আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযূর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ মাসেরই শেষ বুধবার “আখিরী চাহার শোম্বাহ” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়। এবং এ মাসের ২৯ তারিখ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দৌহিত্র বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিষের দ্বারা শাহাদত বরণ করেন। আহলে বাইত, আওলাদে রসূলগণের দুশমনদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হোক। আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ ওলী, আফযালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, হযরত শায়খ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন। তিনি এমন এক মহান ওলী যার সৃষ্টির সাথে মিশ্রিত রয়েছে খামিরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বর্ণিত আছে যে, তিনি যমীনে তাশরীফ আনার পূর্ববর্তী সময়ে এক মহা প্লাবন হয়। সেই প্লাবনে রওযা শরীফের যেই মাটি মুবারকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শায়িত রয়েছেন সেই মাটি মুবারকের কিছু অংশ সিরহিন্দ শরীফে যেখানে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ অবস্থিত সেখানে ভেসে আসে। তরীক্বার নিসবতের দিক থেকে তাঁর সম্পর্ক আফযালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে। তাঁর খান্দান হচ্ছে ফারুক্বী। অর্থাৎ তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ফারুক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বংশধর। হাদীছ শরীফের ছহীহ্ কিতাব “আবু দাউদ শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এ উম্মতের (হিদায়েতের) জন্য প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুভাগে এমন একজন ব্যক্তি অর্থাৎ মুজাদ্দিদ পাঠাবেন যিনি দ্বীনের তাজদীদ (সংস্কার) করবেন।”
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কেবল শতাব্দীর ‘মুজাদ্দিদই’ ছিলেন তা নয় বরং তিনি ছিলেন সহস্রাব্দের ‘মুজাদ্দিদ।’ এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আবির্ভাবের ইঙ্গিত প্রদান করে বলেছেন যে, “হিজরতের একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আল্লাহ্ পাক এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি একটি বৃহৎ নূর, তাঁর নাম হবে আমার নামের অনুরূপ, দুই অত্যাচারী বাদশাহ্র মধ্যবর্তী সময়ে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং তাঁর শাফায়াতে অসংখ্য লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে।”
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন এক মুজাদ্দিদ যার তাজদীদের প্রভাবে বর্তমান কালের উলামায়ে ‘ছূ’দের অনুসৃত হারাম, নাজায়িয, কুফরী ও শিরকীতে পরিপূর্ণ দ্বীনে জুমহুরীর ন্যায় সম্রাট আকবরের মদদপুষ্ট ও তার রাজনীতির সাথে জড়িত আবুল ফযল, ফৈজী, মোল্লা মোবারক নাগরী ইত্যাদি উলামায়ে ‘ছূ’দের দ্বারা প্রবর্তিত তাবৎ হারাম, নাজায়িয, কুফরী ও শিরকীতে ভরপুর দ্বীনে ইলাহীর মূলোৎপাটন হয় এবং ইসলামী আহ্কাম নতুন করে জারী হয়।উল্লেখ্য, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতল্লাহি আলাইহি-এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক ভারত উপমহাদেশে মুজাদ্দিদিয়াতের দ্বারোদঘাটন করেন। তাঁর পর হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেবে আগমণ করেন হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেবে আগমন করেন, মুজাদ্দিদে আ’যম হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান মুদ্দা জিল্লুহুল আলী পীর ছাহেব ক্বিবলা, রাজারবাগ শরীফ। ‘মুজাদ্দিদ’ এটি এমন এক নিয়ামত যা কোন সাধনালব্ধ জিনিষ নয়। নুবুওওয়াত যেমন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ দান, মুজাদ্দিদিয়াতও তেমনি।
মুজাদ্দিদগণের প্রত্যেকেরই জীবনী মুবারকে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক তাঁদের প্রতি এই বলে ইলহাম করেছেন যে, “আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম এবং যারা মধ্যস্থতায় অথবা বিনা মধ্যস্থতায় আমাকে পাওয়ার জন্য আপনাকে ওসীলা গ্রহণ করবে তাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম।” (সুবহানাল্লাহ্) প্রত্যেকের উচিৎ যামানার মহান মুজাদ্দিদের ছোহবত গ্রহণ করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত-মা’রিফত লাভ করা। (আমীন)
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –
মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা