-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মাহে জুমাদাল উখ্রা হিজরী সনের ষষ্ঠ মাস। এ মাসেই সাইয়্যিদুছ্ ছাহাবা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওফাত লাভ করেন। কাজেই এ মাস ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুবারক ‘সাওয়ানেহ উমরী’ আলোচনার খাছ মাস।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ বেমেছাল মর্যাদার অধিকারী। তাঁদের মর্যাদার উৎস হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত।
ছাহাবীগণের মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন শরীফে বহু আয়াত শরীফ বর্ণিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
رضى الله عنهم ورضوا عنه.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা বাইয়্যিনাহ-৮)
السبقون الاولون من المهجرين والا نصار والذ ين اتبعوهم با حسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعد لهم جنت تجرى تحتها الاتهر خلدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم.
অর্থঃ- “ঈমান ও আমলে অগ্রগামী, সর্বপ্রথম স্থান অধিকারী মুহাজির ও আনছার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। এবং যারা তাঁদেরকে অর্থাৎ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে উত্তমভাবে ইত্তিবা বা অনুসরণ করবে আল্লাহ পাক তাঁদের প্রতিও সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ পাক তাঁদের জন্য এমন জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত থাকবে। এটা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ হতে তাঁদের প্রতি মহান প্রতিদান।” (সূরা তওবা-১০০)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى سعيد الخد رى رضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسبوا اصحا بى فلو ان احد كم انفق مثل احد ذهبا ما بلخ مد احد هم ولا نصيفه.
অর্থঃ- “হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালি দিওনা। যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় দান কর তবুও ছাহবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের এক মুদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মুদ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমান ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সম্পর্কে উপরোল্লিখিত ঘোষণা এবং প্রশংসার পর কোন মুসলমানই তাঁদের সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা বা সমালোচনা করতে পারে না।
অথচ আজকাল অনেকেই হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের এবং বিশেষ করে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ব্যাপক সমালোচনা করে থাকে।
তাঁদের সমালোচনা করতে গিয়ে যুক্তি পেশ করে বলে যে, যদি তাঁরা হক্বের উপর থাকতেন, তবে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর জিহাদ হলো কেন? দু’দলের মধ্যে একদল নিশ্চয় হক্ব এবং অপর দল নাহক্ব।
মূলতঃ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের উক্ত যুক্তি মোটেও শুদ্ধ নয়। তার প্রমাণ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে উল্লেখ করেছেন।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل كل يعمل على شا كلته فر بكم اعلم بمن هو اهدى سبيلا.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, প্রত্যেকেই তার অভ্যাস বা আদত অনুযায়ী আমল করে থাকে। তবে তোমাদের রব ভালো জানেন কে অধিক সুপথে রয়েছে।” (সূরা বণী ইসরাঈল-৮৪) এ আয়াত শরীফ হতে মুফাস্সিরীনে কিরাম দু’টি পথ নির্ধারণ করেছেন। একটি হলো সুপথ, অপরটি হলো অধিক সুপথ।
কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের মধ্যে যে জিহাদ হয়েছে, ইখতিলাফ বা মতবিরোধ হয়েছে, তাতে কেউ সুপথে ছিলেন আর কেউ অধিক সুপথে ছিলেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই হক্বের মধ্যে ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার বেছাল শরীফের পরে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি আল্লাহ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি।” আল্লাহ পাক আমাকে বললেন, “হে হাবীব, নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো আছে। সুতরাং, তাঁদের যেকোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ তাঁদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য।” অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ প্রত্যেকেই তারকা সাদৃশ্য। তাঁদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়াত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)
বুঝা গেল যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইখতিলাফও হিদায়াতের কারণ এবং আল্লাহ পাক-এর নিকট গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ তাঁদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি সে বিষয়েই হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে।
অএতব, ইতিহাসের বিশ্লেষণে কোন মতেই কুরআন-সুন্নাহ্কে বিসর্জন দেয়া চলবে না। এক কথায় বিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ্ হবে বিচারের মানদণ্ড, ইতিহাস নয়।
মূলতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী, সমালোচনাকারী ব্যক্তি কাফির।
আল্লাহ পাক বলেন,
ليغيظ بهم الكفار.
অর্থঃ- “কাফিররাই তাঁদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতহ্-২৯)
মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা