-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
আরবী বর্ষের পঞ্চম মাস জুমাদাল উলা। বারটি মাসের মধ্যে জুমাদা নামের মাস দু’টিই অর্থাৎ ‘জুমাদাল উলা’ এবং ‘জুমাদাল উখরা’; শাব্দিক গঠন অনুযায়ী মুয়ান্নাছ বা স্ত্রীলিঙ্গরূপে ব্যবহৃত হয়।
এ মাস আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য, খুলাফা-ই-রাশিদার চতুর্থ খলীফা, বেহেশ্তের সুসংবাদপ্রাপ্ত, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজ্হাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বিলাদত বা যমীনে আবির্ভূত হওয়ার মাস। তিনি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের দশ বছর পূর্বে যমীনে তাশরীফ আনেন।
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিভিন্ন দিক থেকে মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী। আলোচ্য প্রবন্ধে কেবল আহলে বাইতের উপর যৎ সামান্য আলোচনা করা হলো।
আহলে বাইতের ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
قل لااسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, (হে লোক সকল!) আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনা। তবে আমার আহ্ল ও ইয়ালগণের সাথে তোমরা সদাচরণ করবে।” (সূরা শুরা/২৩)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন
تعالوا ندع ابنائنا وابنائكم.
(আস, আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানগণকে ও তোমাদের সন্তানগণকে) আয়াত শরীফ নাযিল হলো তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ডাকলেন এবং বললেন, ‘আয় আল্লাহ্ পাক! এরা সকলে আমার আহলে বাইত।” (মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, “যে কেউ তাঁদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার সাথে শত্রুতা পোষণ করি। আর যে কেউ তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করে আমি তার সাথে সদ্ব্যবহার করি।” (তিরমিযী)
উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বর্ণনার দ্বারা বুঝা গেল, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হলেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহ্ল তথা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত।
মূলতঃ এ চারজন মহান ব্যক্তির দ্বারাই আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধর তথা আওলাদগণের সিলসিলা যমীনে জারী রয়েছে।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সাইয়্যিদা হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। আর হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছেন তাঁদের সন্তান। এ দু’জনই হচ্ছেন বেহেশ্তের যুবকদের সাইয়্যিদ। দু’জনের বংশ পরস্পরায় যারা যমীনে এসেছেন, আসছেন ও আসবেন তাঁরাই ‘সাইয়্যিদ’ নামে পরিচিত এবং তাঁরাই ‘আওলাদে রসূলের’ অন্তর্ভুক্ত।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان اولادى كسفينة نوح من دخلها نجا.
অর্থঃ- “আমার আওলাদগণ হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিস্তির ন্যায়। যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করেছে বা উঠেছে সে নাযাত পেয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার আওলাদগণকে মুহব্বত করবে সে নাযাত পেয়ে যাবে।” (র্সিরুশ্ শাহাদাতাইন)
আওলাদে রসূলগণ সম্পর্কে কোন প্রকার চু’চেরা করা যাবেনা। মনে রাখতে হবে, সারাবিশ্বে হাজার হাজার আওলাদে রসূল রয়েছেন এবং ক্বিয়ামত অবধি থাকবেন। আওলাদে রসূলগণকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে স্বয়ং নবীয়ে দু’জাহান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্বংশ জ্ঞান করা, যা কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। তবে কেউ মিথ্যা আওলাদে রসূল দাবী করলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্ পাক-এর খাছ করম ও রহম যে, বর্তমান যামানার যিনি মুজাদ্দিদ রাজারবাগ শরীফের হযরত মুরশিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি পিতা-মাতা উভয়ের দিক থেকেই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ আওলাদ তথা বংশধর। তাঁর পূর্বপুরুষ সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে মদীনা শরীফ থেকে আজমীর শরীফ, সেখান থেকে দিল্লী হয়ে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে সোনারগাঁও এবং পরে সেখান থেকে আড়াইহাজার প্রভাকরদী শরীফে আসেন। প্রত্যেক স্থানে তাঁদের খানকা শরীফ ও হিদায়েতের মারকায গড়ে উঠে এবং মাযার শরীফও হয়। তাঁরা যে পাথরে ভেসে এসেছিলেন তা এখনও সংরক্ষিত আছে। আয় আল্লাহ্ পাক! আহলে বাইত ও আওলাদে রসূলগণের মুহব্বত আমাদের অন্তরে পরিপূর্ণ করে দিন এবং তাঁদেরকে আমাদের নাযাতের উছীলা করুন।