রাঁধুনীর জন্য ভাত একটা টিপলেই যথেষ্ট। সচেতন মুসলমানের জন্য লর্ড উইলিয়াম মেকলের সেই ঐতিহাসিক স্বীকারোক্তি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। “আমরা এ উপমহাদেশ থেকে চলে যাব ঠিকই তবে আমরা এখানে এমন একটি জনগোষ্ঠী তৈরী করে যাব- যারা চেহারায়, বর্ণে, রক্তে, গোশ্তে হবে ভারতীয়। কিন্তু তাদের চিন্তা-চেতনায়, প্রবণতায় তারা হবে ইংরেজ তথা পাশ্চাত্যঘেষা।” মেকলের কথা সত্যে পরিণত হয়েছে। তাদের করে যাওয়া মেকানিজমে কাজ হয়েছে। মুসলমান তাদের জান্তে-অজান্তে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। পশ্চিমা ভাবধারায় সিক্ত হয়েছে। আধুনিকতার নামে তারা ইসলামী অনুশাসনকে অবজ্ঞা করে চলছে। শ্বাশত ইসলামী আহকামের বাইরে বেরিয়ে যাওয়াকেই তারা প্রগতি মনে করছে। পত্রিকান্তরে মন্তব্য করা হয়েছে, “বামপন্থী সরকার শাসিত পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই উদার ও প্রগতিশীল।” লোকসভা সদস্য ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ সালিম বলেন, “পশ্চাৎমুখী চিন্তাধারাকে আমরা উৎসাহ দেই না।” বলাবাহুল্য, সনাতন ইসলামী মূল্যবোধই যে তাদের কাছে পশ্চাৎমুখী চিন্তাধারা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর তথাকথিত উদার ও প্রগতিপন্থী হওয়ার নজীর এই যে, সেখানে এখন বিয়ে পড়াচ্ছেন তথাকথিত মহিলা কাজী। ভারতের ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকা সূত্র জানা যায়, ….. “বিয়ে পড়াচ্ছেন মহিলা কাজী- এমন দৃশ্য এখন অবাস্তব নয়। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামের শবনম আরা বেগম বেছে নিয়েছেন এ পেশা।
২৬ বছরের এই তরুণীই ভারতে প্রথম মহিলা কাজী। ২০০৩ সালে শবনম কাজী পদে নিয়োগ পান। এ পর্যন্ত ৭৭০টির বেশি বিয়ে পড়িয়ে আয় করেছেন কমপক্ষে এক লাখ রুপি। যা গ্রামের একজন তরুণীর জন্য অনেক। তবে ভারতের মুসলমান নারী সমাজে ব্যতিক্রম শবনম নিভৃতেই ছিলেন। কিন্তু তার নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের তাকে খবরের শিরোনাম করে। মামলাটি করেন নন্দীগ্রামেরই বাসিন্দা ও কাজী পদে প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেন। আরজিতে মোজাম্মেল বলেছেন, নারীর কাজী হওয়ার বিধান শরীয়তে নেই। বিশ্বে কেবল পুরুষরাই কাজী হন। …. আদালত বলেছেন তারা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না। বিচারপতি গিরিশ চন্দ্রগুপ্ত বিষয়টি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নিবন্ধন মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন। শবনমের আইনজীবি কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ বলেছেন, শবনম কাজী হওয়ায় পুরুষরা তা মানতে পারছে না। তাদের উচিত এ ঘটনাকে মুসলমান সমাজের সামনে এগিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখা। কারণ তিনি পুরুষের ছায়া হয়ে থাকা মুসলিম নারীদের সামনে এগোনের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন।” ….. (ইন্টারনেট) খবরটির উল্লেখযোগ্য বিষয় যে, ভারতীয় আদালত এখানে কোন হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু লোকসভা সদস্য মুহম্মদ সালিম, আইনজীবি কাজী সাইফুদ্দীন অর্থাৎ একশ্রেণীর মুসলমান নামধারী মহলই এ বিষয়টিকে উৎসাহিত করেছে। এমনকি এক্ষেত্রে নামধারী আলিম তথা উলামায়ে ছূ’দেরও অভিনব বক্তব্য যোগ হয়েছে। কলকাতার শাহী মসজিদের ইমাম নূরুর রহমান বলেছেন, “অনেক নারী পর্দার বাইরে আসছে। এটি যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই নন্দীগ্রামের লোকজন যদি নারী কাজী চায়, তাহলে আমি বিরোধিতা করবো কেন?” সত্যি বলতে গেলে এসব নামধারী আলিমরাই মুসলমানদের অনৈসলামী কাজের বিরোধীতা করার কবর রচনা করেছে। ভারতীয় প্রশাসন আজ মাইকে মুসলমানদের আযান দেয়াও অনায়াসে বন্ধ করতে পেরেছে। পেরেছে মার্কিনীরা তাদের এজেন্ট মুরতাদ আমিনা তথা কমিনাকে দিয়ে নিউইউর্কে ইমামতি করাতে। এছাড়া তারা অনেক আগেই মুসলমান দেশে মহিলা শাসক বানাতে সক্ষম হয়েছে। এরপর মসজিদে মহিলা ইমামের পর এখন সমাজেও মহিলা কাজীর উদাহরণ তৈরী করেছে। উল্লেখ্য, লর্ড উইলিয়ামের স্বীকৃত উক্তি একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ মাত্র। আসলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলছে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের এ ধারার ষড়যন্ত্র। ইসলামের নামে খোদ ইসলামী অনুশাসন তথা আহকামের ভেতরেও বিকৃত সাধন এখন তাদের মূল পরিকল্পনা। আর তা বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করেছে, পাকাপোক্ত করেছে নামধারী আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী জামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি, তোমাদের চৌদ্দপুরুষ শুনেনি।” সত্যিই আমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষ শুনেনি যে, “মুসলমান দেশে মহিলা শাসক হয়। মহিলা ইমাম হয় অথবা মহিলা কাজী হয়।” প্রতিভাত হচ্ছে যে, শুধু বাংলাদেশে নয়, উলামায়ে ‘ছূ’দের তান্ডব চলছে আজ গোটা বিশ্বেই। আরো প্রতীয়মান হয় যে, শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশর তথা গোটা বিশ্বই বর্তমানে জামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, গাউসুল আ’যম, কুতুবুল আলম আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর অকাট্ট তাজদীদ ও বেমেছাল রূহানিয়তের মুখাপেক্ষী। -মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫