কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
وَقَالَ بَـعْضُ الصَّالِـحِـيْـنَ كَانَ شَيْخِىْ لَهٗ عَادَةً كُلَّ عَامٍ يَـقْـرَاُ قِصَّةَ الْـمَوْلِدِ الشَّرِيْفِ وَيَـحْـتَـفِـلُ فِـيْـهِ اِحْـتِـفَالًا عَظِـيْمًا فَجَاءَتْ سَنَةُ اِحْدٰى وَسِتِّــيْـنَ وَثَـلَاثـِـمِائَةٍ وَّاَلْفٍ بَـلَغَ فِـيْـهَا شُـنْۢـبُـلُ الْـحِـنْطَةِ سَبْعِـيْـنَ لِـيْـرَةً سُوْرِيَّـةً وَحَصَلَ فِـيْـهَا كَـرْبٌ عَظِـيْـمٌ لِـبَـعْضِ النَّاسِ فَـلَمَّا جَاءَ وَقْتُ اِقَامَةِ حَفْلَةِ الْـمَوْلِدِ الشَّرِيْفِ صَارَ شَيْخِـىْ يَسْتَعِدُّ لَـهَا فَـقَالَ بَـعْضُ النَّاسِ لَـيْتَ الشَّـيْخَ هٰذِهِ الدَّرَاهِمَ الَّذِىْ يُرِيْدُ اَنْ يُّــنْفِقَهَا عَلـٰى قِرَاءَةِ الْـمَوْلِدِ الشَّرِيْفِ يُـنْفِقُهَا عَلَى الْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِـيْـنَ كَانَ اَفْضَلُ فَـبَـلَغَ شَيْخِىْ هٰذِهِ الْـمَقَالَةُ وَكُـنْتُ فِـىْ حَالَةٍ لَا يَـغِـيْبُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَـيْـنِـىْ طَـرْفَةَ عَـيْـنٍ فَـقَالَ شَيْخِىْ اُرِيْـدُ اَنْ اَسْاَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذٰلِكَ فَـقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْاِنْـفَاقُ عَلـٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِكَ اَفْضَلُ اَوْ عَلَى الْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِـيْـنَ فَـقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنْـفَاقُ كُـلِّ دِرْهَمٍ عَلـٰى قِرَاءَةِ الْـمَوْلِدِ اَفْضَلُ مِنْ اِنْـفَاقِ مِائَةِ دِرْهَمٍ عَلَى الْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِـيْـنِ
অর্থ: “একজন বুযূর্গ ব্যক্তি তিনি বলেন, আমার সম্মানিত শায়খ উনার আদত বা অভ্যাস মুবারক ছিলেন, তিনি প্রতি বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন অর্থাৎ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়ার শরীফ) উনার দিন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনা মুবারক পাঠ করতেন এবং সেদিন তিনি (প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করে) অনেক বিশাল বড় মাহফিল মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! যখন ১৩৬১ হিজরী শরীফ আসলো, তখন গমের দাম এমন হয় যে, এক শুম্বুল গমের মূল্য সুরিয়ান ৭০ লীরায় পৌঁছে অর্থাৎ তখন কঠিন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ঐ বছর কিছু মানুষ কঠিন দুঃখ-কষ্টে আপতিত হয়। তারপর যখন মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক পালনের সময় আসলেন, তখন আমার সম্মানিত শায়খ তিনি মাহফিল মুবারক উনার ইন্তেজাম মুবারক করার জন্য উদ্যত হন। তখন (বাতিল ফিরক্বা, বদ মাযহাব ও বদ আক্বীদার) কিছু লোক বললো, ‘হায়! সম্মানিত শায়খ তিনি যেই দিরহামগুলি মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের জন্য খরচ করার ইচ্ছা করেছেন, সেগুলো যদি ফকীর-ফুকারা, গরীব-মিসকীন, অসহায়দের জন্য খরচ করতেন, তাহলে কতই না উত্তম হতো! না‘ঊযুবিল্লাহ! এই কথাগুলো সম্মানিত শায়খ উনার নিকট পৌঁছলো। (বর্ণনাকারী বলেন, তখন) আমি এমন একটা অবস্থায় ছিলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চোখের পলকের তরেও আমার দৃষ্টির বাইরে থাকতেন না অর্থাৎ আমি সবসময় উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক-এ থাকতাম। সুবহানাল্লাহ! (আর আমার সম্মানিত শায়খ তিনি তো সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক-এ থাকতেনই, সেটা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ খরচ করার বিষয়ে বাতিল ফিরক্বা, বদ মাযহাব ও বদ আক্বীদার লোকদের এই সমস্ত এলোমেলো কথা শুনে,) আমার সম্মানিত শায়খ তিনি বললেন, ‘আমি ঐ বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি। তারপর তিনি বললেন,
يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْاِنْـفَاقُ عَلـٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِكَ اَفْضَلُ اَوْ عَلَى الْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِـيْـنَ فَـقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنْـفَاقُ كُـلِّ دِرْهَمٍ عَلـٰى قِرَاءَةِ الْـمَوْلِدِ اَفْضَلُ مِنْ اِنْـفَاقِ مِائَةِ دِرْهَمٍ عَلَى الْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِـيْـنِ
‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার মাওলিদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার জন্য খরচ করা উত্তম, নাকি ফকীর-ফুকারা, গরীব-মিসকীন, অসহায়দের জন্য খরচ করা উত্তম?’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘মাওলিদ শরীফ পাঠের জন্য অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার সম্মানার্থে খরচ করা প্রত্যেক দিরহামের ফযীলত, ফকীর-ফুকারা, গরীব-মিসকীন, অসহায়দের জন্য ১০০ দিরহাম খরচ করার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ অর্থাৎ কোটি কোটি গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ, শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (আশ্ শারফুল আমজাদ ২৫৫ নং পৃষ্ঠা)
সেটাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْـلَةُ اثْـنَـىْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِـيْـهَا طَـعَامًا كُـنْتُ لَهٗ شَفِيْـعًا يَّـوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْـفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ اِكْـرَامًا فَكَاَنَّـمَا اَنْـفَقَ جَـبَـلًا مِّنْ ذَهَبٍ اَحْـمَرَ فِـى الْـيَـتَـامٰى فِـىْ سَبِـيْـلِ اللهِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে, মেহমানদারী করার মাধ্যমে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারক সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ) রাত্র মুবারক (এবং দিবস মুবারক) উনাকে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন অর্থাৎ দায়িমীভাবে সবসময় উনার জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শাফা‘আত মুবারক করবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সম্মানার্থে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে অত্যন্ত মুহব্বতে আদবের সাথে এক দিরহাম (চার আনা রূপা অথবা সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ) খরচ করবেন, ঐ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ইয়াতীমদেরকে এক পাহাড় পরিমাণ লাল স্বর্ণ দান করার ফযীলত মুবারক লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবু ফাদ্বায়িলে মাওলিদিন্নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ নং পৃষ্ঠা, রিসালাতু মাওলিদিন্নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ নং পৃষ্ঠা)
এখানে এক পাহাড় লাল স্বর্ণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের পরিমাণটা বলা হয়নি যে, এটা কত বড়। খুলূছিয়াত অনুযায়ী এটা আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত হতে পারে, ১ দুনিয়া, ১০ দুনিয়া, ২০ দুনিয়া, হাজার দুনিয়ার সমান হতে পারে অথবা সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ যে পাহাড় রয়েছে তার সমপরিমাণ হতে পারে অথবা তার চেয়েও কোটি কোটি গুণ বড় হতে পারে। এটা মানুষের চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে খরচ করার কতো বেমেছাল ফযীলত মুবারক সেটা সমস্ত সৃষ্টির চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে বেশি বেশি খরচ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আবূ আহমাদ ছিদ্দীক্বাহ্। আমীন।