-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মাহে যিলক্বদ হিজরী সনের একাদশতম মাস। এ মাসেই হজ্জে গমনেচ্ছুক ব্যক্তিগণ হজ্জের পুরো প্রস্তুতি গ্রহণপুর্বক হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে রওয়ানা করে থাকেন।
হজ্জ দ্বীন ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের একটি। স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর কালাম পাকে এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ পাকে হজ্জের বিধি-বিধান সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। সেই সমষ্টিগত বর্ণনা থেকে উম্মতে মুহম্মদীর প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে শর্ত করা হয়েছে পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তার।
পথের সামর্থ্য বলতে “সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকা এবং যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকা।” আর পথের নিরাপত্তা বলতে “সুস্থ থাকা এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক-এর জন্যেই মানুষের প্রতি হজ্জ করা ফরয- যার পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তা রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান-৯৭)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালন করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭)
আয়াত শরীফে স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, হজ্জ করতে গিয়ে যদি ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকে তথা হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে হারাম ও কুফরী কাজ করতে হয় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। যেমন ছবি তোলা, পর্দা লঙ্ঘণ করা উভয়টি শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ এবং চরম ফাসিকী ও নাফরমানীমূলক কাজ। সুতরাং হজ্জের অজুহাতে এই হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ করা কখনই শরীয়তসিদ্ধ নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এ হারাম কাজে বাধা প্রদান করা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন তা যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেন অন্তরে তা ঘৃনা করে দূরে সরে থাকে। আর এটাই সবচেয়ে দূর্বল ঈমানের পরিচয়। এরপর ঈমানের আর শরিষা পরিমাণও অবশিষ্ট নেই। (মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ ক্ষমতা থাকলে প্রথমত: শক্তি বা বল প্রয়োগ করে ছবি ও বেপর্দা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে যবানে বা মুখে বলতে হবে বা জানিয়ে দিতে হবে যে, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া হারাম। হজ্জসহ সর্বক্ষেত্রে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া হারাম ও কবীরা গুণাহ। জায়িয মনে করা কুফরী। কাজেই মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ এবং হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্থান থেকে সি. সি. টিভি ও ক্যামেরা সরিয়ে নেয়া হোক। তৃতীয়তঃ যদি যবানে বলার ক্ষমতাও না থাকে তাহলে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়াকে অন্তর থেকে হারাম ও গুণাহ্র কাজ স্বীকার করে তা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। আর এটা হচ্ছে একেবারে দূর্বল ঈমানদারের পরিচয়। এরপরে ঈমানের আর কোন স্তর নেই। অর্থাৎ যারা হাতেও বাধা দিবে না, যবানেও প্রতিবাদ করবে না এবং সেই হারাম কাজকে অন্তরে খারাপ জেনে বিরত বা দূরেও সরে থাকবে না বরং সেটাকে সমর্থন করবে এবং তাতে জড়িত হবে হাদীছ শরীফ মোতাবেক তাদের ঈমান নেই। তাহলে ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা কি করে জায়িয হতে পারে?
অতএব, কেউ যদি সত্যিই শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী হজ্জ করতে চায় তাহলে তাকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষণাকৃত ছবি তোলা ও বেপর্দাসহ সর্বপ্রকার হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি হজ্জ করতে গিয়ে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া অথবা অন্য কোন হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে হজ্জ ফরয হবে না। যেমন কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয়, আর তার যদি কোন মাহ্রাম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ মাহ্রাম ব্যতীত হজ্জে গেলে তার দ্বারা হারাম কাজ হওয়ার আশংকা বিদ্যমান।
কেউ কেউ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে, “জরুরত বা মা’জুরতার কারণে হারামটা মুবাহ হয়ে যায়। তাই হজ্জের জন্য ছবি তুললে কোন গুণাহ হবে না। কারণ তা জরুরতবশতঃ তোলা হয়। এর জবাবে বলতে হয় যে, হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের উক্ত বক্তব্য আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হজ্জের জন্য ছবি তোলাটা কখনই মা’জুরের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা হজ্জ করার জন্য সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে বাধ্য করা হয়নি এবং ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকায় যেখানে হজ্জই ফরয নয় সেখানে কি করে সে মা’জুর হলো? এখন কোন মহিলা যদি বলে, আমার সম্পদ রয়েছে কিন্তু মাহরাম নেই এক্ষেত্রে আমি মা’জুর, সুতরাং মাহরাম ছাড়াই হজ্জ করবো। তার এ কথা কি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে? কস্মিনকালেও নয়। কারণ মাহ্রাম ছাড়া তার উপর হজ্জই ফরয নয়। আর যদি হজ্জ ফরয না হয় তাহলে সে মা’জুর হলো কিভাবে? বরং কোন সরকারের পক্ষ থেকে হজ্জের ক্ষেত্রে ছবি তোলাকে আবশ্যক করাটা হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি কারণ বা বাধা। যেটা হাদীছ শরীফে ‘সুলত্বানে জায়ির বা যালিম শাসক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা