-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
হিজরী সালের ৬ষ্ঠ মাস মাহে জুমাদাল উখ্রা। এ মাসটিও উম্মাহ্র জন্য স্মরণীয় মাস। কারণ এ মাসটিতে সংঘটিত হয়েছে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের মুবারক বিলাদত ও ইন্তিকাল। বিশেষতঃ যিনি ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সাইয়্যিদ হযরত আফদ্বালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর ইন্তিকাল মুবারক এ মাসেই হয়েছে। উল্লেখ থাকে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পরে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । ছাহাবী বা ছাহাবা শব্দটির উৎপত্তি ‘ছোহবত’ (সঙ্গ লাভ) থেকে। যাঁরা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত গ্রহণ করেছেন তাঁরাই ছাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন। তাঁদের প্রতি আল্লাহ পাক নিজের সন্তুষ্টি দানের ঘোষণা করেছেন। এমনকি যারা ছাহাবীগণকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে তাঁদের প্রতিও তিনি স্বীয় সন্তুষ্টি ও জান্নাত দানের ওয়াদা করেছেন। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ও ফতওয়া হলো, ছাহাবীগণের প্রতি হুসনে যন বা সু ধারণা পোষণ করা এবং তাঁদেরকে মুহব্বত করা জুয্য়ে ঈমান বা ঈমানের অঙ্গ। তাঁদেরকে অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ, বিরোধিতা ও সমালোচনা করা কুফরী। হযরত ওয়ায়িস আল্ ক্বারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লৗাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানা পেয়েছেন এবং সে যামানাতেই ঈমানে দীক্ষিত হয়েছেন তারপরও তিনি ছাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেননি। তার একমাত্র কারণ হলো তিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত পাননি। কাজেই ছোহবতের গুরুত্ব অত্যধিক। ছোহবত ব্যতীত ছাহাবী, তাবিয়ী, ওলী কোনটিই হওয়া যায়না। তাই আল্লাহ পাক ছোহবত গ্রহণ করার জন্য বান্দাকে আদেশ করেছেন। যেমন কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصدقين.
অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং ছাদিক্বীন তথা ওলীগণের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবা-১১৯) ছাদিক্বীনগণের পরিচয় সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من ذكركم الله رؤيته وزاد فى علمكم منطقه وذكركم فى الاخرة علمله.
অর্থাৎ-“যাঁকে দেখলে আল্লাহ পাক-এর কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি পায় এবং যার আমল দেখলে পরকালের আমল করতে ইচ্ছা হয়।” (আহমদ, ক্বাবাস-১৭৮) ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছাদিক্বীনের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন,
الزاهد فى الدنيا والراغب فى الاخرة والبصير بذنبه والمدائم على عبادة ربه والورع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعته.
অর্থঃ- “ছাদিক্বীন ঐ ব্যক্তি যিনি দুনিয়া থেকে বিরাগ, আখিরাতের প্রতি ধাবিত, গুনাহর প্রতি সতর্ক, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের ইবাদতে মশগুল, সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানদের মান-সম্ভ্রব নষ্ট করা হতে বিরত, তাঁদের মালের প্রতি নির্লোভ এবং নিজের অধীনস্থদেরকে নছীহতকারী।” অর্থাৎ উল্লিখিত গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তি ছাদিক্বীনের অন্তর্ভুক্ত। (হাশিয়া-বুখারী) অতএব, প্রত্যেকের উচিত আল্লাহ পাক-এর আদেশ পালনার্থে ছাদিক্বীন ব্যক্তির পরিচয় জেনে তাঁর ছোহবত গ্রহণ করা। অন্যথায় আল্লাহ পাক-এর হাক্বীক্বী বান্দা এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী উম্মত হওয়া কখনই সম্ভব হবেনা। বলার অপেক্ষা রাখেনা, যাঁরা যামানার মুজাদ্দিদ, ইমাম নিঃসন্দেহে তাঁরা ছাদিক্বীনের অন্তর্ভূক্ত। আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে ছাদিকীন বা ওলীগণের ছোহবত গ্রহণ করে খালিছ বান্দা ও খালিছ উম্মত হওয়ার তাওফীক দান করুন। (আমীন
মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা