“তোমরা ওলীআল্লাহগণ উনাদের ফেরাসত বা দৃষ্টিকে ভয় কর-” মহামহিম মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে এ লিখা লিখতে গিয়ে দু’টো কারণে এ হাদীছ শরীফ উনার শান আমাকে ভীষণ আলোড়িত করছে।
এক.
এ লিখার বিষয় যখন “গণতন্ত্রের পথে সউদী আরব” তখন মনে পড়ছে ১৯৮৭-৮৮ সালের কথা।
মুজাদ্দিদে আ’যম ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহইস সুন্নাহ, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সেদিন সুন্নতী জামে মসজিদে জুমুয়ার নামায শেষে উপস্থিত মুরীদ মুতাকিদগণ উনাদের মাঝে ‘গণতন্ত্র যে মুসলমানদের জন্য ইহুদী-খ্রিস্টানদের পাতা ফাঁদ সে সম্পর্কে সতর্ক করে’ অমূল্য বয়ান রাখেন।
এক পর্যায়ে তিনি বললেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে ইহুদী-খ্রিস্টানরা খোদ সউদী আরবে তথা মিডল-ইস্ট বা মধ্যপ্রাচ্যেও গণতন্ত্র ঢুকিয়ে দিবে।” ঠিক প্রায় পনের বছর পর তার হুবহু প্রমাণ দেখতে পাই।
প্রসঙ্গত: এপি এএফপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, সউদী পৌর কাউন্সিলের নির্বাচন শুরু: গত ১০ই ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সউদী আরবে পৌর কাউন্সিলের নির্বাচন শুরু হয়েছে। তিনটি স্তরে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে সরাসরি ভোট দিতে পারবে। সেখানেই এই প্রথমবারের মত কোন নির্বাচনে সরাসরি ভোটদানের ব্যবস্থা করা হলো। তবে পুরুষরাই শুধু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। সউদী আরবে কোন মহিলার নির্বাচনে প্রার্থিতা অথবা ভোটদান এখনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিয়ে সউদী সরকার সম্প্রতি একটি আইন পাস করছে। নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে গতকাল রাজধানী রিয়াদের ১৪-০টি কেন্দ্রাসহ মোট ২০৭টি কেন্দ্র ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আগামী এপ্রিল এবং মে মাসে দেশের অন্যান্য শহরে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ভোট হবে। রিয়াদের মোট ৩৮টি আসনের জন্য সাত শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আশপাশের বাকী ৮৯টি আসনের জন্য ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন ১১শ’ প্রার্থী। রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকায় ভোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ভোটার ভোটদানের জন্য তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেন। নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৫টার সময় শেষ হয়। (ইন্টারনেট ও সব জাতীয় দৈনিক)
উল্লেখ্য বিশ্বের এক-চুতর্থাংশ অপরিশোধিত তেল মজুদকারী দেশ সউদী আরবে ৭৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোন নির্বাচন হল।
আরব উপদ্বীপের এই মরু রাজ্যটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার এই নির্বাচনের আয়োজন করে। এবার সউদী আরবে মোট ১৭৮টি পৌরসভার ৫৯৮টি আসনে ১ হাজার ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক রাজধানী রিয়াদে মাত্র ৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬৫০ জন প্রার্থী।
উল্লেখ্য, রাজতন্ত্রের দেশ সউদী আরব এ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা তথা গণতন্ত্রায়নের জন্য মার্কিন হুমকি-ধামকি ছিলো একেবারে খোলা মেলা।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তার মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের দুই প্রধান মিত্রদেশ সউদীআরব ও মিসরের বিদ্যমান রাজনৈতিক পদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এ দেশ দু’টিকে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফেব্রুয়ারী মাসেক প্রেসিডেন্ট বুশ তার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে এ কঠোর বক্তব্য দেয়ার পর বুশের কথামত কাজ না করলে এ মিত্র দেশ দু’টিকেও যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে স্পষ্ট আভাস ব্যক্ত হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব গ্রহণের পর বুশ বিশ্বের সর্বত্র কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে চাপ বৃদ্ধির যে অস্বীকার করেন এটা তারই প্রথম হুঙ্কার।
প্রসিডেন্ট বুশ তার ভাষণে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর পরিম-লে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের অভিন্ন হুমকি মুকাবেলায় ওয়াশিংটন তার আরব মিত্রদের সাথে একযোগে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন যে, তার এ ধরনের পদক্ষেপের মূল কথা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সামগ্রিক স্বাধীনতা অর্জনের ব্যাপারে ওই অঞ্চলের নেতাদেরকে উৎসাহিত করা। -এপি, এএফপি।
প্রেসিডেন্ট বুশ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বে যেসব দেশের শাসকরা তাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও চর্চার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে না তাদের সাথে ওয়াশিংটনের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কোন সম্ভাবনা নেই।
এ দিকে মিসর সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বুশ বলেছেন, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী দেশ মিসরকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ ইহুদী প্রভাব বলয়ে আবদ্ধ সন্ত্রাসী খ্রিস্টান প্রতিভু বুশ এখন প্রকাশ্য হুমকি ধামকি দিয়ে সমস্ত মুসলিম দেশগুলোতে তথাকথিত গণতন্ত্র কায়েমে কোমর বেধে নেমেছেন।
কিন্তু এর পিছনে মূল কারণটি কি? এ প্রশ্ন উদয় হতেই নিমিষেই ভেসে আসলো মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহইস সুন্নাহ, আওলাদে রসূল হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আরেকটি ক্বওল শরীফ।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রই এমন সরকার ব্যবস্থা, যার দ্বারা খুব সহজে ইসলামকে উঠিয়ে দেয়া যায়। যথার্থভাবে শরীয়তের খিলাফ হুকুমকে চাপিয়ে দেয়া যায়। যা অন্য কোন শাসনাব্যবস্থা দ্বারা সম্ভব নয়।”
গণতন্ত্রে অবাধ মত প্রকশের স্বাধীনতা থাকে। আর প্রবাদ রয়েছে, মন না মতি। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে শুধু তা নয়। বরং একই মানুষ একটু পর পরই ভিন্ন মত প্রকাশ করে থাকে।
কাজেই যত মত; তত পথ প্রকাশের প্রেক্ষিতে এখানে সমন্বিত, সুষ্ঠ ও সঠিক মতের বিকাশ ও বাস্তবায়ন হয় না।
তাছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মতের পিছনে নফসের তথা প্রবৃত্তির রেশ থাকে, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থাকে।
কাজেই মানুষ যা ভাবছে তাই প্রকাশ করলে, তাই বাস্তবায়ন করলে সমাজে, হুকুমতে অশান্তি অরাজকতা অনিয়ম অনিবার্য।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্ভবত: তোমরা যা ভাল মনে কর সেটাই মূলত: খারাপ আর তোমরা যা খারাপ মনে কর সেটাই মূলত: ভাল।
মূলত: গণতন্ত্রে কথিত এই মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে ধর্ম উদাসীন মুসলমানরা বেদ্বীন বদদ্বীনি আক্বীদা আমলে উৎসাহী হয়ে উঠে। ফলত: শরীয়তের খিলাফ অনৈসলামী কার্যক্রম তখন ব্যাপকতা লাভ করে। আর তখন ইসলামী আবহ প্রয়োগ করতে চাইলে তা হয়ে উঠে কথিত গণতন্ত্রের ভাষায় মানবাধিকার লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, সউদী আরবে রাজতন্ত্রের আবহে যৎকিঞ্চিৎ মুসলিম আইন-পর্দা করা, চুরিতে হাত কাটা ইত্যাদি যাও এখন প্রচলিত আছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তাও তখন থাকবে না।
কারণ তখন পর্দা করা না করা ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপার হবে। পর্দা চাপিয়ে দেয়া বা চুরিতে হাত কাটা তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।
আর এভাবে ব্যক্তি মত ও পথের স্বাধীনতায় ভেসে সাধারণ মানুষ বল্গাহারা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হবে। কিন্তু তাতে কোন নিয়ন্ত্রণ বা আইন করতে গেলেই তা হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
“তোমার দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তোমারা মডারেট নও”- এই হচ্ছে কোন মুসলিম দেশে অবাধ খ্রিস্টানী কালচার জারী করার ক্ষেত্রে বর্তমান মার্কিনী ছুঁতো তথা উক্ত দেশ দখলের ওছীলা। তাই এ কারণেই এখন মার্কিনীরা সব মুসলিম দেশে গণতন্ত্রায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মুসলমান ও তাদের দেশ সমূহকে পদানত করার হীন উদ্দেশ্যে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, ইমামে আ’যম, মুহইস সুন্নাহ, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এ তাজদীদ আমরা যত তাড়াতাড়ি অনুভব করব ততই আমাদের মঙ্গল।
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, বাসাবো, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১