৩৭তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে
‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা মানহানী করবে, তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তারা নামধারী মুসলমান হোক বা কাফির হোক অথবা নাস্তিক হোক কিংবা যেকোনো ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি যারা তাদেরকে সমর্থন করবে, তাদেরও একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক’ পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার বিষয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ
থেকে দলীল:
৭. সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ
এবং উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْـتَـرُ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনার যারা শত্রু রয়েছে, তারা নির্বংশ এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা শত্রুতা করবে অথবা যারা বিদ্বেষ পোষণ করবে, তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যেমন- এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন, হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একজন অন্যতম বীর সিপাহসালার, ইনছাফগার সুলতান এবং বিশিষ্ট বুযূর্গ। উনার সম্মানিত মাজার শরীফ সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত। তারীখুল খমীস, নুযহাতুন নাযিরীনসহ আরো অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اِنَّ السُّلْطَانَ الْمَذْكُوْرَ كَانَ لَهٗ تَـهَجُّدٌ يَـأْتِـىْ بِهٖ فِـى اللَّيْلِ وَاَوْرَادٌ يَـأْتِـىْ بِـهَا فَـنَامَ عَقِبَ تَـهَجُّدَهٗ فَـرَاَى النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ نَـوْمِهٖ وَهُوَ يَشِيْـرُ اِلـٰى رَجُلَيْـنِ اَشْقَرَيْنِ وَيَـقُوْلُ اَنْـجِدْنِـىْ اَنْقِذْنِـىْ مِنْ هٰذَيْنِ فَاسْتَـيْـقَظَ فَزِعًا ثُـمَّ تَـوَضَّاَ وَصَلّٰى وَنَامَ فَـرَاَى الْمَنَامَ بِعَيْـنِهٖ فَاسْتَـيْـقَظَ وَصَلّٰى وَنَامَ فَـرَاٰهُ اَيْضًا مَرَّةً ثَالِـثَةً فَاسْتَـيْـقَظَ وَقَالَ لَـمْ يَـبْقَ نَـوْمٌ وَكَانَ لَهٗ وَزِيْـرٌ مِّنَ الصَّالِـحِيْـنَ يُـقَالُ لَهٗ جَـمَالُ الدِّيْنِ اَلْمَوْصِلِىُّ فَاَرْسَلَ اِلَيْهِ لَـيْلًا وَحَكٰى لَهٗ جَـمِيْعَ مَا اِتَّـفَقَ لَهٗ فَـقَالَ لَهٗ وَمَا قُـعُوْدُكَ اُخْرُجِ الْاٰنَ اِلَـى الْمَدِيْـنَةِ الـنَّـبَوِيَّةِ وَاكْتُمْ مَا رَاَيْتَ فَـتَجَهَّزَ فِـىْ بَـقِيَّةِ لَيْـلَتِهٖ وَخَرَجَ عَلٰى رَوَاحِلَ خَفِيْـفَةً فِـىْ عِشْرِيْنَ نَـفَرًا وَفِـىْ صُحْبَتِهِ الْوَزِيْـرُ الْمَذْكُوْرُ وَمَالٌ كَثِيْـرٌ فَـقَدِمَ الْمَدِيْـنَةَ فِـىْ سِتَّةَ عَشَرَ يَـوْمًا
অর্থ: “নিশ্চয়ই উল্লেখিত সুলত্বান (হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি সবসময় রাত্রে সম্মানিত ছলাতুত্ তাহাজ্জুদ আদায় করতেন এবং সম্মানিত ওযীফাসমূহ পাঠ করতেন। (৫৫৭ হিজরী শরীফ উনার কোন এক রাতে) তিনি সম্মানিত ছলাতুত্ তাহাজ্জুদ আদায়ের পর ঘুমিয়ে যান। তখন তিনি স্বপ্নে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক লাভে ধন্য হন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলুদ চক্ষু বিশিষ্ট দুই ব্যক্তির দিকে ইশারা মুবারক করে ইরশাদ মুবারক করেন- ‘আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য আপনি এই দুইজনকে (অর্থাৎ এই দুই ইয়াহূদীকে) দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তি দিন।’ (এই স্বপ্ন মুবারক দেখার সাথে সাথে) হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত চিন্তিত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং ওযূ করে সম্মানিত ছলাত আদায় করে ঘুমিয়ে যান। তখন তিনি ঘুমের মধ্যে আবার (একই) স্বপ্ন মুবারক দেখেন। (স্বপ্ন মুবারক দেখার সাথে সাথে) তিনি জেগে উঠেন এবং সম্মানিত ছলাত আদায় করে ঘুমিয়ে যান। তখন তৃতীয় বারও তিনি (একই স্বপ্ন মুবারক) দেখেন। (স্বপ্ন দেখার সাথে সাথে) তিনি জেগে উঠেন এবং বলেন, কোনো ঘুম অবশিষ্ট থাকতে পারে না। ‘হযরত জামালুদ্দীন মূছিলী রহমতুল্লাহি আলাইহি’ নামে উনার একজন নেককার-পরহেযগার উযীর ছিলেন। হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাত্রেই সেই সম্মানিত উযীর উনার নিকট সংবাদ পাঠান। (এবং সুলত্বানের নিকট দ্রুত আসার জন্য নির্দেশ মুবারক দেন। সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই সম্মানিত উযীর তিনি সুলত্বানের নিকট উপস্থিত হন। অতঃপর সম্মানিত উযীর উনাকে নিয়ে সুলত্বান গোপন কক্ষে প্রবেশ করে প্রকাশ না করার শর্তে) যা সংঘটিত হয়েছে (স্বপ্নের) সমস্ত কিছু বর্ণনা করেন। তখন সম্মানিত উযীর তিনি হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন- ‘কি কারণে আপনি এখনও বসে রয়েছেন? আপনি এখনই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে বের হন এবং আপনি যা দেখেছেন তা গোপন রাখুন। তখন রাত্র বাকী থাকতেই হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করলেন এবং ২০টি সৈন্যদলসহ উল্লেখিত সম্মানিত উযীর উনাকে সাথে নিয়ে অত্যন্ত গোপনে (দ্রুতগামী) বাহনে করে অনেক মাল-সম্পদ, (দিনার-দিরহামসহ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে) খুব ভোরে বের হয়ে পড়েন। অতঃপর হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাত্র ১৬ দিনের মধ্যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ পেঁৗছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ২/৩৬৩-৩৬৪)
হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকট উপনীত হয়ে সৈন্য-সামন্তসহ ওযূ করে দু’রাকায়াত নফল নামায আদায় করে দীর্ঘ সময় ধরে দো‘আ-মুনাজাত করলেন। অতঃপর সমস্ত সৈন্য দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে ঘেরাও করে ফেললেন এবং শাহী ফরমান জারী করে দিলেন যে- “হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত নেক নিয়তে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদেরকে মেহমানদারী করানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন। উনার এই মেহমানদারীতে কোনো লোক যেন বাদ না যায় সেটাও সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আরো জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বহিরাগত লোক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আসতে পারবেন; কিন্তু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ থেকে কোনো লোক বাইরে যেতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দ্বিতীয় ফরমান জারী না হবে।” হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র জুমু‘আহ্ শরীফ উনার দিন খুতবা দান করলেন এবং ঘোষণা করলেন, “আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদেরকে মেহমানদারী করানোর ইচ্ছা করেছি। আমার ইচ্ছা কেউ যেন এই মেহমানদারীতে অংশ গ্রহণ করতে বাদ না থাকেন।”
তিনি কয়েক হাজার ভেড়া, দুম্বা, উট যবেহ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র মদীনা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার পার্শ্ববর্তী দূর-দূরান্তের সর্বশ্রেণীর লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে তৃপ্তি সহকারে খাদ্য খাওয়ালেন এবং প্রত্যেকের নিকট অনুরোধ রাখলেন যে, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার কোনো লোক যেন এই মেহমানদারীতে অংশ গ্রহণ করতে বাদ না থাকেন।”
সপ্তাহব্যাপী শত সহ¯্র ভেড়া, দুম্বা, উট যবেহ করে লক্ষ লক্ষ লোককে মেহমানদারী করেন। আর অনুরোধের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন।
বার বার এই কথা শুনে এক পর্যায়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মুছল্লীগণ সকলেই একবাক্যে বলে উঠলেন, “সুলত্বান! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার আশপাশে এমন কোনো লোক আর বাকী নেই, যারা আপনার মেহমানদারীতে শরীক হয়নি।” তখন হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, “আমি বলছি আপনারা ভালোভাবে অনুসন্ধান করুন, এখনো কিছু লোক দাওয়াত খেতে বাকী রয়েছে। কেন তারা আমার এই দাওয়াতে শরীক হলো না? তারা কোথায় এবং তারা কারা? তাদেরকে আপনাদের খেঁাজ করে আনতে হবে।” হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বলিষ্ঠ কণ্ঠে এই ঘোষণা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার আকাশ-পাতালে যেন এক প্রকম্পন তুলে দিয়েছিলেন। একদিকে উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ অনুতাপের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে অপরদিকে দরদ যেন উথলে পড়ছিল কণ্ঠ থেকে। বিশাল জনতার ভরা মজলিসে হঠাৎ কিছু লোক বলে উঠলেন,
لَـمْ يَـبْقَ سِوٰى رَجُلَـيْـنِ صَالِـحَيْـنِ عَفِيْـفَيْـنِ مَغْرِبِـيَّـيْـنَ يُكْثِرَانِ الصَّدَقَةَ فَطَـلَـبَـهُمَا فَـرَاٰهُـمَا فَاِذَا هُـمَا الرَّجُلَانِ اللَّذَانِ اَشَارَ اِلَيْهِمَا النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“দু’জন নেককার-পরহেযগার, সচ্চরিত্র, সংযমশীল পশ্চিমা বা ইউরোপীয় ছাড়া আর কেউই বাকী নেই। তারা দুজন প্রচুর পরিমাণে দান-ছদক্বা করে। (তারা দু’জন কারো সাথে সাক্ষাত করে না, কারো দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করে না।) তখন সুলত্বান ঐ দুইজন লোককে তলব করলেন। সুলত্বান ঐ দুইজন লোককে দেখার সাথে সাথেই নিশ্চিত হন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই দুইজন লোকের দিকে ইশারা মুবারক করেছিলেন, এরাই হচ্ছে সেই দুই লোক।” (নুযহাতুন নাযিরীন, খুলাছাতুল ওয়াফা)
(পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)