মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৩৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযূর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ মাসেরই শেষ বুধবার “আখিরী চাহার শোম্বাহ” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়।

এবং এ মাসের ২৯ তারিখ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দৌহিত্র বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিষের দ্বারা শাহাদত বরণ করেন।

আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ ওলী, আফযালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, হযরত শায়খ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন।

হাদীছ শরীফের ছহীহ্ কিতাব “আবু দাউদ শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এ উম্মতের (হিদায়েতের) জন্য প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুভাগে এমন একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন যিনি দ্বীনের তাজদীদ (সংস্কার) করবেন।”

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষণা অনুযায়ী যিনি একাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদরূপে আবির্ভূত হন তিনি হচ্ছেন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহীর মুলোৎপাটন করেছিলেন। সে সময় তিনি ইচ্ছা করলে অনায়েশেই দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করতে পারতেন। সে সুযোগ তাঁর হাতের মুঠোর মধ্যে এসে গিয়েছিলো; কিন্তু সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ মাত্রও করেননি বরং দিল্লীর প্রতাপশালী সম্রাট জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান এবং রাজ্যের সকল আমীর-ওমরাহগণ তাঁকে কদমবুছী করতে পারলে নিজেদের ধন্য মনে করতেন। তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কখনও সম্রাটের দরবারে গমন করতেন না। তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরকে ইসলামী বিধান অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করার কাজে সহায়তা করার ও উপদেশ প্রদান করার জন্য কয়েকবার সম্রাটের দরবারে গিয়েছিলেন।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ করে চলতেন। কথাবার্তা, চলাফেরা, আচার-ব্যবহার, আহার-নিদ্রা, ইবাদত-বন্দিগী ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সুন্নতের পুরোপুরি অনুসরণ করে চলতেন। সুন্নত তরীক্বার বহির্ভূত কোন নীতি বা আদর্শের অনুসরণ করার কথা তিনি কখনও কল্পনাও করতেন না।

তিনি কিরূপভাবে এবং কত কঠোরভাবে সুন্নতের অনুসরণ করতেন তা নিম্নে বর্নিত একটি ঘটনা হতে সহজেই অনুমান করা যায়।

একবার তিনি তাঁর এক খাদিমকে বললেন, অমুক স্থানে লবঙ্গ আছে, কয়েকটি লবঙ্গ আমার জন্য নিয়ে আস। খাদিম ছয়টি লবঙ্গ এনে তাঁর হাতে দিলো। তিনি বললেন, আমাদের ছূফীদের সম্বন্ধে তোমার এখন পর্যন্ত কি এতটুকু জ্ঞানও হয়নি যে, আমরা জোড় অপেক্ষা বেজোড় সংখ্যাকে অধিক পছন্দ করে থাকি। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কোন ব্যাপারে বেজোড় সংখ্যাই অধিক পছন্দনীয়। কেননা, আল্লাহ পাক স্বয়ং বেজোড় এবং তিনি বেজোড় সংখ্যাকেই পছন্দ করে থাকেন এবং হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় এ নীতিরই অনুসরণ করে গিয়েছেন।

তিনি নিজে যেমন সুন্নতের পুরোপুরি অনুসরণ করতেন তেমনি অন্যকেও সুন্নতের অনুসরণ করার জন্য সর্বদা তাকিদ করতেন। তিনি একবার এক মুরীদকে চিঠিতে জানালেন, প্রিয় বৎস! ক্বিয়ামতের দিন একমাত্র হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণই কাজে আসবে। জয্বা, কাশফ্, কারামত, ইশারাত প্রভৃতি যদি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের অনুসরণের সাথে সম্পন্ন করা হয়, তবে তা হবে বড়ই  সৌভাগ্যের বিষয়। আর যদি তা না হয় তবে সবই ভেল্কীবাজী।

তিনি আরো বলেন, মানুষ কেবলমাত্র হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের অনুসরণ করেই আল্লাহ পাক-এর প্রকৃত বান্দায় পরিণত হতে পারে। সুন্নতের অনুসরণ মানুষকে শুধু গৌরবান্বিতই করেনা, বরং তাকে চির মহিমান্বিত করে মুহব্বতের দরজায় পৌঁছিয়ে দেয়।

এ মর্মে আল্লাহ পাক বলেন,

فاتبعونى يحببكم الله.

“তোমরা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ কর তবেই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)

যারা সুন্নতের প্রকৃত অনুসারী তারাই সত্যিকার আলিম এবং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্যিকার নায়িব ও ওয়ারিছ। পূর্ব যামানায় উলুল আ’যম নবী-রসূলগণও আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণের জন্য ঐকান্তিক আগ্রহ প্রকাশ করে গেছেন।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর মত জলীলুল ক্বদর নবী জীবিত থাকলে তিনিও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের অনুসরণ করে চলতেন।”

একমাত্র সুন্নতের অনুসরণের জন্যেই উম্মতে মুহম্মদী অন্যান্য সকল উম্মত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মর্যাদা লাভ করবে এবং সকলের পূর্বে বেহেশতে প্রবেশ করবে।

সুন্নতের অনুসরণ করার নামই তাক্বওয়া। যিনি যতবেশী সুন্নতের অনুসরণ করেন তিনি ততবড় মুত্তাক্বী এবং আল্লাহ পাক-এর ততবড় ওলী।

আর যামানার মুজাদ্দিদগণই সর্বাধিক সুন্নতের পাবন্দি করে থাকেন এবং তাঁদের ছোহবতে যারা যান তাদের পক্ষেই কেবল সেই সুন্নতের আমল করা সহজসাধ্য হয়ে যায়।

যার বাস্তব নমুনা আমরা দেখতে পাই বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর যিনি মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মুরীদ-মুতাক্বিদ ও মুহিব্বিনগণের মধ্যে। আল্লাহ পাক সকলকেই সেই মুজাদ্দিদে আ’যমের ছোহবত লাভে ধন্য করুন। (আমীন)

মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –

 মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা