মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত সংখ্যায় (১২৬) প্রকাশিত “মশহুর সিলসিলার নাতির নিজের দেয়া দৃষ্টান্ত অনুযায়ী নিজেই কেনানের ক্বায়িম-মক্বাম সাব্যস্ত হলেন” শীর্ষক মতামতটি আমাদের দৃষ্টি কেড়েছে। লেখক মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ হেকমতের সাথে মশহুর সিলসিলার নাতি উল্লেখ করে তার লেখনী এগিয়ে নিলেও বিচ্যুত এই ব্যক্তিকে বুঝে নিতে আমাদের এতটুকু কষ্ট হয়নি। মূলতঃ এটা এখন আর ওলীউল্লাহ ছাহেবেরই ব্যক্তিগত উপলব্ধি বা লিখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং কথিত মশহুর সিলসিলার মুহব্বতকারী সবারই মর্মবেদনার বিষয়। বাবা দাদার নাম ফেরীকারী অথচ তাদের আদর্শ বর্জনকারী এই ব্যক্তি বলেছে “মোনাফিকরা ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। বিধর্মীরা আর মুসলমানের কত ক্ষতি করেছে তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে নামধারী মুনাফিক মুসলমান।” (সূত্র- দৈনিক ইনকিলাব/৫ই ফেব্রুয়ারী ৭ম পৃষ্ঠা) অথচ মাসিক আল বাইয়্যিনাত এর গত সংখ্যার লেখায় আমরা দেখেছি যে তিনি নিজের দেয়া দৃষ্টান্ত নিজেই কেনানের ক্বায়িম-মক্বাম তথা মুনাফিক সাব্যস্ত হয়েছেন। পত্রিকায় ঘোষণা দিচ্ছেন পীর প্রথা তিনি তুলে দিয়েছেন আবার মাহফিলের হ্যান্ডবিল পোষ্টারে ঠিকই পীর দাবী করছেন। কিন্তু হক্ব মত-পথ থেকে সরে গিয়ে তিনি এখন কার্যতঃ ওহাবী, খারিজী, বাতিল ফিরকার সাথে আঁতাত করছেন তা সিলসিলার সবাই অনুধাবন করতে পারছে। কিছুদিন আগে ওহাবীদের তরফ থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। এর আগে শিয়াদের কালচারাল সেন্টারে মহিলা সঙ্গীত শিল্পীদের সাথে তাকে দেখা যায়। এবং উভয়ক্ষেত্রের ছবিই পত্রিকায় পত্রস্থ হয়। এছাড়া এমনিতেই তিনি এখন পেপার-পত্রিকায় অহরহ ছবি উঠিয়ে থাকেন। অথচ ফুরফুরার প্রবর্তক মুজাদ্দিদে যামান, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ক্বাইয়্যূমুয্ যামান হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পূর্ণরূপে ছবি তোলার বিরোধী ছিলেন। তারা তাছাউফ পরিপন্থী ও বিরোধী ওহাবীদের সাথে সংশ্রব রাখতেন না; তাদেরকে ভালো চোখে দেখতেন না এবং তাদের কাছ থেকে পুরস্কার নেয়ার কথা চিন্তাও করতেন না। আবার ফুরফুরা সিলসিলার আক্বীদা অনুযায়ী তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী শিয়ারা কাফির। কিন্তু বর্তমান নাতি ছাহেব আজ দিব্যি ছবি তুলছেন, তিনি ওহাবীদের কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন, শিয়াদের সাথে দোস্তী করছেন। এর অর্থটা বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হবার নয় যে আক্বীদাগতভাবে এখন তিনি বাতিল সম্প্রদায়ের সাথে একাকার হয়ে গেছেন। অথচ আক্বীদা পোষণের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই এমনকি যারা বাতিল পন্থীদের শুধুমাত্র বাহ্যিক সম্পর্ক রাখবে তাদের সম্পর্কেও হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে যে, “যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল-মিশ রাখবে তার হাশর নাশর তার সাথেই হবে।” (মিশকাত শরীফ) সে প্রেক্ষিতে নাতি ছাহেবের হাশর নাশর যে ওহাবী, খারিজী, শিয়া, তথা বাতিলদের সাথে হবে তাতে সন্দেহ করা চলেনা। উল্লেখ্য, যেখানে বললে হালুয়া রুটির পরিমাণটা বেশী হবে সেখানে এখনও তিনি দাদা, বাবার নাম ফেরী করছেন। কিন্তু হাক্বীক্বতে তিনি এখন তার ছেলে আর জামাইর আমদানীকৃত ওহাবী মতবাদের ক্যানভাসার হয়েছেন। তাই তিনি আজ বাবা, দাদার আমল- মাজার শরীফ জেয়ারত, কদম বুছি, চোখে বুছা, মীলাদ ক্বিয়াম, ক্বলবী যিকির ইত্যাদি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আজ ওহাবীদের মত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উদযাপনকে বিদয়াত মনে করছেন, তাঁর সুন্নতের অনুসরণকে বেশী বাড়াবাড়ি বলেছেন, সুন্নত পালনকে মুনাফিকীর আলামত বলে গন্য করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) আজকে তার মাহফিলের পোষ্টারে হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ্র নাম দেখা যায় না। দেখা যায় সব ওহাবী, খারিজী, লা-মাযহাবী, লা-ক্বিয়ামী আক্বীদাভুক্ত তথাকথিত মাওলানাদের নাম। সম্প্রতি তিনি আহবান করেছেন যে বাম দলে তথা ১১ দলের মধ্যে যদি আলিম থাকে তবে যেন তার মাহফিলে ওয়াজ করে। এখানেও তার স্পষ্ট মুনাফিকী ধরা পরে। কারণ তিনি বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা প্রচারের দাবী করবেন আর প্রচার করবেন যে বাম দলের আদর্শে বিশ্বাসী হয়েও; কমুনিষ্ট তথা নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী হয়েও আলিম হওয়া যায় অথবা আলিম হয়েও বাম দলে থাকা যায়। মূলতঃ এটা যে স্পষ্ট ইসলাম বিরোধী কথা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মুখে বিশুদ্ধ ইসলামের কথা বললেও এর দ্বারা নাতি ছাহেব যে এখন কোন ইসলাম করছেন তা স্পষ্টতই ধরা পড়ে। উল্লেখ্য, নাতি ছাহেব মুনাফিকীর বিরুদ্ধে বললেও তারই প্রকাশ্য মুনাফিকীর সংখ্যা একটি দু’টি নয় বরং অসংখ্য অগণিত। সিলসিলার নামে মাহফিলের কথা বললেও সেখানে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে সিলসিলার মত ও পথের মোখালিফ খারিজী, ওহাবী, লা-মাযহাবীদের। এবং অতি সম্প্রতি আরো দেখা যাচ্ছে যে বিগত দ্বীনের সিলসিলার ক্বায়িম-মক্বাম মাহ্ফিলের পরিবর্তে এখন ইসলামী মহা সম্মেলন কথাটি বেশী করে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এটাও যে আরেকটা প্রকাশ্য মুনাফিকী তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সিলসিলার মুখালিফদেরকে আকর্ষণ করাতে ইসলামী মহা সম্মেলন আর সিলসিলার মুহব্বতকারীদের জন্য ‘ক্বায়িম-মক্বাম’ নাম ব্যবহার করার এক দ্বিমুখী চাতুরী কৌশল বটে। বলাবাহুল্য, তার এ দুমুখী তথা মুনাফিকী কৌশলের পেছনে একটাই উদ্দেশ্য। আর তা হলো দু’ দিক থেকেই ফায়দা লুটা, দু’ দিক থেকেই ভিক্ষা করা। বস্তুতঃ হক্ব মত পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে, বাবা দাদার পথ হারা হয়ে আজকে নাতি ছাহেব তার ছেলে ও জামাইর ফরমাবরদারে পরিগণিত হয়েছে। রূহানী পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে রূহানী শক্তিহীন হয়ে সে আজ নফসের গোলাম, দিনারের গোলাম, আর দিরহামের গোলামে পরিণত হয়েছে। সত্যিই তার জন্য বড় আফসুস!
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন