নবজাতক সন্তানের কানে যে পবিত্র আযান-ইক্বামত বলা হয় এটাকে তা’যীন বলে। নবজাতকের ডান কানে পবিত্র আযান ও বাম কানে পবিত্র ইক্বামত দেওয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। আর তাহনীক হলো খেজুর, মধু বা মিষ্টি দ্রব্য কোন বুযূর্গ ব্যক্তি চিবিয়ে মুখ থেকে কিছু অংশ লালা সহকারে বের করে নবজাতক সন্তানের মুখে দেয়া এবং বাচ্চার জন্য দোয়া করাকেই তাহনীক বলে। তাহনীক করানো খাছ সুন্নত মুবারক।
সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পবিত্র আযান-ইক্বামত দেয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর সন্তানের কানে পবিত্র আযান-ইক্বামত দেয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান প্রত্যেকের জন্মগ্রহণের পর নাড়ী কেটে, গোসল করিয়ে তারপর ডান কানে পবিত্র আযান ও বাম কানে পবিত্র ইক্বামত দেয়া খাছ সুন্নত মুবারক।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْاِمَامِ الثَّالِثِ مِنْ أَهْلِ بَـيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (سَيِّدِنَا حَضْرَتْ حُسَيْنٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وُلِدَ لَهٗ فَأَذَّنَ فِيْ أُذُنِهِ الْيُمْنٰى وَأَقَامَ فِيْ أُذُنِهِ الْيُسْرٰى
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে পবিত্র আযান এবং বাম কানে পবিত্র ইক্বামত দেয়। (শুয়াবুল ঈমান, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৮৬১৯, মুসনাদে আবী ইয়ালা, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৬৭৮০, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৭৯৮৫)
“ক্বিমিয়ায়ে সাআ’দাত” কিতাবে নবজাতক সন্তানের কানে পবিত্র আযান-ইক্বামত দেয়ার ফায়দা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, শিশুরা সাধারণত রোগ প্রবণ হয়ে থাকে। তাদের কানে পবিত্র আযান-ইক্বামত বলা হলে, পবিত্র আযান-ইক্বামত উনাদের পবিত্র বরকত মুবারকে তাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র রহমত মুবারকে তারা নানারকম রোগ-বিমারী হতে নিরাপদ থাকে। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْاِمَامِ الثَّالِثِ مِنْ أَهْلِ بَـيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْحُسَيْنِ بْنِ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وُلِدَ لَهٗ مَوْلُوْدٌ فَأَذَّنَ فِيْ أُذُنِهِ الْيُمْنٰى وَأَقَامَ فِيْ أُذُنِهِ الْيُسْرٰى رُفِعَتْ عَنْهُ أُمُّ الصَّبِيَّاتِ
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যার সন্তান হয়, তারপর লোকটি সন্তানের ডান কানে পবিত্র আযান ও বাম কানে পবিত্র ইক্বামত দেয়, তাহলে তাকে উম্মুস সিবয়ান (বদ জিন) ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না। (শুয়াবুল ঈমান, ১১/১০৬, আল আযকার লিন নববী, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-৮৩৮)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُبَـيْدِ اللهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَذَّنَ فِيْ أُذُنِ سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْاِمَامِ الثَّالِثِ مِنْ أَهْلِ بَـيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْحُسَيْنِ بْنِ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ) حِيْنَ وَلَدَتْهُ النُّـوْرُ الرَّابِعَةُ سَيِّدَتُـنَا حَضْرَتْ زَهْرَاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِالصَّلَاةِ
অর্থঃ- হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবু রফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রাবী‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়াতে মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন, তখন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত কান মুবারকে পবিত্র নামাযের আযানের মত পবিত্র আযান দিতে দেখেছি। (আবূ দাউদ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৫১০৫, তিরমিযী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ১৫২০)
নবজাতকের ডান কানে আযান ও বাম কানে ইক্বামত দেয়ার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
শিশু সন্তানের কানে যে পবিত্র আযান-ইক্বামত বলা হয় এটাকে তা’যীন বলে। নবজাতকের ডান কানে পবিত্র আযান ও বাম কানে পবিত্র ইক্বামত দেওয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। পবিত্র আযান-ইক্বামত দেওয়ার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব হলো, যিনি আযান দিবেন তিনি পশ্চিম দিক মুখ করে দাঁড়াবেন। শিশুকে অন্য কেউ কোলে নিয়ে আযানদাতার সামনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াবেন। অথবা আযানদাতা নিজেও শিশুকে নিজ কোলে নিয়ে আযান দিতে পারেন।
এ পবিত্র আযান-ইক্বামত উনাদের বাক্য মুবারকসমূহ আর সম্মানিত নামায উনার পবিত্র আযান-ইক্বামত উনাদের বাক্যসমূহের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। যেমন এ পবিত্র আযান উনার বাক্য মুবারকসমূহ পবিত্র ফজরের আযানের মতো না হয়ে; অন্যান্য ওয়াক্তের পবিত্র আযানের বাক্য মুবারকসমূহের ন্যায় হবে। আর এ পবিত্র ইক্বামত উনার মধ্যে “ক্বদ ক্বামাতিছ ছলাহ” বলতে হবে না। তদ্রুপ বলার ক্ষেত্রেও কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ সম্মানিত নামায উনার আযান-ইক্বামত যেভাবে উচ্চস্বরে দিতে হয় সেভাবে উচ্চস্বরে সন্তানের কানে পবিত্র আযান-ইক্বামত বলতে হয় না। বরং স্বাভাবিক ও অল্প আওয়াজে পবিত্র আযান-ইক্বামত বলতে হবে। পবিত্র আযান উনার বাক্য মুবারকসমূহ পবিত্র ইক্বামত অপেক্ষা কিছুটা দীর্ঘ ও স্বাভাবিক আওয়াজে (স্বরে) বলতে হবে যেনো পবিত্র আযান ও পবিত্র ইক্বামত উনাদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়।
নবজাতককে তাহনীক করানো খাছ
সুন্নত মুবারক
নবজাতককে তাহনীক করানো মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। অনেক মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক রয়েছে যা নিজে নিজে পালন করা সম্ভব হয় না; সেই সকল মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনদের ভূমিকা থাকা আবশ্যক। তেমনি একটি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক হলো তাহনীক করানো।
কোন বুযূর্গ ব্যক্তির দ্বারা তাহনীক করানো উত্তম। অর্থাৎ খেজুর, খেজুর না থাকলে মধু বা মিষ্টি দ্রব্য বুযূর্গ ব্যক্তি চিবিয়ে মুখ থেকে কিছু অংশ লালা সহকারে বের করে বাচ্চার মুখে দিবেন এবং বাচ্চার জন্য দোয়া করবেন। এটাকেই তাহনীক বলে। তাহনীক করানো খাছ সুন্নত মুবারক।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُـؤْتٰى بِالصِّبْـيَانِ فَـيُـبَرِّكُ عَلَيْهِمْ وَيُحَنِّكُهُمْ
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে (নবজাতক) শিশুদেরকে আনা হতো। তিনি তাদের জন্যে বারাকাত ও কল্যাণের মহাসম্মানিত দোয়া মুবারক করতেন এবং ‘তাহনীক’ (কিছু চিবিয়ে মুখে প্রবেশ) করাতেন। (মুসলিম শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৪৯)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ مُوْسٰى رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ لِيْ غُلاَمٌ فَأَتَـيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمَّاهُ إِبْـرَاهِيْمَ فَحَنَّكَهٗ بِتَمْرَةٍ وَدَعَا لَهٗ بِالْبَـرَكَةِ وَدَفَـعَهٗ إِلَيَّ وَكَانَ أَكْبَـرَ وَلَدِ حَضْرَتْ أَبِيْ مُوْسٰى رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ
অর্থ: হযরত আবূ মূসা আল আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একজন ছেলে সন্তান বিলাদত শরীফ (জন্ম) গ্রহণ করলেন, আমি উনাকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে গেলাম। তিনি (সন্তানের) নাম রাখলেন ইবরাহীম। অতঃপর খেজুর চিবিয়ে উনার অর্থাৎ সন্তানের মুখে দিলেন এবং উনার জন্য অর্থাৎ সন্তানের জন্য পবিত্র বরকত মুবারকের মহাসম্মানিত দোয়া মুবারক করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তিনি ছিলেন হযরত আবূ মূসা আল আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সবচেয়ে বড় আওলাদ। (বুখারী শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৪৬৭)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِيْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْـهَا أَنَّـهَا حَمَلَتْ حَضْرَتْ بِعَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ بِمَكَّةَ قَالَتْ فَخَرَجْتُ وَأَنَا مُتِمٌّ فَأَتَـيْتُ الْمَدِيْـنَةَ فَـنَـزَلْتُ قُـبَاءً فَـوَلَدْتُ بِقُبَاءٍ ثُمَّ أَتَـيْتُ بِهٖ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـوَضَعْتُهٗ فِيْ حِجْرِهٖ ثُمَّ دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا ثُمَّ تَـفَلَ فِيْ فِيْهِ فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهٗ رِيْقُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ حَنَّكَهٗ بِالتَّمْرَةِ ثُمَّ دَعَا لَهٗ فَـبَـرَّكَ عَلَيْهِ وَكَانَ أَوَّلَ مَوْلُوْدٍ وُلِدَ فِي الْإِسْلاَمِ فَـفَرِحُوْا بِهٖ فَـرَحًا شَدِيْدًا
অর্থ: হযরত আসমা বিন্তে আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পবিত্র মক্কা শরীফে পবিত্র রেহেম শরীফে ধারণ করেন। তিনি বলেন, রেহেম শরীফে ধারণকাল পূর্ণ হওয়া অবস্থায় আমি বেরিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে আসলাম এবং ক্বুবায় অবতরণ করলাম। ক্বুবাতেই আমি উনার বিলাদত গ্রহণ সম্পন্ন করি অর্থাৎ ক্বুবাতেই তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। অতঃপর উনাকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে এসে উনাকে উনার মহাসম্মানিত নূরুল আযহার মুবারকে (মহাসম্মানিত কোল মুবারকে) দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনতে বললেন। তা চিবিয়ে তিনি উনার (সন্তানের) মুখে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই মহাসম্মানিত নূরুল বারাকাত মুবারকই (মহাসম্মানিত মহাপবিত্র লালা মুবারক-ই) সর্বপ্রথম উনার (সন্তানের) পেট মুবারকে প্রবেশ করেছিল। অতঃপর তিনি খেজুর চিবিয়ে তাহনীক মুবারক করলেন এবং উনার জন্য বরকত মুবারকের দোয়া মুবারক করলেন। (সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার পরে) সম্মানিত দ্বীন ইসলামে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণকারী তিনিই ছিলেন প্রথম আওলাদ (সন্তান)। তাই উনার জন্যে মুসলমানগণ মহা আনন্দে আনন্দিত হয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৪৬৯)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَخٍ لِّيْ يُحَنِّكُهٗ
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক ভাইকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে গেলাম, যেন তিনি উনাকে তাহনীক করেন অর্থাৎ খেজুর বা অন্য কিছু চিবিয়ে উনার মুখে দেন। (বুখারী শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৫৪২)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا وَلَدَتْ حَضْرَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْـهَا قَالَتْ لِيْ يَا حَضْرَتْ أَنَسُ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ اُنْظُرْ هٰذَا الْغُلاَمَ فَلَا يُصِيْـبَنَّ شَيْـئًا حَتّٰى تَـغْدُوَ بِهٖ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَنِّكُهٗ
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি যখন একজন সন্তানের বিলাদত গ্রহণ সম্পন্ন করলেন তখন আমাকে জানালেন, হে হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! শিশুটিকে দেখুন, যেন তিনি কিছু না খান, যতক্ষন না আপনি শিশুকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে নিয়ে যান, তিনি উনার (শিশুর) তাহনীক করবেন। (বুখারী শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৮২৪, মুসলিম শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ২১১৯)
উপরোক্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কতো বেমেছাল মুহব্বত মুবারক ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে পবিত্র রহমত-বরকত মুবারক হাছিলের জন্য উনারা বেকারার ছিলেন। এমনকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল বারাকাত মুবারকই (মহাসম্মানিত মহাপবিত্র লালা মুবারক-ই) যেনো নিজের নবজাতক সন্তানের প্রথম খাদ্য হয়। সেজন্য সন্তান জন্মগ্রহণ করলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে নিয়ে যেতেন “তাহনীক” করানোর জন্য।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَعَ صَبِيًّا فِيْ حِجْرِهٖ يُحَنِّكُهٗ
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি শিশুকে নিজের মহাসম্মানিত নূরুল আযহার মুবারকে (মহাসম্মানিত কোল মুবারকে) তুলে নিলেন। অতঃপর উনাকে তাহনীক করালেন। (বুখারী শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৬০০২)
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের আওলাদ (সন্তান), উনাদের ভাই- বোন জন্ম গ্রহণ করলে, তাহনীক করানোর জন্য উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে নিয়ে আসতেন। এমনকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাহনীক করানোর পূর্বে শিশুর মুখে অন্য কোন খাদ্য দেননি; এমন বর্ণনাও রয়েছে।
উল্লেখ্য, খেজুর চিবিয়ে রসালো করে নবজাতকের মুখে দিতে হবে। তবে, খেয়াল রাখতে হবে যে খেজুরের উপরের (ছাল) অংশ শিশুর মুখে দিলে শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে। তাই, খেজুরের ভিতরের নরম অংশ ভালোভাবে চিবিয়ে রসালো করে সামান্য কিছু শিশুর মুখে প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে; যাতে শিশুর কষ্টের কারণ না হয়। এছাড়াও মধু বা মিষ্টান্ন খাবার; যা শিশুর জন্য কষ্টদায়ক নয়, তা বুযূর্গব্যক্তি তিনি উনার লালাসহ শিশুর মুখে প্রবেশ করিয়ে দিবেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সর্বপ্রকার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন