-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযূর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেরই শেষ বুধবার “আখিরী চাহার শোম্বাহ” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়। এ মাসের ২৯ তারিখ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দৌহিত্র বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদত বরণ করেন। আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ ওলী, আফযালুল আওলিয়া, ক্বাইয়ূমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন।
এ মাস বান্দার আক্বীদা শুদ্ধ করার মাস। আক্বীদার শুদ্ধতাই ঈমানের শুদ্ধতা। যার আক্বীদা শুদ্ধ সেই মু’মিন বা মুসলমান। যার আক্বীদা শুদ্ধ নয় সে মু’মিন ও মুসলমান থেকে খারিজ তথা কাফির কিংবা মুরতাদ।
গ্রীশচন্দ্র সেন যাকে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে অনুষ্ঠান করে মাওলানা উপাধি দেয়া হয়েছিল। সে বাংলা ভাষায় প্রথম ‘কুরআন শরীফের’ অনুবাদ করে, হাদীছ শরীফের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘মিশকাত শরীফের’ অনুবাদ করে, আওলিয়ায়ে কিরামের জীবনীগ্রন্থ ‘তাযকিরাতুল আওলিয়া’ কিতাবের অনুবাদ করে ইত্যাদি বেশ কিছু দ্বীনি খিদমত বা আমল করা সত্বেও সে কুফরীর গ্লানী নিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয় এবং তার চির আবাসস্থল হয় জাহান্নাম।
এ থেকে ইবরত-নছীহত হাছিল করার বিষয় রয়েছে। তাহলো- কেউ কুরআন শরীফের তাফসীর করলেই, তাফসীর পড়ালেই, তাফসীর লিখলেই, কিংবা হাদীছ শরীফের কিতাব বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ইত্যাদি পড়লেই, পড়ালেই, অনুবাদ করলেই, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, শাইখুল হাদীছ, শায়খুত্ তাফসীর, মুফতী, মাওলানা, পীর, ছূফী, দরবেশ, আমীর, মুরুব্বী ইত্যাদি যশ-খ্যাতি লাভ করলেই সে নাজাত পাবেনা যদি তার আক্বীদা বিশুদ্ধ না থাকে। অর্থাৎ যতই নেক আমল করুকনা কেন যদি আক্বীদা বিশুদ্ধ না থাকে তবে চির জাহান্নামী হবে। এর মেছাল হচ্ছে ‘কাদিয়ানী’।
তাই সকলকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের যে আক্বীদা (বিশ্বাস) বর্ণিত রয়েছে সে আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। যেমন
ড জিন-ইনসানের সৃষ্টিকর্তা আল্লহ পাক এবং আল্লাহ পাকই জীন-ইনসানের চলার জন্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মাধ্যমে ওহীর বিধান নাযিল করেছেন সে বিধানকে উপেক্ষা করে মানবরচিত গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদ মান্য করা প্রকাশ্য কুফরী।
ড হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ প্রত্যেকেই ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাঁরা প্রত্যেকেই মা’ছুম। প্রত্যেকেই ভুল-ত্রুটি, গুনাহখতা, এমনকি অপছন্দনীয় কাজ করা থেকেও পবিত্র। তাঁরা বিলাদত শরীফ থেকেই নবী হিসেবে মনোনীত। চল্লিশ কিংবা এর কম-বেশি বছরে তাঁদের নুবুওয়াত প্রকাশ করাটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তাঁদের পুরো যিন্দিগী মুবারকই নুবুওওয়াতী ও রিসালতী যিন্দিগী। তাঁদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী বলতে কিছু নেই। কেননা তাঁদের মুবারক স্বপ্নগুলোও ওহীর অন্তর্ভুক্ত।
ড হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ প্রত্যেকেই আলিম ও হাদী এবং প্রত্যেকেই স্ব স্ব মাযহাবের ইমাম। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পরে তাঁরাই সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ। তাঁদের কোন একজনের উপর পূর্ববতী কিংবা পরবর্তী কাউকে শ্রেষ্ঠ মনে করা এবং তাঁদের সমালোচনা করা কুফরী।
ড চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই হক্ব এবং শরীয়তের দলীলের উপর প্রতিষ্ঠিত। মাযহাব অস্বীকার করার অর্থ শরীয়তকেই অস্বীকার করা। মাযহাবের খিলাফ চলা গোমরাহী। যুগে যুগে যাঁরাই ওলী-আওলিয়া, গাউছ, কুতুব, আবদাল, আওতাদ, ইমাম, মুজাদ্দিদ হয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই উল্লেখিত কোন এক মাযহাবের মুক্বাল্লিদ ছিলেন। মাযহাবের অনুসরণ ব্যতিরেকে কেউই কিছু হতে পারেননি।
ড ‘ওলীআল্লাহ’ অর্থ আল্লাহ পাক-এর বন্ধু। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত ও পথের খিলাফ চলে কেউ ওলীআল্লাহ হতে পারে না। নফসের তাবেদার, অর্থ ও ক্ষমতা লোভী ব্যক্তি আদৌ ওলীআল্লাহ নয়। ওলীয়ে শয়তান হতে পারে। সত্যিকার ওলীআল্লাহ অতীতে যেমন ছিলেন, বতমানেও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। তবে অতীতের তুলনায় আখিরী যামানায় তাঁদের সংখ্যা একেবারেই কম। সুতরাং যাচাই-বাছাই করে তাঁদের খুঁজে নিতে হবে। ঢালাওভাবে যাকে তাকে ওলীআল্লাহ ভেবে তাদের কাছে গিয়ে ঈমান-আক্বীদা ও আমল নষ্ট করা বিবেকবানদের কাজ নয়।
স্মর্তব্য, মাষ্টারের ছেলে হলেই মাষ্টার হয়না। মাষ্টার হওয়ার জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। ঠিক ওলীআল্লাহ হওয়ার জন্যও যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। আক্বীদা ও আমল শুদ্ধির বিষয় রয়েছে। ইল্মে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ হাছিলের বিষয় রয়েছে। শরীয়ত ও সুন্নতের পাবন্দির বিষয় রয়েছে। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নিসবত ও তায়াল্লুকের বিষয় রয়েছে। সর্বোপরি আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে খিলাফত দানের বিষয় রয়েছে। প্রকৃত ওলীআল্লাহগণকে তা’যীম বা সম্মান করা, মুহব্বত করা ঈমানের পরিচয়। তাঁদের বিরোধিতা করা ঈমানহারা ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। যে বা যারাই তাঁর বিরোধিতা করেছে সে বা তারাই বদ আমল ও বদ আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত হয়ে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা