(৩৮তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া মুবারক পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পবিত্র ছলাত আদায় করার সুন্নতী
পোশাক সমূহ
কিতাবে রয়েছে-
اِخْتَـلَفَ الْعُلمَاءُ فِىْ عَدَدٍ مَا تُصَلِّىْ فِيْهِ الْمَرْأَةُ مِنَ الثِّيَابِ فَـقَالَتْ طَائِفَةٌ تُصَلِّىْ فِى دِرْعٍ وَخِمَارٍ وَرُوِىَ ذٰلِكَ عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَشَرَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ أَزْوَاجِ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرُوِىَ أَيْضًا ذٰلِكَ عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰى عَنْه وَهُوَ قَـوْلُ مَالِكٍ وَاللَّيْثِ وَالْأَوْزَاعِى وَالثَّـوْرِىْ وَأَبِىْ حَنِيْـفَةَ وَالشَّافِعِى رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ………وَقَالَ أَبُـوْ حَنِيْـفَةَ وَالثَّـوْرِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمَا: قَدَمُ الْمَرْأَةِ لَيْسَتْ بِعَوْرَةٍ فَإِنْ صَلَّتْ وَقَدَمُ هَا مَكْشُوْفَةُ لَـمْ تُـعَدْ
অর্থ: মহিলাদের (কমপক্ষে) কয়টি কাপড় পরিধান করে পবিত্র ছলাত আদায় করতে হবে, এ বিষয়ে উলামায়ে কিরামগণ উনাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে- অতপর একদল বলেন, পবিত্র ছলাত আদায় করতে ক্বমীছ এবং উড়না পরিধান করতে হবে। উল্লেখিত মতটি যাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে উনারা হলেন- হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস-সাদিসাহ আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছালিছা আশার আলাইহাস সালাম। এবং উক্ত মতটি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু এবং হযরত ইমাম মালিক, হযরত সুফিয়ান ছাওরী, হযরত আওজায়ী, হযরত ইমাম আল-লাইছী, হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা এবং হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও বর্ণিত আছে। ……. (তাছাড়াও) হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা এবং হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে উনারা বলেন, পবিত্র ছলাত আদায়ের ক্ষেত্রে মহিলাদের কদম তথা পায়ের পাতা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। পবিত্র ছলাত আদায় করা অবস্থায় যদি পায়ের পাতা খোলা থাকে, তবে পবিত্র ছলাত পুনরায় আদায় করতে হবেনা। (শরহু ছহীহিল বুখারী লি-ইবনে বাত্বাল-২/৩৫)
মহিলাদের খাস সুন্নতী পোশাক মুবারক উনার ধরণ ও পরিমাপ
(১) স্যালোয়ার : কল্লিদার যা পা-জামার মতো ঢোলা নয়। বরং বর্ডার যুক্ত চিপা যা চোস্ত হবেনা।
(২) ক্বামীছ: ঢোলা জামা (কোর্তা) পুরুষের জামা (কোর্তা)রই অনুরূপ।
পার্থক্য হলো: মহিলাদের গলাবন্ধনীর গুটলী প্রয়োজনে সামনে বা পিছনে রাখতে পারে, তবে মহিলাদের গলাবন্ধনীর গুটলী ডান কাঁধ বা বাম কাঁধের উপর রাখাই সুন্নত। আর ক্বামীছ পূর্ণ হাতা বিশিষ্ট নিছফে সাক্ব হতে হবে। নিছফে সাক্বের নীচে ক্বামীছ ঝুলানো জায়েজ, তবে তাদের ইযার, দোপাট্টা বা স্যালোয়ার পায়ের পাতা সহ সম্পূর্ণ অংগই ঢেকে রাখতে হবে।
(৩) উড়না: যার পরিমাপ হচ্ছে দুই বা আড়াই হাত চওড়া। চার বা সাড়ে চার হাত লম্বা।
বোরকা, হাত মোজা, পা-মোজা
পরিধান করা ফরয
মহিলারা যখন ঘরের প্রকোষ্টে অবস্থান করবে তখন উনারা উড়না, ঢোলা জামা (কোর্তা), স্যালোয়ার এই পোশাক গুলি পরিধান করবেন। যখন ঘর থেকে প্রয়োজনে বের হওয়ার ইচ্ছা করে, তখন অবশ্যই বোরকা, হাত মোজা, পা-মোজা পরিধান করতে হবে। নচেৎ মোটেও পর্দা আদায় হবেনা।
যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا أَيُّـهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَـنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْـمُؤْمِنيْنَ يُدنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ أَدْنٰى أَنْ يُّـعْرَفْنَ فَلَا يُـؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
অর্থ: হে মহাসম্মানীত মহাপবিত্র হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনি মহাসম্মানিতা মহাপবিত্রা উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মহাসম্মানিতা মহাপবিত্রা আপনার বানাত আলাইহিন্নাস সালাম এবং মু’মিনগণ উনাদের আহলিয়াগণকে বলে দিন, উনারা যেন উনাদের চাদরের কিয়দংশ মাথার উপর থেকে টেনে নিয়ে চেহারা সহ সমস্ত শরীর পর্দায় আবৃত করে নেন। এর দ্বারা চিনা যাবে যে, উনারা স¦াধীনা মু’মিনা নারী, ফলে উনাদেরকে উত্যেক্ত করা হবেনা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৯)
তাফসীরে আহকামুল ক্বুরআন ২য় খন্ডে উল্লেখিত আয়াত শরীফ উনার جِلْبَابٌ শব্দ মুবারক উনার অর্থ প্রসংগে বলা হয়েছে
وَالْـخُلَاصَةُ فَاِنَّ الْجِلْبَابَ هُوَ اللَّذِىْ يَسْتُـرُ جَمِيْعَ بَدْنَ الْمَرْأَةِ وَهُوَ يَشْبَهُ الْمُلَاءَةَ اَىِ الْمُلْحِفَةَ الْمَعْرُوْفُ فِى زَمَانِنَا
মোট কথা: জিলবাব হচ্ছে এমন পোশাক যার দ্বারা মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত হয়ে যায়। যা আমাদের যামানায় বোরকা হিসেবে পরিচিত।
عَنْ حَضْرَت عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِى اللّٰهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَاٍذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَـهَا الشَّيْطَانُ وَاَقْـرَبُ مَا تَكُوْنُ رَحْمَةُ رَبِّهَا فِىْ قَـعْرِ بَـيْتِهَا
অর্থ: ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর পর্দায় আবৃত থাকবে। কেননা, উনারা যখন ঘর থেকে বের হন, তখন শয়তান উনাদের দ্বারা পাপ কার্য সংঘটিত করার জন্য উকি ঝুকি মারতে থাকে। এবং মহিলাগণ উনারা যতক্ষণ ঘরের প্রকোষ্টে পর্দাসহ অবস্থান করেন, ততক্ষণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক উনার অধিক নিকটবর্তী থাকেন। (তিরমিযী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَقَـرْنَ فِيْ بُـيُـوْتِكُنَّ وَلَا تَـبَـرَّجْنَ تَـبَـرُّجَ الْـجَاهِلِيَّةِ الْأُوْلٰى
অর্থ: মহিলারা যেন তাদের ঘরের মধ্যেই অবস্থান করে। ঘর থেকে একান্ত প্রয়োজনে বের হলে জাহেলী যুগের মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তারা যেন ঘর থেকে বের না হয়। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৩)
সে জন্যে মহিলাগণ উনারা ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই বোরকা পরিধান করে বের হতে হবে। নচেৎ মোটেও পর্দা আদায় হবেনা। বোরকার মধ্যে কালো ও ঢোলা বোরকা পরিধান করাটাই উত্তম যা সৌন্দর্য ও চেহারাকে উত্তমরূপে ঢেকে রাখে। বোরকার নামে যে খাট ও চিপা বোরকা বাজারে প্রচলিত রয়েছে, তা পরিধান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়েজ। কেননা, পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো পর পুরুষ থেকে মহিলাদের সৌন্দর্য ও শরীরের যথাসম্ভব অনুভূতিকে গোপন রাখা। আর কথিত বাজারের বোরকার বহিরাংশে বিভিন্ন ধরণের আকর্ষনীয় কাজ করা থাকে। যা পর পুরুষের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে থাকে। সেজন্যে এই ধরণের বোরকা পরিধান করা সম্পূর্ণ হারাম।
হাত মোজা পা-মোজা ও নিক্বাব
পরিধান করা ফরয
বুখারী শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَـنْـتَقِبُ الْمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ وَلَا تَـلْبَسُ الْقُفَّازَيْنِ
অর্থ: মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন মুহরিম মহিলা যেন ইহরাম অবস্থায় নেকাব পরিধান না করে এবং হাত মোজা পরিধান না করে। অর্থাৎ ইহরাম ছাড়া অন্য সময় যখন বের হবে তখন অবশ্যই নেকাব ও হাত মোজা ও পা মোজা পরিধান করতে হবে, যা ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَت عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِى اللّٰهُ تَـعَالى عَنْهُ قَالَ مَا صَلَّتِ امْرَأَةٌ فِي مَوْضِعٍ خَيْـرٌ لَهَا مِنْ قَـعْرِ بَـيْتِهَا، إِلَّا أَنْ يَّكُوْنَ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ أَوْ مَسْجِدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا امْرَأَةً تَخْرُجُ فِي مَنْـقَلَيْـهَا يَعْنِي خُفَّيْـهَا
অর্থ: ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, পবিত্র ছলাত আদায়ের ক্ষেত্রে মহিলার জন্য নিজ গৃহের অভ্যন্তরের চেয়ে উত্তম কোনো স্থান আর কোথাও নেই। তবে যদি কোনো মহিলা তার চামড়ার মোজাদ্বয় পরিধান করে মসজিদুল হারাম বা মসজিদে নববীতে পবিত্র ছলাত আদায় করার জন্য বের হয়, তবে তা ভিন্ন কথা। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ-২/৩৪, ত্ববারানী ফীল কাবীর)
এ বর্ণনাটি মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার পূর্বের। এ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলারা যখন বাইরে বের হবে তখন পায়ে মোজা পরিধান করে বের হবে। এটা ফরয।
লিবাসুত তাক্বওয়া বা খোদাভীতি উনার পোশাক মুবারক
যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَلَوْ أَنَّـهُمْ اٰمَنُـوْا وَاتَّـقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ خَيْـرٌ لَّوْ كَانُـوْا يَعْلَمُوْنَ
অর্থ: যদি তারা পবিত্র ঈমান আনয়ন করতো এবং তাক্বওয়া হাসিল করতো, তাহলে যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে উনার পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করাতেন। যদি তারা এ সম্পর্কে জানত। (পবিত্র সূরাতুল বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১০৩)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَت الْحسن رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ عَبْدٍ عَمَل خَيْـرًا أَوْ شَرًا إِلَّا كسى رِدَاء عمله حَتَّى يعرفوه وتصديق ذٰلِكَ فِي كتاب الله ولباس التَّـقْوَى ذٰلِكَ خير
অর্থ: হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক বান্দাই সে নেক কাজ করুক বা বদ কাজ করুক তাকে তার আমল অনুযায়ী একটি চাদর পরিধান করানো হয়। এমনকি সে লোকজনের কাছে ঐ নামেই পরিচিত হয়। তার প্রমাণ হলো যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত তাক্বওয়া বা পরহেযগারী উনার পোশাকই সর্বোত্তম পোশাক মুবারক। (আদ দুররুল মানছূর ফী তাফসীরিল মা’ছূর ৩/৪৩৫)
عَنْ حَضْرَتِ الْحسن رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَأَيْت حَضْرَتْ عُثْمَان عَلَيْه السَّلَام على الْمِنْـبَر قَالَ.يَا أَيهَا النَّاس اتَّقوا الله فِي هَذِه السرائر فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ وَالَّذِي نفس مولنا مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ مَا عمل أحد عملا قطّ سرا إِلَّا ألبسهُ الله رِدَاءَهُ عَلَانيَة إِن خيرا فَخير وَإِن شرا فشر ثمَّ تَلا هَذِه الْايَة {وَرِيْشًا} وَلم يقل وريشًا {وَلِبَاسُ التَّـقْوٰى ذٰلِكَ خَيْر}
অর্থ: হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে উনার মিম্বর শরীফে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। তিনি বলেন, হে মানব সকল গোপন আমলগুলির ব্যাপারে যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। কেননা, নিশ্চয়ই আমি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি যে, সেই মহান সত্ত্বা মুবারক উনার কসম, যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার নূরুল আমর (প্রাণ) মুবারক। যখন ই কোন বান্দা সে গোপনে কোন আমল করে, তখন যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে গোপনীয় একটি চাদর পরিধান করিয়ে দেন। যদি উক্ত আমলটি নেক আমল হয়, তাহলে তো সর্বোত্তম আমল হবে। আর যদি বদ আমল হয়, তখন উক্ত আমলটি নিকৃষ্ট আমল হবে। অতপর তিনি অত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করেন,
يَا بَنِيْ اٰدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّـوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا ۖوَلِبَاسُ التَّـقْوٰى ذٰلِكَ خَيْـرٌ ۚ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
কিন্তু তিনি পবিত্র আয়াত শরীফে উল্লেখিত وَرِيْشًا শব্দ মুবারক উল্লেখ করেন নাই। (কানযুল উম্মাল ৩/৬৭৪, জামউল জাওয়ামি’ ১৭/৩২, আদ দুররুল মানছূর ফী তাফসীরিল মা’ছূর ৩/৪৩৫)
وَالتَّـقْوٰى هُوَ لِبَاسُ الْقَلْبِ فَلِبَاسُ الْقَلْبِ مِنَ التَّـقَوٰى هو الصدق فى طلب المولى يوارى سوآة طبع الدنيا وما فيها
অর্থ: লিবাসুত তাক্বওয়া এটা হলো লিবাসুল ক্বলব বা অন্তরের পোশাক আর লিবাসুল ক্বলব বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক উনাকে সত্যিকারেই হাসিল করার কোশেশ করা, যার মাধ্যমে দুনিয়া এবং তার মধ্যে অবস্থিত সকল প্রকার বদ স্বভাব দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ হাক্বীক্বী ইছলাহ লাভ হয়। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৩/১৪৮)
لباس التقوى الذي هو لباس القلب والروح بالإيمان والإخلاص والإنابة والتحلي بكل خلق جميل والتخلي عن كل خلق رذيل
অর্থ: লিবাসুত তাক্বওয়া হলো ক্বলব ও রুহের পোশাক মুবারক। যা পবিত্র ঈমান, পবিত্র ইখলাছ, ইনাবাতসহ সকল সুন্দর চরিত্র মুবারক তথা পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার দ্বারা স্বীয় আমল- আখলাক্বকে সজ্জিত করা। এবং সকল প্রকার বদস্বভাবগুলি থেকে নিজেকে পবিত্র করাই হলো পবিত্র লিবাসুত তাক্বওয়া। (তাইসীরুল লতীফিল মান্নান ফী খুলাছাতে তাফসীরুল ক্বুরআন ১/১৭৮)
মোট কথা হলো: অন্তরের হাক্বীক্বী পরিশুদ্ধতা এবং আমলে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার ইত্তিবা উনার মাধ্যমে যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী রিদ্বামন্দী-সন্তুষ্টি হাসিল করাই হলো লিবাসুত তাক্বওয়া বা সম্মানিত খোদা ভীতি উনার প্রকৃত পোশাক মুবারক।
অসমাপ্ত-
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন