর মূল্য ভোগ করে, (৯) যে মদ ক্রয় করে, (১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্) উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রতিভাত হয়, যে মদের সাথে সামান্যতম সম্পৃক্ত থাকে সেও সমান গুনাহে গুনাহগার। এর প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, যদিও ইনকিলাব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে ক্রাউন ও হান্টারে অ্যালকোহল বা মদ রয়েছে এবং এ মদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে কিন্তু চরম ন্যাক্কার জনক ব্যাপার হলো যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ইনকিলাব নিজেই মদের ব্যবসার গুনাহে গুনাহগার। ইনকিলাবের মালিক-কর্মচারী সবাই মদ বেচার টাকা খেয়েছে। যার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ হলো, যে ১১ই ফেব্রুয়ারী ইনকিলাব ক্রাউন হান্টারে মদ রয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে সে একই দিনে উক্ত রিপোর্টের নিচেই তারা ক্রাউন ও হান্টারের বিশাল বিজ্ঞাপন ছেপেছে। উল্লেখ্য যেহেতু তারা রিপোর্ট করেছে ১১ই ফেব্রুয়ারী তার মানে তারও বেশ অনেকদিন আগে থেকেই তারা ক্রাউন ও হান্টারে যে মদ রয়েছে সেটা জেনেছে। কিন্তু তা জানা সত্ত্বেও তারা একই দিনে রিপোর্ট ও বিজ্ঞাপন দুটোই ছেপেছে। প্রথম পৃষ্ঠায় মেগা সাইজের মদের বিজ্ঞাপনের মোটা টাকার বিনিময়ে তাদের ঈমান বিক্রি করছে। আর মদের বিজ্ঞাপনের সে টাকা ইনকিলাবের মালিক-শ্রমিক সবারই পেটে গিয়েছে। ধিক তাদের এ প্রকাশ্য হারামিপনার প্রতি, এটাই কি তাদের ইসলাম প্রীতির নমুনা! এ যে জলজ্ব্যান্ত মুনাফিকী! মুখে হারাম ফতওয়া দিয়ে আবার হাতে পকেটে ঠিকই সে হারামের টাকা পুরছে। (নাঊযুবিল্লাহ) থেকে গেল একই প্রশ্ন? ফের প্রমাণিত হলো ইসলামী খিলাফতের দাবীদার হিসেবে তারা কত অনুপযুক্ত? কত অজ্ঞ? রয়ে গেল মদের অবাধ ব্যবহার যমুনা ডিস্টিলারী কোম্পানীর মদ লাইসেন্স দেয়া নীরবে হজম করা, বাজেটে মদের দাম কমানোয় নীরব ভূমিকা পালন করার পর একই যমুনা কোম্পানীর ক্রাউন বেভারেজ কোম্পানীর মদ বাজারজাত করণে ছুরতান বাধা প্রয়োগ নামধারী ইসলামী আন্দোলকারীদের শুধু লোক দেখানো তৎপরতা প্রমাণ করেনা। পাশাপাশি দেশের চলমান আইন-কানুন সম্পর্কে তারা যে কত অজ্ঞ, দেশে যে কত অনৈসলামীক আইন প্রচলন রয়েছে; সে সম্পর্কে যে তারা কত বেখবর সংশ্লিষ্ট ঘটনা তাই প্রমাণ করে। উল্লেখ্য, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২ দশমিক ৫ ভাগ মিশ্রিত অ্যালকোহলকে মদ বা বিয়ার ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও ২.৯ ভাগ অ্যালকোহলকেও মদ বা রিয়ার হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশে এতদিন যাবৎ ৫ ভাগ অ্যালকোহল নির্বিবাদে চলে আসছিল। ক্রাউন ও হান্টার সে সুযোগই নিয়েছিল। বলা চলে কেবলমাত্র স্বার্থবাদী কারণেই এবার তার বিরুদ্ধে হালকা সুর উঠল। কিন্তু এখনও থেকে গেল প্রশ্ন? কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে এক কাতরা অ্যালকোহলও যদি থাকে তবে সেটাকেও মদ ধরা হবে। (তথাকথিত খতীবও বলেছেন যে এক কাতরা থাকলেও তা মদ বলে গণ্য হবে।) সেখানে এত আন্দোলনের পরও এখনও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, তথাকথিত আমীর এবং ধর্মসচিব সম্পৃক্ত থাকার পরও দশমিক ৫ ভাগকে জায়িয করা হয়েছে। আর তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা সবাই চুপ মেরে রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে চিনিতে যেহেতু দশমিক ৫ ভাগ অ্যালকোহল থাকে সেহেতু এই ৫ ভাগ অ্যালকোহল জায়িয করা হয়েছে।
তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিক তথা মাওলানারা কি এতটুকুও অবগত নয় যে, প্রকৃতিগত ভাবে অনেক কিছুর মধ্যেই কোন মাপে অ্যালকোহল থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে সেই মাপকেই মাপকাঠি ধরে ঐ পরিমাণ তরল অ্যালকোহল বা খাছ অ্যালকোহল গ্রহণ জায়িয নেই। যেমন আঙ্গুরের মধ্যে অ্যালকোহল রয়েছে। আঙ্গুরের থেকেও অ্যালকোহল তৈরী হয় কিন্তু তাই বলে খাদ্যে উপাদানগত আঙ্গুরের যে পরিমাণ অ্যালকোহল রয়েছে তা আলাদাভাবে জায়িয হবে না। যেমন, মানুষ যে খাবার খায় তা পেটে গিয়ে মল-মূত্রে পরিণত হয়। অথচ এ মল-মূত্রের উৎস খাবারই। কিন্তু এখন যদি ১ ছটাক চালে যে মল-মুত্র তৈরী হয় আলাদাভাবে সে মল-মূত্রই কারো সামনে পেশ করা হয়, তবে সে কি তা খাবে? যদি তাই না হয় তদ্রুপ দশমিক ৫ ভাগ নয় দশমিক ১ ভাগ অ্যালকোহলও আলাদাভাবে জায়িয হতে পারেনা। কিন্তু তারপরও প্রসঙ্গত এখন আলিম নামধারীরা কোন আওয়াজ তুলছেনা।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এই দশমিক ৫ ভাগের সুযোগ নিয়ে যদি অপর কোন পানীয় বের হয় তবেও তারা এ রকমই চুপ থাকবেন যদি না তারা দেখেন যে কাঙ্খিত হাদিয়া-নজরানা তাদের কাছে পৌঁছেনি অথবা কোন প্রচারণা বা লেখালেখি সে পর্যায়ে পৌঁছেনি যে নিতান্ত লোক দেখানো বশতঃ হলেও তাদেরকে তখন গা করতে হয় (কিছু বলতে হয়) নতুবা ইসলামী রাজনীতিক হিসেবে তাদের গাঁ বাঁচানোটাই তখন দায় হয়ে পড়ে। সত্যিই হাজারো ধিক ও অব্যক্ত ঘৃণা এসব ধর্মব্যবসায়ী তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, খতীব, মুফাস্সিরে কুরআন ইত্যাদির প্রতি। মদ নিয়ে নীরব ভূমিকা, মদ নিয়ে সরব পদচারণা। উভয়টাই তাদের স্বার্থবাদী প্রবণতা।
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন