মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩৫)

সংখ্যা: ২৯৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

(৩৬তম ফতওয়া হিসেবে)

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খেদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কতিপয় সুওয়াল-জাওয়াব

(পূর্বপ্রকাশিতের পর)

সুওয়াল-৮ :

এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِـيْـهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِـيْـنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْـيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ

অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে বিরান করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে ফেলে বা বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীম করে না,) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছেন,

لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَـرَ فِـيْـهَا اسْـمُهٗ

অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বিরাণ করে, বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, তা’যীম তাকরীম করে না)। না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/১১৬)

‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছেন, وَمَنْ اَكْفَرُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে? অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ করে রাখে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গে বা ভাঙ্গার কোশেশ করে অর্থাৎ হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না।) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭ ইত্যাদি)

উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর ‘তাফসীরে আহমদী’ উনার ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেন,

اِنَّـهَا تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْمسَاجِدِ وَتَـخْرِيْـبَـهَا مَـمْنُـوْعٌ وَكَذَا الْمَنْعُ عَنِ الصَّلٰوةِ وَالْعِبَادَةِ وَاِنْ كَانَ مَـمْلُوْكًا لِلْمَانِعِ

অর্থ: “উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ধ্বংস করা বা বিরান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত নামায আদায় এবং ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও ঐ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নিষেধকারীর অধীনে থাকে।” (তাফসীরে আহমদী ১৬ নং পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সংস্কার, সৌন্দয্যর্বর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতলকরণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পুনর্নির্মাণ করা আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা কখনোই এক নয়। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ বা তৈরী করা আর বিরান বা ধ্বংস করা দুটো কখনোই এক হতে পারেনা। যারা এটাকে এক বলে তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল অর্থাৎ চরম পর্যায়ের মূর্খ। তাদের বক্তব্য সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

দলীলসমূহ: ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, ২. তিরমিযী শরীফ, ৩. আবূ দাঊদ শরীফ, ৪. ইবনে মাজাহ্ শরীফ, ৫. মুসনাদে আহমদ, ৬. মাজমাউয যাওয়াইদ, ৭. জামি‘উছ ছগীর, ৮. ফাতহুল কাবীর, ৯. জামি‘উল আহাদীছ, ১০. কাশফুল খফা, ১১. ফাদ্বাইলুছ ছাহাবা, ১২. আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ্, ১৩. কানযুল উম্মাল, ১৪. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ১৫. মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্, ১৬. শু‘আবুল ঈমান, ১৭. তাফসীরে ত্ববারী, ১৮. তাফসীরে খাযিন, ১৯. তাফসীরে বাগবী, ২০. তাফসীরে মাযহারী, ২১. তাফসীরে আহমদী, ২২. তাফসীরে রূহুল বয়ান, ২৩. তাফসীরে সমারকন্দী, ২৪. তাফসীরে হাদাইক্বির রাওহি ওয়ার রাইহান, ২৫. ফাতহুল বায়ান ফী মাক্বাছিদিল কুরআন, ২৬. তাফসীরে কবীর, ২৭. তাফসীরে জালালাইন, ২৮. তাফসীরে দুররে মানছূর, ২৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ৩০. তাফসীরে নাসাফী, ৩১. তাফসীরে আবিস সা‘ঊদ, ৩২. তাফসীরে ইবনে মুনযির, ৩৩. ত্ববারনী ইত্যাদি।

সুওয়াল-৯

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি রাস্তা-ঘাট, উড়াল সেতু, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা যে কোনো সরকারী-বেসরকারী প্রয়োজনে বিক্রি করা জায়িয আছে কি? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব জানতে চাই।

জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বা জায়গা যত জরুরী প্রয়োজনেই হোক না কেন কোনো অবস্থাতেই তা বিক্রয় করা জায়িয নেই; বরং সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম। আর  জায়িয বলা বা মনে করা কাট্টা কুফরী। কারণ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার একমাত্র মালিক হচ্ছেন খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।

এ প্রসঙ্গে যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ

অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মসজিদসমূহের মালিক।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلْـمَسْجِدُ بَـيْتُ اللهِ

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!

‘দুরারুল হুক্কাম’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছেন,

قَالَ حَضْرَتْ اَبُـوْ يُـوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ مَسْجِدٌ اَبَدًا اِلـٰى قِـيَامِ السَّاعَةِ لَا يَـعُوْدُ مِيْـرَاثًا وَلَا يَـجُوْزُ نَـقْلُهٗ وَنَـقْلُ مَالِهٖ اِلـٰى مَسْجِدٍ اٰخَرَ سَوَاءٌ كَانُـوْا يُصَلُّوْنَ فِـيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَـتْـوٰى

অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইঊসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবেই থাকবেন, কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবে না। আর উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা এবং উনার সম্পত্তি অন্য কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ স্থানান্তর করাও জায়িয হবে না, লোকজন সেখানে নামায পড়ুক অথবা না পড়–ক। এটাই হচ্ছে ফতওয়া।” সুবহানাল্লাহ! (দুরারুল হুক্কাম ২/১৩৫)

বিশ্বখ্যাত ফিক্বহের কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছেন,

وَاِذَا بَـنٰـى مَسْجِدًا لَـمْ يَـزُلْ مِلْكُهٗ عَنْهُ حَتّٰـى يَـفْرِزَهٗ عَنْ مِلْكِهٖ بِطَرِيْقِهٖ وَيَـاْذَنَ لِلنَّاسِ بِالصَّلٰوةِ فِـيْهِ فَاِذَا صَلّٰى فِـيْهِ وَاحِدٌ زَالَ عِنْدَ حَضْرَتْ اَبِـىْ حَنِـيْـفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مِلْكِهٖ

অর্থ: “যদি কেউ কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মালিকানা দূরিভূত হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত সে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তাসহ তার মালিকানা থেকে পৃথক করে লোকদেরকে উনার মধ্যে ছলাত বা নামায পড়ার অনুমতি না দিবে। অতঃপর যখন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ একজন মুছল্লীও ছলাত বা নামায পড়বে, তখন ইমামে আযম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তার মালিকানা দূর হয়ে যাবে।” (হেদায়াহ্ ৩/২০, বিদায়াহ্ ১/১২৯, ইনায়াহ্ ৬/২৩৩, বিনায়াহ্ ৭/৪৫৩, লিসানুল হুক্কাম ১/২৯৫, আল লুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৮৬ ইত্যাদি)

আরো বর্ণিত রয়েছেন,

وَقَالَ حَضْرَتْ اَبُـوْ يُـوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَـزُوْلُ مِلْكُهٗ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا

অর্থ: “আর হযরত ইমাম আবূ ইঊসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তার এই কথার দ্বারা মালিকানা দূর হয়ে যাবে যে, আমি এটাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানিয়েছি।” (হেদায়াহ্ ৩/২০, বিদায়াহ্ ১/১২৯, ইনায়াহ্ ৬/২৩৩, তাবঈনুল হাক্বাইক্ব ৩/৩৩০, আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্ ১/৩৩৭, বিনায়াহ্ ৭/৪৫৪, লিসানুল হুক্কাম ১/২৯৫, আল বাহ্রুর রাইক্ব ৫/২৬৮ ইত্যাদি)

‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছেন,

اَمَّا حُكْمُهٗ فَعِنْدَهُـمَا زَوَالُ الْـعَـيْـنِ عَنْ مِلْكِهٖ اِلَـى اللهِ تَـعَالـٰى

অর্থ: “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের নিকট ওয়াক্ফের হুকুম হলো এই যে, ওয়াক্ফকৃত সম্পদের স্বত্ত্ব বা মালিকানা ওয়াক্ফকারীর অধিকারমুক্ত হয়ে তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী মালিকানায় চলে যায় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মালিক হয়ে যান।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ২/৩৫৮)

‘শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

اَلشَّخْصُ اِذَا اَوْقَفَ مَسْجِدًا خَرَجَ مِنْ مِلْكِهٖ حَتّٰـى صَاحِبُ الْاَرْضِ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يَّــتَصَرَّفَ فِـيْهِ لِاَنَّهٗ خَرَجَ مِنْ مِلْكِـيَّـتِهٖ لِلّٰهِ{وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ} فَالْـمَسْجِدُ اِذَا اَوْقَفَ خَرَجَ عَنْ مِلْكِـيَّةِ صَاحِبِهٖ

অর্থ: “কোনো ব্যক্তি যখন কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ওয়াক্বফ করে, তখন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি যে ব্যক্তি জায়গা দান করেছে, সে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করারও ক্ষমতা রাখে না। কেননা, উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তার মালিকানা থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানায় চলে গেছেন। (আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের মালিক হচ্ছেন স্বয়ং যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮) সুতরাং যখন কেউ কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ওয়াক্বফ করে, তখন তা তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়।”

অর্থাৎ কোনো জমি বা স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করে ছলাত বা নামায আদায় করলে বা ইযনে আম থাকলেই সে স্থানে ওয়াক্বফ কার্যকর হয়ে যাবে। আর ওয়াক্বফকৃত স্থানের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। উক্ত স্থান বিক্রি করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে অনুমতি নিতে হবে, যা কস্মিনকালেও সম্ভব না। সুতরাং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জায়গা বা জমি কখনোই বিক্রি করা যাবে না।

আর সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হচ্ছেন- অন্যের মালিকানাধীন জমি বা ঘর কারো জন্য বিক্রি করা, ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা জায়েয নেই। তাহলে কারো জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জমি বিক্রি করা কি করে জায়িয হতে পারে? কস্মিনকালেও জায়েয নেই; বরং সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম। আর  জায়েয বলা বা মনে করা কাট্টা কুফরী। না‘ঊযুবিল্লাহ!

কাজেই, উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জমি রাস্তা-ঘাট, উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, নদী সংরক্ষণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো জরুরী প্রয়োজনে বিক্রয় করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম। জায়েয বলা বা মনে কাট্টা কুফরী। কেননা, আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

اِسْتِحْلَالُ الْمَعْصِيَةِ كُفْرٌ

অর্থ: “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (শরহে আক্বাইদে নাসাফী)

দলীলসমূহ: ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, ২. শরহে আক্বাইদে নাসাফী, ৩. শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি, ৪. দুরারুল হুক্কাম, ৫. লিসানুল হুক্কাম, ৬. বিনায়াহ্, ৭. হেদায়াহ্, ৮. বিদায়াহ্, ৯. ইনায়াহ্, ১০. তাবঈনুল হাক্বাইক্ব, ১১. আল লুবাব ফী শরহিল কিতাব, ১২. আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্, ১৩. আল বাহ্রুর রাইক্ব ইত্যাদি।

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩৩তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ ও মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭৯

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-১২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৯)