-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযূর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেরই শেষ বুধবার “আখিরী চাহার শোম্বাহ” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়। এ মাসের ২৯ তারিখ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দৌহিত্র বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদত বরণ করেন। আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ ওলী, আফযালুল আওলিয়া, ক্বাইয়ূমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন।
এ মাসটি সম্মান লাভের একটি বিশেষ কারণ হলো আহলে বাইতের মহান ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাত বরণ।
আহলে বাইতের মর্যাদা-মর্তবা স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, আমি তোমাদের নিকট নুবুওওয়াত-রিসালতের দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে কোন প্রতিদান চাই না। তবে আমার ঘণিষ্ঠজন তথা আহলে বাইতগণের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে। (সূরা শূরা-২৩)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে মাযহারীতে বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটাত্মীয়, আহলে বাইত ও বংশধর বা আওলাদগণের তোমরা যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করবে, হক আদায় করবে। কেননা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হচ্ছেন শেষ নবী, তাঁর পরে কোন নবী নেই।”
আহলে বাইতের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তারমধ্যে কয়েকটি বর্ণনা এখানে পেশ করা হলোঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা আল্লাহ পাককে মুহব্বত কর, কেননা তিনি তোমাদেরকে খাদ্য সামগ্রীর মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন এবং তোমরা আমাকে মুহব্বত কর আল্লাহ পাক-এর মুহব্বতের উদ্দেশ্যে, কেননা আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব। আর আমার আহলে বাইতকে মুহব্বত কর আমার মুহব্বতে। (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (চেহারা মুবারক, আকৃতি মুবারক, অবয়ব মুবারক) মাথা মুবারক হতে বক্ষ মুবারক পর্যন্ত নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদৃশ্য। আর হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বক্ষ মুবারক হতে নিচ পর্যন্ত নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদৃশ্য। (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দু’জনই বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ। (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, তিনি কা’বা শরীফের দরজা ধরে বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাবধান! আমার আহলে বাইত তোমাদের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর কিস্তির ন্যায়। যে ব্যক্তি তাতে আরোহণ করবে সে নাজাত লাভ করবে আর যে তাতে আরোহণ করা হতে বঞ্চিত থাকবে সে ধ্বংস হযে যাবে। (মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ আহলে বাইতকে যারা মুহব্বত করবে, ইজ্জত-সম্মান করবে, খিদমত করবে তারা জান্নাতী হবে। আর উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে না, ইজ্জত-সম্মান করবে না, খিদমত করবে না তারা জাহান্নামী হবে।
কুরআন ও সুন্নাহ’র উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে আহলে বাইতগণ যে সীমাহীন ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা, বুযুর্গী ও সম্মানের অধিকারী তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সাথে সাথে এটাও ফুটে উঠেছে যে, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি ও মুহব্বত হাছিল করতে হলে প্রত্যেক উম্মতের দায়িত্ব হচ্ছে আহলে বাইতগণের প্রতি হুস্নে যন তথা সুধারণা পোষণ করা, তাঁদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা ও খিদমত করা।
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রহমত ও ইহ্সান যে, আহলে বাইত হযরত ইমাম হাসান এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা-এর খাছ উত্তরসূরী হলেন বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর যিনি মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।
অতএব, কেউ যদি সত্যিকার আহলে বাইতের মুহব্বতকারী হয়ে থাকে তাহলে তার উচিত আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে হাক্বীক্বীভাবে মুহব্বত করা, ইজ্জত-সম্মান করা, খিদমত করা এবং পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করার জন্য উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে উনার ছোহবত ইখ্তিয়ারের মাধ্যমে নিজের জাহির-বাতিন ইছলাহ করে নেয়া।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা