(৩৮তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া মুবারক পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সেলোয়ার পরিধান করা পবিত্র
সুন্নতে ছাহাবা মুবারক
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
لُبْسُ السَّرَابِيْلِ سُنَّةٌ وَهُوَ مِنْ اَسْتُرِ الثِّيَابِ لِلرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ كَذَا فِى الْغَرَائِبِ (فتوى عالمگيرى الجزء الرابع
অর্থ: গারায়িব নামক কিতাবে রয়েছে, সেলোয়ার পরিধান করা পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য পবিত্র সুন্নত। অর্থাৎ সুন্নতে ছাহাবা। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী চতুর্থ খন্ড)
কেননা বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মিনা বাজার থেকে একখানা সেলোয়ার ক্রয় করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পেশ করেন। তিনি তা গ্রহণ করেন ও পছন্দ করেন। তবে কখনো তিনি সেলোয়ার পরিধান করেননি। সবসময় ইযার বা লুঙ্গী মুবারক পরিধান করেছেন। তবে অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সেলোয়ার পরিধান করতেন। তাই সেলোয়ার পরিধান করা সুন্নতে ছাহাবা উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
চাদর পরিধান করা পবিত্র সুন্নত মুবারক
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিভিন্ন রংয়ের চাঁদর মুবারক পরিধান করেছেন। যেমন: কালো, সবুজ, সাদা, ঘিয়া, ধুসর, গন্ধম, খয়েরী, কখনো চিকন পাড় বিশিষ্ট, কখনো মোটা পাড় বিশিষ্ট ডোড়াকাটা নকশা খচিত চাদর মুবারক পরিধান করেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ الله تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ أَحَبُّ الثِّيَابِ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَّـلْبَسَهَا الْحِبَـرَةَ
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমা হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চাদরের মধ্যে হিবরা (ইয়ামান দেশের তৈরী বুটিদার নক্বশা খচিত) চাদর মুবারক পরিধান করা অধিক পছন্দ করতেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
হযরত ইমাম ওয়াক্বিদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে একটি বর্ণনায় রয়েছে, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাদর মুবারক উনার পরিমাপ ছিলেন, ছয় হাত লম্বা এবং সাড়ে তিন হাত প্রশস্ত। (ইকমালুল মু’লিমবি-ফাওয়য়িদি মুসলিম ৩/৩১৮, নাখবুল আফকার লি-তানক্বীহিল মাবানিল আখবার ফী শারহি মায়ানিল আছার ৫/২৯৩)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قال حَضْرَتْ اِبْنُ بَزِيْـرَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ : ذَكَرَ أَهْلُ الْاَثَارِ أَنَّ رِدَائَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ طُوْلُهٗ أَرْبَعَةَ أَذْرُعٍ وَشِبْرٍ فِيْ عَرْضِ ذِرَاعَيْنِ وَشِبْرٍ. كَانَ يَلْبَسُهُمَا فِي الْجُمُعَةِ وَالْعِيْدَيْنِ
অর্থ: হযরত ইমাম ইবনে বাযীরাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আহলে আছারগণ উনারা উল্লেখ করেছেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাদর মুবারক উনার পরিমাপ ছিলেন, সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রশস্ত। তিনি উক্ত চাদর মুবারক পবিত্র জুমুয়া’ ও পবিত্র ঈদাইন উনার ছলাতে পরিধান করতেন। (আত-তাওদ্বীহু লি শরহিল জামিয়িছ ছহীহ ৮/২৩৯, নাখবুল আফকার লি-তানক্বীহিল মাবানিল আখবার ফী শারহি মায়ানিল আছার ৫/২৯৩)
অর্থাৎ : ছোট পবিত্র সুন্নতী চাদর মুবারক উনার পরিমাপ সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রশস্ত। আর বড় চাদর মুবারক উনার পরিমাপ ছয় হাত লম্বা এবং সাড়ে তিন হাত প্রশস্ত।
মুজা পরিধান করা পবিত্র সুন্নত মুবারক
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুফফুন বা পবিত্র মুজা মুবারক ছিলেন গাঢ় খয়েরী রঙ্গের চামড়ার। যা ছিলেন পশমবিহীন ও কারুকার্জ বিহীন। তা ছিলেন পায়ের তলা হতে উপরের দিকে প্রায় ছয় আঙ্গুল প্রলম্বিত। সেটার কোন পার্শ্বে কোন ফাড়া বা ফাঁকা ছিলো না।
না’লাইন বা পাদুকা পরিধান করা
পবিত্র সুন্নত
আড়াআড়ি দুই ফিতাযুক্ত চামড়ার তৈরী না’লাইন মুবারক পরিধান করা পবিত্র সুন্নত মুবারক। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَت اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰى عَنْه أَنَّهٗ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـلْبَسُ النِّعَالَ الَّتِيْ لَيْسَ فِيْـهَا شَعْرٌ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পশমবিহীন চামড়ার তৈরী না’লাইন মুবারক পরিধান করতে দেখেছি। (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী শরীফ ৭/৩০৬, আহমদ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ نَـعْلَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وَسَلَّم كَانَ لَهَا قِبَالَانِ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র না’লাইন শরীফে দুইখানা ফিতা মুবারক ছিলেন। (বুখারী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে বাযযার, মুসনাদে আহমদ শরীফ)
মহিলাদের পবিত্র সুন্নতী পোশাক মুবারক
মহিলাদের জন্য ক্বমীছ পরিধান করা সুন্নত। মহিলাদের সুন্নতী ক্বমীছ বা জামাকে دِرْعٌ (দিরউন) বলা হয়ে থাকে। যেমন এই বিষয়ে বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
دِرْعُ الْمَرْأَةِ قَمِيْصُهَا
অর্থ: মহিলাদের ক্বমীছকে دِرْعٌ (দিরউন) বলা হয়। (ছহীহ মুসলিম শরীফ, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী- ৪/২১৪, নিহায়া- ২/১১৪, ইজলাউল হাক্বীক্বাতি ফী সীরাতি উম্মুল মুমিনীন হযরত সিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম পৃষ্ঠা-৫৮, আল-ফতহুর রব্বানী লি-তারতীবি মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল আশ-শাইবানী- ৭/১৭৬, আয-যাদুল মুইয়াস্সার ফী ইলমিত-তাফসীর- ১/৫০১, তাফসীরে কাশশাফ, তাফসীরে ত্ববারী)
دِرْعٌ (দিরউন) বা ক্বমীছ পরিধান করা মহিলাদের জন্য পবিত্র সুন্নত মুবারক
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
أَخْبَـرَنَا الْمُلَائِيُّ نا عَبْدُ الْوَاحِدِ أَخْبَـرَنِيْ أَبِيْ أَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ وَعِنْدَهَا جَارِيَةٌ لَهَا عَلَيْهَا دِرْعُ قُطْنٍ ثَمَنُ خَمْسَةِ دَرَاهِمَ فَـقَالَتْ لِيْ اُنْظُرْ جَارِيَتِيْ هٰذِهٖ وَأُنْظُرْ مَا عَلَيْـهَا فَإِنَّـهَا تُـزْهَى عَلٰى أَنْ تَـلْبَسَ هٰذَا الدِّرْعَ وَقَدْ كَانَ لِيْ دِرْعٌ مِّنْ ذٰلِكَ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا كَانَتِ امْرَأَةٌ بِالْمَدِيْـنَةِ تُـقَيِّنُ عَرُوْسًا إِلَّا أَرْسَلَتْ إِلَيَّ تَسْتَعِيْـرُهٗ
অর্থ: আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন মূলাইয়্যু রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদেরকে জানিয়েছেন আব্দুল ওয়াহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাকে জানিয়েছেন আমার পিতা, নিশ্চয়ই তিনি মহাসম্মানিতা মহাপবিত্রা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মুমিনীন আছ-ছালিছা ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে গমন করলেন, এমতাবস্থায় উনার নিকট একজন খাদিমা বসা ছিলেন, যার পরিধানে ছিল পাঁচ দিরহামের একটি সূতী কাপড়ের ক্বমীছ। তিনি আমাকে বললেন, এই খাদিমার দিকে লক্ষ্য করুন। এবং লক্ষ্য করুন তার শরীরে পরিহিত ক্বমীছের প্রতি। নিশ্চয়ই এটি পরিধান করায় উক্ত খাদিমার সৌন্দর্যতা-উজ্জলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারককালীন সময়ে এ ধরণের আমারও একটি ক্বমীছ ছিলেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার যে কোন বালিকার জন্য কোন বরের সাথে নিসবাত তথা বিবাহ নির্ধারিত হলে, উক্ত ক্বমীছ মুবারক ধার নেয়ার জন্য আমার কাছে পাঠানো হতো। (মুসনাদে ইসহাক্ব ইবনে রাহবিয়া ৩/৬৯৫, মুখতাছারু ছহীহিল ইমামিল বুখারী ২/১৯৯, বুখারী শরীফ)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন