(৩৪তম ফতওয়া হিসেবে)
“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ মাসে প্রকাশিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফসমূহ
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিশেষ তারীখ মুবারক= ৮খানা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ= ১১খানা
৬) খ. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২২শে জুমাদাল উখরা শরীফ:
আমীরুল মু’মিনীন, খ¦লীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক গ্রহণ দিবস মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর থেকে ২৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৬শে যিলহজ্জ শরীফ পর্যন্ত মোট ১০ বৎসর ৬ মাস ৩ দিন সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক পরিচালনা করেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْـنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَللّٰهُمَّ اَعِزَّ الْاِسْلَامَ بِـحَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ خَاصَّةً
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি খাছ করে ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে শক্তিশালী করুন।” সুবহানল্লাহ! (সুনানে ইবনে মাজাহ্ শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান, মুসতাদরকে হাকিম, তারীখুল খুলাফা ইত্যাদি)
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জীবন মুবারক উনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সম্মানিত দোআ মুবারক উনার প্রতিফলন মুবারক ঘটেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে বিশাল ভূখণ্ড বিজয় করেছিলেন। বলা হয় যে, উনার বিজীত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের পরিমাণ হলো- ২২,৫১,০৩০ বর্গমাইল। অর্থাৎ কেন্দ্রস্থল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ হতে উত্তরে ১৩৬০ মাইল, পূর্বদিকে ১০৮৭ মাইল, দক্ষিণে ৪৮৩ মাইল এবং পশ্চিমে জেদ্দা পর্যন্ত। এই বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে সিরিয়া, মিশর, ইরাক, জাযিরা, খোযিস্তান, ইরাক্বে আ’যম, আজারবাইজান, পারস্য, মাকরান, খোরাসান এবং বর্তমানে বেলুচিস্তানের কিছু অংশসহ মাকরান প্রদেশ প্রভৃতি তদানীন্তন কথিত সভ্য জগতের বিশিষ্ট এলাকাগুলি এর অন্তভুর্ক্ত ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে শহর, উপশহর, শহরতলি ও গঞ্জ-বন্দর মিলে ১,০৩৬টি এলাকা বিজিত হয়েছে। সে সব এলাকায় ৪ হাজার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তৈরি করা হয়েছে ও ৪ হাজার গির্জা বিরান হয়েছে। উক্ত ৪ হাজার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদের মধ্যে ৯০০ জামে মসজিদ রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইযালাতুল খফা)
মূলত, উনার বিজিত এলাকা এর চাইতেও আরো অনেক বেশি ছিলো। সবকিছুর বর্ণনা কিতাবে সরাসরি স্পষ্টভাবে আসেনি।
উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে বেমেছাল সম্মানিত ইনসাফ মুবারক উনার কতিপয় দৃষ্টান্ত মুবারক
১ম দৃষ্টান্ত:
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হওয়ার অর্থই হলো পৃথিবীটা জান্নাতে পরিণত হয়ে যাওয়া। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি জগতবাসী হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করেছে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে। সুবহানাল্লাহ! খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “আমার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে সুদূর ফুরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তাহলে এজন্য আমি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামকে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জবাবদিহি করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছেন,
لَوْ مَاتَتْ سَخْلَةٌ عَلٰى شَاطِئِ الْفُرَاتِ ضَيَاعًا لَـخَشِيْتُ اَنْ يَّسْاَلَنِـىَ اللهُ عَنْـهَا
অর্থ: “সুদূর ফুরাতের তীরে যদি একটি মেষশাবকও অবহেলায়, অযত্নে বা না খেয়ে মারা যায়, তাহলে আমি ভয় করি যে, অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী, আনসাবুল আশরাফ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ্ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ফুরাতের তীর অনেক দূরে অবস্থিত। এখানে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, সুদূর ফুরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তাহলে এজন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জবাবদিহি করতে হবে। এর মানে বুঝা গেলো যে, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে মানুষ এবং জিন তো পূর্ণ নিরাপত্তা, পূর্ণ শান্তি, পূর্ণ ইতমিনান পেয়েছেই; শুধু তাই নয়, এমনকি পশু-পাখীরাও পেয়েছে পূর্ণ নিরাপত্তা, পূর্ণ শান্তি, পূর্ণ ইতমিনান। উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে মানুষ তো দূরের কথা কোনো পশু-পাখিও না খেয়ে মারা যায়নি। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে মানুষ কতটুকু সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, ইতমিনান ও সম্মানিত ইনসাফ উনার মধ্যে ছিলেন, তা এখান থেকেই অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। সুবহানাল্লাহ!
এর মানে বুঝা গেলো যে, উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে মানুষ এবং জিন তো পূর্ণ নিরাপত্তা, পূর্ণ শান্তি, পূর্ণ ইতমিনান পেয়েছিলোই; শুধু তাই নয়, এমনকি পশু-পাখীরাও পেয়েছে পূর্ণ নিরাপত্তা, পূর্ণ শান্তি, পূর্ণ ইতমিনান। উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে মানুষ তো দূরের কথা কোনো পশু-পাখিও না খেয়ে মারা যায়নি। সুবহানাল্লাহ!
এর নামই হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক। সুতরাং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক কায়িম হওয়ার অর্থই হলো পৃথিবীটা জান্নাতে পরিণত হয়ে যাওয়া। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদ অর্থাৎ গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মাওবাদ, লেলিনবাদ ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদ-এর পরিপূর্ণ বিপরীত।
তাই, সমস্ত মুসলমান উনাদের জন্য ফরযে আইন হচ্ছেন মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদ অর্থাৎ গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মাওবাদ, লেলিনবাদ ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদ ছেড়ে দিয়ে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার জন্য কোশেশ করা। তবেই তারা প্রকৃত শান্তি লাভ করতে পারবে, দুনিয়াতে থেকেই জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি উপভোগ করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!
২য় দৃষ্টান্ত:
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে বাঘ ও মহিষ একই ঘাটে একসাথে পানি পান করতো। তাদের মাঝে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো না। বাঘ মহিষকে আক্রমণও করতো না। সুবহানাল্লাহ!
উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে যদি বনে প্রাণীদের মাঝে এরূপ সুখ-শান্তি, ইতমিনান, শৃঙ্খলা ও ইনসাফ বিরাজ করে, তাহলে মানুষের মাঝে কতটুকু সুখ-শান্তি, ইতমিনান, শৃঙ্খলা ও সম্মানিত ইনসাফ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ছিলো, সেটা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। সুবহানাল্লাহ!
তৃতীয় দৃষ্টান্ত:
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া মিশরের শুষ্ক নীলনদের প্রতি ফরমান মুবারক লিখে পাঠিয়ে ছিলেনÑ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
مِنْ عَبْدِ اللهِ عُمَرَ اَمِيْـرِ الْمُؤْمِنِيْـنَ اِلـٰى نِـيْلِ اَهْلِ مِصْرَ، اَمَّا بَـعْدُ، فَاِنْ كُـنْتَ اِنَّـمَا تَـجْرِيْ مِنْ قِـبَلِكَ وَمِنْ اَمْرِكَ فَلَا تَـجْرِ فَلَا حَاجَةَ لَـنَا فِـيْكَ وَاِنْ كُـنْتَ اِنَّـمَا تَـجْرِىْ بِاَمْرِ اللهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ وَهُوَ الَّذِىْ يُـجْرِيْكَ فَـنَسْاَلُ اللهَ تَـعَالـٰى اَنْ يُّـجْرِيَكَ
অনুবাদ:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
“এই চিঠিখানা মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার পক্ষ হতে মিশরের নীলনদের প্রতি। হে নীলনদ! তুমি যদি তোমার নিজের ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে তোমার পানি আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আর যদি তুমি ওয়াহিদুল ক্বহ্হার মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক-এ প্রবাহিত হয়ে থাকো, (তাহলে তোমার পানি আমাদের প্রয়োজন রয়েছে।) তাহলে ওয়াহিদুল ক্বহ্হার মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন। তাই, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করছি, তিনি যেনো তোমাকে প্রবাহিত করান।” সুবহানাল্লাহ!
চিঠিখানা ছিলেন পাতলা কাগজের মত চামড়ার মধ্যে লিখা। চিঠিখানা নীলনদের উপর নিক্ষেপ করার পর এটি হেলতে দুলতে আস্তে আস্তে নীলনদের ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া শুষ্ক যমীন স্পর্শ করলো। বর্ণিত রয়েছে- ইতিহাস সাক্ষী, চিঠিখানা নীলনদের যমীন স্পর্শ করার সাথে সাথে একটি বিকট আওয়াজ হয়ে এক লাফে ১৬ হাত পানি হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
যদি বিষয়টি এরূপই হয়, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে মানুষ কতটুকু সুখ-শান্তির মধ্যে ছিলো, তা কস্মিনকালেও ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। তবে, সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, তখন মানুষ দুনিয়াতে থেকেই জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি উপভোগ করেছিলো। সুবহানাল্লাহ! এর নামই হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ্ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
চতুর্থ দৃষ্টান্ত:
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তখন সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার মসনদে সমাসীন। ঐ সময়ের একখানা ঘটনা মুবারক-
عَنْ حَضْرَتْ اَلـنُّـعْمَانِ بْنِ بَشِيْـرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ فِـىْ مَـجْلِسٍ وَّحَوْلَهُ الْـمُهَاجِرُوْنَ وَالْاَنْصَارُ اَرَاَيْـتُمْ لَوْ تَـرَخَّصْتُ فِـىْ بَـعْضِ الْاُمُوْرِ مَا كُـنْـتُمْ فَاعِلِـيْـنَ فَسَكَـتُـوْا فَـقَالَ ذٰلِكَ مَرَّتَـيْـنِ اَوْ ثَلَاثًا فَـقَالَ حَضْرَتْ بِشْرُ بْنُ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ لَوْ فَـعَلْتَ ذٰلِكَ قَـوَّمْنَاكَ تَـقْوِيْـمَ الْقِدْحِ فَـقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنْـتُمْ اِذًا اَنْـتُمْ اِذًا
অর্থ: “হযরত নু’মান ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) একবার আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এক মজলিসে উপস্থিত হয়েছিলেন। উনার চারপাশে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা অবস্থান মুবারক করছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যদি আপনারা আমাকে কোনো কাজে শৈথিল্য করতে দেখেন, তাহলে আপনারা কী করবেন? তখন সকলে চুপ থাকলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এই কথা মুবারক দুইবার অথবা তিনবার বললেন। অতঃপর হযরত বিশর ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘আপনি যদি এমন করেন, তাহলে আমরা আপনাকে তীরের মতো সোজা করে দিবো’। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তবেই তো আপনারা কাজের লোক, তবেই তো আপনারা কাজের লোক।” সুবহানাল্লাহ! (জামি‘উল আহাদীছ ২৬/১৩৫, আল ওয়াফী বিল ওয়াফায়াত ৩/৩৮২, কানযুল উম্মাল শরীফ ৫/৬৮৭, মুখতাছরু তারীখে দিমাশক্ব ২/১৯২ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কোনো কাজে কোনো প্রকার শৈথিল্য দেখানোর তো প্রশ্নোই উঠে না। বরং হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা তো অবশ্যই; এমনকি সম্মানিত ১২জন খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে এই পর্যন্ত যত জন সম্মানিত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত জন সম্মানিত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিবেন, উনাদের দ্বারা কোনো প্রকার শৈথিল্য দেখানো কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
কেননা, উনারা দায়িমীভাবে সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দিক নির্দেশনা মুবারক অনুযায়ী চলে থাকেন। তবে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এই সম্মানিত ওয়াকেয়া মুবারক উনার মাধ্যম দিয়ে সম্মানিত ইনসাফ উনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সম্মানিত খলীফা উনাদের দ্বারা কস্মিনকালেও সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার খিলাফ বা সম্মানিত ইনসাফ মুবারক উনার খিলাফ কোনো কাজ সংঘটিত হওয়া আদৌ সম্ভব নয়, সেই বিষয়টিই তিনি এই ওয়াকেয়া মুবারক উনার দ্বারা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য কতো বড় রহমত, বরকত, সাকীনাহ্ ও নিয়ামত মুবারক উনার কারণ, তা এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! এ কারণেই যতদিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ছিলো, ততদিন মানুষ দুনিয়ার যমীনে থেকেই জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি উপভোগ করেছিলো। সুবহানাল্লাহ! আবার যখন ১০ম খলীফা খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার উছীলায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন মানুষ দুনিয়ার যমীনে থেকেই জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি লাভ করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, তখন এই দেশ ও সারা পৃথিবী হবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার একটি অংশ। সুবহানাল্লাহ!
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন