মাত্র ৫ দিন পূর্বে আচমকা হজ্জের তারিখ পরবর্তন বা হাজীদের ৮ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে অবস্থান প্রসঙ্গে

সংখ্যা: ১৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

يسئلونك عن الاهلة قل هى مواقيت للناس والحج.

অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন যে, এটি মানুষের জন্য নির্ধারণ এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম।” (সূরা বাক্বারা-১৮৯)

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته.

অর্থ: “তোমরা চাঁদ দেখে (মাহে রমাদ্বানের) রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে (মাহে শাওয়ালে) রোযা ভঙ্গ কর।” (বুখারী ও মুসলিম)

সূরা বাক্বারার উল্লিখিত আয়াত শরীফ এবং ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার উল্লিখিত হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে একথা বলা হয়েছে যে, মাহে যিলহজ্জে অনুষ্ঠিতব্য হজ্জ এবং মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা চাঁদের তারিখ বা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। উক্ত চাঁদের তারিখ বা সময় যদি হেরফের তথা আগে-পিছে করা হয় তাহলে হজ্জ ও রোযা কোনটিই শুদ্ধ হবেনা। কারণ চাঁদের নির্দিষ্ট তারিখ বা সময়ে হজ্জ সম্পাদন করা ফরয ও ওয়াজিব।

অতএব, যদি বলা হয়, ১৪২৫ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে পালিত পবিত্র হজ্জ কোন মানুষেরই সঠিকভাবে আদায় হয়নি, তবে একদল হয়তো একথা ঘোষণার সাথে সাথে বিক্ষোভে ফেটে পড়বেন। তারা হয়তো যুক্তি দেখাবেন, “হজ্জ কবুলের মালিক মহান আল্লাহ পাক। কার কবুল হয়েছে আর কবুল হয়নি বিষয়টি মানুষের ইখতিয়ারভুক্ত নয়। সুতরাং একথা বলা ধৃষ্ঠতা বৈ আর কিছুই নয়।”

অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে আমরা বলতে চাই, আপনাদের সাথে আমরাও সম্পূর্ণ একমত। কবুলের মালিক অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক। কিন্তু আমরা যা বলতে চাই তা একটু ভিন্নতর। যেমন ধরুন, কেউ যদি নামায আদায় করতে চায় তাহলে অবশ্যই তার নামায আদায়ের সাথে সংশ্লিষট সকল বিষয়গুলোরই ফরয পরিমাণ জ্ঞান থাকতে হবে। যেমন, সঠিক ওয়াক্ত চেনা, পাক-নাপাক সংক্রান্ত জরুরী মাসয়ালা-মাসায়িল, ওযূর মাসয়ালা-মাসায়িল, সূরা-ক্বিরায়াত জানা ইত্যাদি। বলা হয়, যে আমল করা ফরয সেই আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ও জানা ফরয। সুতরাং নামায আদায়ের সকল হুকুম-আহকাম মেনে, সুন্নতগুলো সঠিকরূপে আদায় করে নামায শেষ করেই একজন বলতে পারেন- ‘নামায কবুলের মালিক মহান আল্লাহ পাক।’ কিন্তু ফযরের নামায যোহরের ওয়াক্তে আদায় করলে অথবা সুবহে সাদিকের পূর্বে মধ্যরাতে উঠে ফযরের নামায আদায় করে কেউ যদি নামায কবুলের আশা করে, তবে ব্যাপারটি হবে অর্থহীন। সে রকমই একটি ব্যাপার ঘটেছে গত বছরের যিলহজ্জ মাসে। হজ্জের একটি ফরয হচ্ছে ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। সুতরাং হজ্জের এ ফরয অনুষ্ঠানটি সঠিকভাবে আদায় করতে যিলহজ্জ মাসের শুরুটাও সঠিকভাবে চাঁদ দেখেই শুরু করতে হবে। যদি যিলহজ্জ মাসের দিন গণনা প্রথমেই ভুল হয় অর্থাৎ যিলক্বদ মাসের দিন গণনা প্রথমেই ভুল হয় অর্থাৎ যিলক্বদ মাসের ৩০ তারিখে যিলহজ্জ মাসের ১ম তারিখ ঘোষণা করা হয় অথবা চাঁদ দেখে যিলহজ্জের সঠিক তারিখ ঘোষণা হবার পর হঠাৎ করেই ইচ্ছামাফিক তারিখ পরিবর্তন করা হয় তবে অবশ্যই ৯ই যিলহজ্জে আরাফার ময়দানে অবস্থান না করার দরুন হজ্জের ফরয আদায় হবে না অর্থাৎ হজ্জ বাতিল বলে গণ্য হবে।

এতটুকু পড়েই হয়তো পাঠক ভাববেন, এমনটাও কি হয়? কেউ কি যিলক্বদের ৩০ তারিখে যিলহজ্জের ১ম তারিখ ঘোষণা করে? অথবা মাস সঠিক ভাবে শুরু করে আবার তারিখ পরিবর্তন করে?

উত্তর হচ্ছে, অহরহই হচ্ছে। নতুন মাসের তারিখ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে সউদী তাকওম আল কুরা নির্ভর করে New moon (যে চাঁদ দৃশ্যমান হয়না) এর দিন তারিখের উপর। ঘবসিড়ড়হ কখনই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক বাঁকা চাঁদ নয়। এটা সম্পূর্ণই অন্ধকার এবং দিন ও রাত্রির যে কোন সময় সংঘটিত হয়। New moon এর উপর নির্ভরশীল হওয়াতে তা সউদী আরবে যেদিন প্রকৃতপক্ষে চাঁদ দেখা যায় তার একদিন অথবা দুইদিন পূর্বেই তারা মাস শুরু করে।

ধরা যাক, কোন একদিনের দুপুর ১২ টায় সউদী আরবের আকাশে New moon বা অমাবস্যা সংঘটিত হবে যদিও শরীয়তের নতুন মাস শুরু করার জন্য চাঁদ দেখা শর্ত কিন্তু যেহেতু সউদী আরব নতুন মাস শুরু করার জন্য নিউমনের তারিখ অনুসরণ করে ফলে তারা সেই নিউমুন সংঘটিত হবার দিনটিকে নতুন মাসের প্রথম দিন শুরু করবার জন্য আগের দিন সন্ধ্যা থেকে নতুন মাসের তারিখ ঘোষণা করে।

New moon যেহেতু অমাবাস্যার চাঁদ সুতরাং সে চাঁদ কোনদিনই দৃশ্যমান হয়না। Nasa আকাশে ৫০০ মাইল উপর থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে New moon দেখার চেষ্টা করেছে তাতেও চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি। সেখানে পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেকা যাবার ব্যাপারটা কল্পনামাত্র।

যদিও New moon এর শাব্দিক অর্থ নতুন চাঁদ কিন্তু তা শরীয়তের হিলাল নয়। আর Crecent moon হচ্ছে অমাবস্যার পরে যে এক ফালি চাঁদ আকাশে দৃশ্যমান হয়। একে হিলাল বা বাঁকা চাঁদ বলে। আমরা এবারে সউদী আরব কর্তৃক গত যিলহজ্জ মাসের (১৪২৫ হিজরী) তারিখ ঘোষণা কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

জানুয়ারি ১৪, ২০০৪ সালে (পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেদিন ছিল যিলহজ্জের ৪ তারিখ) সউদী আরব হঠাৎ করেই তাদের চন্দ্রমাসের তারিখের পরিবর্তন ঘোষণা করে এবং সে ঘোষণা অনুযায়ী জানুয়ারির ১৯ তারিখে হাজীদের আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে বলে এবং ২০ তারিখে ঈদুল আযহা ঘোষণা করে।

প্রশ্ন হচ্ছে, যদি চাঁদ দেখেই কোন মাস শুরু হয়ে থাকে তবে কি করে মাসের তারিখ হঠাৎ পরিবর্তন হয়। আর যদি বলা হয়, চন্দ্রমাসের প্রথম তারিখ গণনাতে ভুল হওয়াতে একটু দেরিতে এ তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে, তবে সেখানেও কথা থেকে যায়। সে ভুল সংশোধনের জন্য একদিনই যথেষ্ট চারদিন নয়।

সউদী আরবের যিলহজ্জ মাস যেভাবে শুরু হয়েছিলো তাতে ৯ই যিলহজ্জ হবার কথা জানুয়ারির ২০ তারিখ। কিন্তু হঠাৎ করেই ৪ঠা যিলহজ্জ তাদের মাসের তারিখ পরিবর্তন করার ফলে ৯ই যিলহজ্জ অনুষ্ঠিত হয় ১৯শে জানুয়ারিতে। সত্যি অদ্ভুত এই তারিখ পরিবর্তন। এই পরিবর্তনটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আইয়্যামে জাহেলিয়াতের কথা, যারা তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য পবিত্র মাসগুলোকে আগে-পরে নিয়ে যেত। কুরআন শরীফ উনার ভাষায় যাকে নাছী বলা হয়।

১৯শে জানুয়ারি ৯ই যিলহজ্জ ঘোষণা দেয়ার অর্থই হচ্ছে সউদী আরব তাদের আকাশে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখেছিলো জানুয়ারির ১০ তারিখে। কিন্তু আসলেই কি সেদিন সউদী আরবের আকাশে চাঁদ দেখা গিয়েছিলো? উত্তরটা তাদের জানা না থাকলেও আমাদের জানা আছে যে, তারা যিলহজ্জের চাঁদ দেখতে পায়নি। কেননা, প্রথমত: চাঁদ না দেখে ভুলে তারিখ শুরু করলে পরে চাঁদ দেখতে পেলে তারিখ পিছিয়ে যেতে পারে কিন্তু তারিখ এগিয়ে আসার বিষয়টি হাস্যকর।

১০ই জানুয়ারি, সেদিন সউদী আরব চাঁদ দেখেছে বলে দাবী করেছে সেদিন নতুন চাঁদের জন্ম হয়েছে দুপুর ১২:০৩ মিনিটে আন্তজাতিক সময় অনুযায়ী। এবং যখন সউদী আরবে সন্ধ্যা নেমেছে তখন চাঁদের বয়স মাত্র ৩ ঘণ্টা। এবং সূর্যাস্তের ৩ মিনিট পূর্বেই চাঁদ অস্ত গেছে। সুতরাং সউদী আরবের আকাশে সেদিন চাঁদ দেখা যাওয়া সম্পূর্ণ অবান্তর।

কেননা, প্রয়োজনীয় পরিবেশ অনুকূলে থাকলে New moon এর ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টার পুরনো চাঁদ দৃশ্যমান হয়। আর যে বাঁকা চাঁদ দৃশ্যমান হয় তা সাধারণত অস্ত যায় সূর্য অস্ত যাবার ৪০-৪৫ মিনিট পর। সুতরাং সূর্য অস্ত যাবার পূর্বেই যে চাঁদ অস্ত যায় এবং যার বয়স হয় মাত্র তিন ঘণ্টা তা কোনদিনই দেখা সম্ভব নয়। অথচ শরীয়তের সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সকল scientific facts পাশ কাটিয়ে যিলহজ্জ মাস শুরুর কয়েকদিন পর হঠাৎ করেই তারিখ পরিবর্তন করে সউদী আরব সমগ্র মুসলিম জাতির বিবেককে আঘাত করেছে।

সঠিক তারিখ ঘোষণা না হবার কারণে সকল হাজীর ৮ই যিলহজ্জে আরাফার ময়দানে অবস্থানের কারণে হজ্জ অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আগত প্রায় কোটি হাজীর হজ্জ বাতিল হবার বিষয়টি অত্যন্ত বেদনার।

সউদী শাসকের এ ধরনের হেয়ালীপূর্ণ কাজ বন্ধ না হলে এটা অবশ্যই প্রমাণিত হবে যে, তারা ইসলামের দরদী নয়। এবং অবশ্যই এবার সকল হাজীদের হজ্জ না হবার কারণে যে গুনাহ হয়েছে তা বর্তমান সউদী শাসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরই বহন করতে হবে। এবং একদিন মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার কাছে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাদের জন্য সত্যিই আমাদের অনেক আফসুস।

 

-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব।  খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-১১         

বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১

 রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী নায়িব ও ওয়ারিছ। তাঁর বিরোধীতাকারীরা মুনাফিক, কাফির ও শয়তানের অনুসারী -১১     

 “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে সিনেমা”  নিশ্চুপ উলামায়ে ‘ছূ’রা ॥ সর্বাঙ্গে দায়ী তারা 

অবশেষে তথাকথিত ইসলামী জামাতের আমীর নিজামী ও বায়তুল মোকাররামের তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, এরপর এবার মুফতে আমিনীও রাজারবাগ শরীফের তাজদীদ মানতে বাধ্য হলেন