‘মডারেট’ শব্দটি ইংরেজি। বাংলা একাডেমী প্রণীত অভিধানে ‘মডারেট’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে, মাঝারী, মাঝারির কম, নরমপন্থী, মাঝারি রকমের, মাঝারি গোছের ইত্যাদি। এছাড়া দি পেঙ্গুইন কনসিস ইংলিশ ডিকশনারী, ফোলার কনসিস ইংলিশ ডিকশনারী, কলিন্স কোবাল্ড ডিকশনারী, অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারীতে মূলত: এরূপই অর্থ করা হয়েছে।
হালে ‘মডারেট’ শব্দটি মার্কিনীরা ব্যবহার করছে। মূলত: মুসলমানদের ক্ষেত্রে তারা এ শব্দ প্রযোজ্য করতে চাইছে। ‘মডারেট’ বলতে তারা শুধু ইসলামের নামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদী চেতনার নির্মূলীকরণ চাইছে বিষয়টি তা নয়। যদি তাই হয়ে থাকতো তাহলে আপত্তিকর কিছু ছিলো না। কারণ ইসলাম কখনোই মৌলবাদ বা সন্ত্রাসবাদ চেতনায় বিশ্বাসী নয়। আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মধ্যমপন্থা উত্তমপন্থা। অর্থাৎ ইসলাম নিজেই মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী। তবে তা কোন ইসলামী অনুষঙ্গ কাট-ছাট বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন বিকৃতি বা রূপান্তর সাপেক্ষে প্রযোজ্য নয়।
কিন্তু কথা হচ্ছে, মার্কিনীরা ‘মডারেট’ শব্দটি যে অর্থে প্রয়োগ করতে চায় তা খোদ ইসলামী হুকুম পালন করার ক্ষেত্রেই। অর্থাৎ মার্কিনীদের দৃষ্টিতে ‘মডারেট’ হতে হলে অনেক ক্ষেত্রে শাশ্বত ইসলামী মূল্যবোধ ও আহকামকেই ত্যাগ করতে হবে। মার্কিনীদের কাছে দাড়ী রাখা, লম্বা কোর্তা পড়া, শরীয়তী পর্দা করা, গণতন্ত্র না করা এগুলোও অসহনীয় ও অসংযত আচরণ বলে গণ্য।
পাশাপাশি মহিলা ফুটবল, মহিলা কুস্তি, মহিলা সাঁতার, ব্যান্ড শো, লাইভ কনসার্ট, ভ্যালেন্টাইন ডে, থার্টি ফাস্ট নাইট কালচার পালনে কোনরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাও মডারেটেরের বিরুদ্ধে ভূমিকা বলে প্রতিভাত।
সহজ কথা, কথিত ‘মডারেটের’ ভূমিকায় মুসলমানকে মসজিদে যাওয়ার পাশাপাশি ক্লাবে, পার্টিতে গিয়ে খ্রিস্টানী কায়দায় নাচানাচি আর বিয়ার পানেও যুগপৎ ভূমিকা পালন করতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “কাফির-মুশরিকরা ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার প্রতি খুশি হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাদের নিয়মনীতি গ্রহণ না করবেন।”
অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, ঐতিহাসিকভাবে ধর্মপ্রাণ এদেশীয় মুসলমানদেরকে মার্কিনীদের কথিত মডারেট মুসলমান হতেই আহ্বান করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আরো গভীর আশ্চর্যের বিষয় যে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি দেশবাসীর সামনে এ আহ্বান রাখেননি তবে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিনিধিদের উস্তাদদের (?) কাছে।
আরবীতে উস্তাদদের বলা হয় (মুদার্রিছীন) তারা দরছ তথা শিক্ষা দিয়ে আলিম বানান তথা মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিনিধি তৈরি করেন। আর তাদেরই জামায়েত তথা জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মজলিসে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি/২০০৫ ঈসায়ী প্রধানমন্ত্রী ও বক্তব্য রাখেন।
তথাতথিত জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মুখপত্র তথাকথিত দৈনিক ইনকিলাবে এ মর্মে ছাপা হয়,
জমিয়াতুল মুদার্রিছীনের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ॥ মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ইমেজ ধরে রাখতে হবে
প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করলে এই বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে ১৫১ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, উক্ত মুখপত্রে এই জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পরিচয় ব্যক্ত করে আরো বলা হয়,
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রদত্ত বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের স্মারকলিপিতে বলা হয় যে, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এই মাদরাসা শিক্ষা ধারার এবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত সর্বস্তরের সকল মাদরাসা শিক্ষকের একমাত্র সংগঠন। সুদীর্ঘ পৌনে ১০০ বছরের ঐতিহ্যধন্য এই সংগঠনের আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষকের অনেকেই একই সঙ্গে মসজিদের ইমাম, বিবাহের কাজী, ওয়ায়েজ, মোবাল্লেগ ও পীর মোর্শেদ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রাণপুরুষ। এরাই নেতৃত্ব প্রদান করেন সকল ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকা-। দেশের মাটি ও গণমানুষের সাথে অত্যন্ত নিবিড় এদের সম্পর্ক। (দৈনিক ইনকিলাব, ২৫ ফেব্রুয়ারি/২০০৫)
উল্লেখ্য, তাদের দাবী যাই হোক কিন্তু ২৪ শে ফেব্রুয়ারি তারা যে কাজটি করেছে তাহলো, প্রধানমন্ত্রীর তেঁজগাওস্থ কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তারা মহিলা প্রধানমন্ত্রীর দিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, তার নারী কণ্ঠের আওয়াজে কথিত মডারেট হবার ওয়াজ শুনেছে এবং তা সমর্থন করেছে ও উচ্চকণ্ঠে তার প্রশংসা করেছে।
সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মান্নান পুত্র এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সকল ইসলামী শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্য ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। মাদরাসাগুলো রাজনীতিমুক্ত। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া মাদরাসা শিক্ষকের বাকি সবাই রাজনীতির বাইরে। তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু তারা সবাই ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আর বর্তমানে এই ইসলামী শক্তির একচ্ছত্র নেত্রী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া”। (ইনকিলাব ২৫ ফেব্রুয়ারি/২০০৫)
বলাবাহুল্য, তাদের দাবীকৃত এই বর্তমান ইসলামী শক্তি সম্পর্কে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের চরম-পরম কৌতুহলের উদ্রেক হয়েছে। কারণ, তাদের কথিত ‘বর্তমান ইসলামী শক্তি’ কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে নাযিলকৃত দ্বীন ইসলামের বাইরে অন্য এক নতুন তথাকথিত ইসলামী শক্তি নয়?
যেহেতু তাদের দাবীকৃত ইসলামে পর্দার বালাই নেই। অথচ দ্বীন ইসলামে পর্দা করা ফরয। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে।”
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে দেখে এবং দেখায় উভয়ের প্রতি লা’নত।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, একদিন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু! দৃষ্টিকে অনুসরণ করো না। যদি কোথাও দৃষ্টি পড়ে যায়, শরীয়তের খিলাফ কোন স্থানে যদি তোমার দৃষ্টি পড়ে যায় সেটাকে অনুসরণ করো না। প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করে দেয়া হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।”
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, মুহাদ্দিসীনে কিরাম ও মুফাসসিরীনে কিরামগণ, ইমাম-মুজতাহিদ, যারা ফক্বীহ অনেক কিছু উল্লেক করেছেন, সাধারণভাবে যদি কারো দৃষ্টি কারো উপর পড়ে যায়, যদি তার বদ খেয়াল না থাকে, সেটা জায়িয হবে অথব হবে না? আর যদি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ দৃষ্টি করে তাহলে সেটাই বা কতটুকু শরীয়তের হুকুম?
এখানে যদিও কেউ কেউ বলেছেন, কোন খারাপ উদ্দেশ্য ব্যতীত যদি কেউ দৃষ্টি করে সে হোক পুরুষ বা মহিলা সেটা তার জন্য মাকরূহ। আর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেউ যদি সেটা হচ্ছে, উদ্দেশ্য ভাল থাকুক অথবা খারাপ থাকুক, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অর্থাৎ যদি সে একাধিক দৃষ্টি করে তাহলে অবশ্যই সেটা হারাম হবে। এবং যদি উকি-ঝুঁকিও কেউ দেয় ইচ্ছাকৃত সেটাও তার হারাম, কবীরাহ গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবে।
পাঠক! পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের এরূপ অনেক অনেক আদেশ-নির্দেশ রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আবহমান কাল ধরে মুসলমান মাত্রই বেগানা-মহিলাদের দিকে তাকানো সম্পর্কে শরীয়তী ধ্যান-ধারণা রয়েছে। এবং ক্রুআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার বর্ণিত এসব কথা উক্ত মোদার্রেছীনদের এ যাবত শিক্ষা দিয়ে আসছেন।
স্মরণযোগ্য, যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, বাহরুল উলুম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদী ও গবেষণাধর্মী মুবারক ক্বওল হচ্ছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকে-ে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠার হাজার কবীরাহ গুনাহ লিখা হয়। তাহলে দৈনিক তারা যে কত হাজার হাজার কবীরাহ গুনাহ করে থাকে তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই বেহতর জানেন।”
এটা তো শুধু চোখের যিনার গুনাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা যিনা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويمنى ويصدق ذلك الفرج او يكذبه.
অর্থ: “চোখের যিনা হলো দৃষ্টি করা, কানের যিনা হলো শ্রবণ করা, মুখের যিনা হলো কথা বলা, হাতের যিনা হলো স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, কানযুল উম্মাল)
অতএব, যে সমস্ত আলিম-উলামা পর্দা উপেক্ষা করে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, মেলা-মেশা করে, তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত উলামায়ে ‘সূ’ তথা নিকৃষ্ট ক্ষমতা লোভী, দুনিয়াদার, নাহক্ব শ্রেণীর আলিম। যাদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
نعم الامير على باب الفقير وبئس الفقير على باب الامير.
অর্থ: “উত্তম আমীর বা শাসক হলো উনারা যারা হক্কানী-রব্বানী, পীর-মাশায়িক ও আলিমগণ উনাদের দরবারে যাতায়াত করেন। আর নিকৃষ্ট আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ হলো তারা, যারা আমীর বা শাসকদের দরবারে দরবারে ঘুরাফেরা করে।”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “দ্বীন ইসলাম যদি কেউ পরিবর্তন করে থাকে তবে এরা হচ্ছে কতগুলি শাসক, দুষ্ট আলিম এবং বৈরাগীর দল।”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন ইসমাইল ইবনে আলিয়া নামে একজন বিখ্যাত আলিমকে কোন উচ্চ রাজপদ গ্রহণ করতে শুনলেন তখন তিনি তার নিকট এক পত্র পাঠালেন, “হে সুলতানদের মাল শিকার করানোর উদ্দেশ্যে নিজের ইলমকে বাজপাখি স্বরূপে গ্রহণকারী! তুমি দুনিয়া ও তার ভোগবিলাস লাভের জন্য এমন এক উপায় অবলম্বন করেছো যার দ্বারা তোমার দ্বীন ধ্বংস হয়ে যাবে। তুমিই ছিলে শত শত পাগলের ঔষধ। আজ তুমি নিজেই সেই দুনিয়ার জন্য পাগর।”
হযরত জুননুন মিসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “বর্তমান যুগে আবেদ ও আলিমগণ গুনাহকে হালকা মনে করে নিজেদের উদর ও কাম সেবায় নিমজ্জিত হয়ে রয়েছেন। এজন্য তারা নিজেদের দোষত্রুটি ধরতে অক্ষম তাই তারা অজ্ঞাতসারে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। তারা হালাল অন্বেষণকে পরিত্যাগ করে হারামের উপর ঝুঁকে রয়েছে। তারা আমলকে বাদ দিয়ে শুধু ইলম নিয়ে সন্তুষ্ট। কোন বিষয়কে না জানলে ‘জানি না’ একথা বলতে তাদের শরম হয়। তারা প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার দাস, শরীয়তের আলিম নয়। তারা দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে তাদের ইলমকে দুনিয়াদারদের জন্য খরচ করে থাকেন। সেজন্য তারা তাদের উপর নিজেদেরকে বড় মনে করে। আলিম ও ফক্বীহগণ উনাদের মধ্যে দুনিয়ার লোভ লালসা দেখে তারাও দুনিয়া লাভের জন্য অধিকতর আগ্রহশীল হয়ে পড়ে। এসমস্ত আলিম মহান আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বিশ্বাসঘাতক। যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের সকলের গুনাহ তাদের ঘাড়ে পড়বে। তারা ইলমকে দুনিয়া শিকারকরণের জন্য ফাঁদ ও যন্ত্র স্বরূপে গ্রহণ করেছে। (তাবাকাত ১ম খ-, ৬১ পৃষ্ঠা)
মুলত: ধর্মব্যবসায়ী, নামধারী আলিম তথা উলামায়ে ‘সূ’ ইসলামের লেবাছে বর্তমানে এত জঘন্য দুনিয়ালোভী হয়েছে, সামান্য দুনিয়ার জন্য দ্বীনকে এতবেশি খোলামেলা বিক্রি করছে যাকে বলা যায়, সাক্ষাত ক্বিয়ামতের আলামত।
নচেৎ এটা কি করে ভাবা যায় যে, আড়াই লক্ষাধিক মাদরাসা শিক্ষকদের শিক্ষাকরা তথা নেতারা একযোগে অনিমেয় দৃষ্টি দিয়ে চলছেন একজন বেগানা মহিলা প্রধানমন্ত্রীর দিকে। দু’কান খোলা রেখে আগ্রহভরে শুনে যাচ্ছেন তার বয়ান। যে বক্তব্েযর মূল ভাবই হলো পরিপূর্ণ ইসলাম ছেড়ে দিয়ে মার্কিনীদের অনুমোদনকৃত ইসলাম পালন করা তথা মডারেট হওয়া।
দাবীকৃত সুদীর্ঘ প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্যধন্য আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষকের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রেসক্রাইবড এ মডারেট ইসলামের তত্ত্ব কবুল করলেন এবং তার গুরু হিসেবে সবাই মডারেট ইসলামের প্রবক্তা। বর্তমান মহিলা প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। উচ্ছাসত কণ্ঠে তাদের পীর ছাহেবের গুণগান বর্ণনা করে বললেন, “তারা সবাই ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আর বর্তমানে এই ইসলামী শক্তির একচ্ছত্র নেত্রী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।”
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে জাতির শাসক গিয়ে পড়ে নারীর উপর সে জাতির উপর লা’নত।”
উল্লেখ্য, জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দরা এ হাদীছ শরীফ উনার দরস দিয়েই মুদার্রিছ হয়েছেন। আর আজকে তারাই মহিলা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উল্টো দরস নিয়ে তাকে ইমাম তথা নেত্রী তথা খাছ পীর ছাহেব হিসেবে কবুল করেছেন।
সুতরাং বলা চলে তারাই এ জাতির জন্য খোদায়ী লা’নত কামাবার ত্বরান্বিত ওসীলা। তাদের জন্য এ জাতির উপর এ উম্মাহর উপর খোদায়ী লা’নত বিরাজ করছে। খোদায় রহমত শূণ্য হয়ে মুসলমান মার খাচ্ছে হাটে, মাঠে, ঘাটে, বাংলাদেশ, ইরাকে, আফগানিস্তানে, ফিলিস্তীনে সব স্থানে।
মুসলিম উম্মাহর জন্য তাই অনাগত দিনে রহমত হাছিলের প্রচেষ্টায় এসব লা’নতী ওসীলা উলামায়ে ‘সূ’দের নিমূল করতে হবে।
-মুহম্মদ মাহবুবে রব্বানী।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১