–হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযূর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেরই শেষ বুধবার “আখিরী চাহার শোম্বাহ” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়। এ মাসের ২৯ তারিখ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দৌহিত্র বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিষের দ্বারা শাহাদত বরণ করেন। আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ ওলী, আফযালুল আউলিয়া, ক্বাইয়ূমে আউয়াল হযরত শায়খ আহমদ ফারূক্বী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন। আইয়্যামে জাহিলীয়াতের যুগে “ছফর” মাসকে কাফির-মুশরিকরা অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করতো। এ আক্বীদা-বিশ্বাস তাদের অন্তরে বদ্ধমূল ছিল যে, সর্বপ্রকার আপদ-বিপদ, বালা-মুসিবত, রোগ-শোক, মহামারী এ ছফর মাসেই আগমন করে থাকে। ফলে এ ছফর মাসকে ঘিরে তাদের নানা প্রকার ভ্রান্ত আক্বীদা এবং কুসংস্কারমূলক কর্ম-কা-ের সূত্রপাত হয়। তাই তারা সুবিধানুযায়ী, খেয়াল-খুশির প্রেক্ষিতে এ মাসটি আগে-পিছে করতো। শরীয়তের দৃষ্টিতে যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। বর্তমানেও ছফর মাসকে ঘিরে কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা লোক সমাজে প্রচলিত রয়েছে। সে ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসের মূলোৎপাটনকল্পে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لاعدوى ولاهامةولانوءولاصفر
অর্থঃ- “সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই, তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) দ্বারা ভাগ্য নির্ধারণ ও বৃষ্টি হওয়া বা না হওয়াও ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।” (মুসলিম, মিশকাত) অপর এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কোন রোগই সংক্রামক নয়। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই এবং ছফর মাসের মধ্যেও অশুভ কিছু নেই। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে উটের এ অবস্থা হলো কেন? যে উটগুলো ছিল জংলী হরিণের মত তরতাজা, যেগুলো ময়দানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতো। এমতাবস্থায় কোথা হতে এক চর্মরোগাক্রান্ত উট এসে সে উটের পালে মিলিত হলো এবং উটগুলোকে চর্মরোগী বানিয়ে দিলো। ফলে এ উটগুলোও খুজলীযুক্ত হয়ে গেল। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আচ্ছা তাহলে প্রথম উটটির চর্মরোগ কোথা থেকে আসলো? অর্থাৎ প্রথম উটটি যেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছিল ঠিক পরবর্তী উটগুলোও সেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছে।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ-৩৯১। স্মর্তব্য যে, চিকিৎসা শাস্ত্রের পাঠ্যসূচীতে অদ্যাবধি ইসলামী আক্বীদা সংক্রান্ত ইল্ম না থাকার কারণে অনেক সময় কোন কোন চিকিৎসক কিছু কিছু রোগ সম্পর্কে যেমন- চর্মরোগ, খুজলী-পাঁচড়া, কুষ্ঠ, কলেরা-বসন্ত ইত্যাদিকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে বলে অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। যা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং এরূপ ভ্রান্ত আক্বীদা হতে বিরত থাকা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।
আরো অনেক ঈমান-আক্বীদা ধ্বংসকারী কূফরীমূলক ভ্রান্ত আক্বীদা ও কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, যা নিম্নরূপ। উদাহরণতঃ- (১) রাস্তা চলার সময় কোন প্রাণী যদি ডান থেকে রাস্তা অতিক্রম করে বাম দিকে যায় তাহলে যাত্রা শুভ, কল্যাণকর হবে। আর যদি বিপরীত দিকে যায় তাহলে কুলক্ষণে বা অমঙ্গল হবে, এরূপ বিশ্বাস করা। (২) শান্তির প্রতীক বা শান্তি লাভের আশায় পাখি উড়িয়ে দেয়া। (৩) সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি কোন বন্ধ্যা ব্যক্তিকে দেখতে পায়, কিংবা খালী কলস দেখতে পায় তাহলে সারাদিন অমঙ্গলে অতিবাহিত হবে বা কোন কল্যাণ অর্জিত হবেনা বলে ধারণা করা। (৪) শনিবার এবং মঙ্গলবার ইন্তিকাল করাকে কুলক্ষণ এবং জাহান্নামী হওয়ার আলামত বলে মনে করা যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কারের অন্তর্ভূক্ত। কেননা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিদ্দীকে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মঙ্গলবার ইন্তিকাল করেন। আর দ্বিতীয় ও চতুর্থ খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শনিবার ইন্তিকাল করেন। (৫) পরীক্ষার পূর্বক্ষণে ডিম বা কলা খাওয়াকে পরীক্ষা পাশের প্রতিবন্ধক মনে করা। (৬) সময়কে গালি দেয়া। (৭) জোরে বাতাস প্রবাহিত হতে দেখলে বাতাসকে গালি দেয়া। (৮) আকাশে দীর্ঘ সময় মেঘ থাকতে দেখলে মেঘকে গালি দেয়া ইত্যাদি। (৯) ঘুম থেকে উঠে পেঁচা দেখা কিংবা রাতে পেঁচার ডাক শোনা। (১০) বিশেষ তারকা বা গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় বলে মনে করা। আল্লাহ্ পাক! আমাদের সকলকে ছফর মাসের যাবতীয় ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমল হতে মুক্ত রেখে ছহীহ্ আক্বীদা ও আমলের উপর দায়িম ক্বায়িম থাকার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –
মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ