-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الله يجتبى اليه من يشاء ويهدى اليه من ينيب.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা তাঁর দিকে মনোনীত করেন এবং যে তাঁর দিকে রুজু হয় তিনি তাকে পথ প্রদর্শন করেন।” (সূরা শূরা- ১৩)
এ আয়াত শরীফ-এর পরিপূর্ণ মেছদাকরূপে আমরা যেসকল ওলী আওলিয়া-ই-কিরামগণকে দেখতে পাই তারমধ্যে একজন হচ্ছেন, আল্লাহ পাক-এর বিশিষ্ট ওলী আরিফ বিল্লাহ হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি জুমাদাল উলা মাসের ১৮ তারিখ আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে গিয়ে মিলিত হন।
বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইবরাহীম আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে ছিলেন বলখের প্রতাপশালী বাদশাহ। বলখ ছিল এক বিশাল রাজ্য। তিনি যখন সফরে বের হতেন, তখন ৪০জন করে স্বর্ণের ঢাল, রৌপ্যের গুর্জধারী সৈন্য তাঁর অগ্রে ও পশ্চাতে দেহরক্ষী রূপে মোতায়েন থাকত।
একদা শাহী মহলে গভীর রাতে তিনি সুকোমল শয্যাযুক্ত পালঙ্কে শায়িত ছিলেন, এমন সময় ছাদের উপর লোক চলার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি উচ্চ শব্দে জিজ্ঞাসা করলেন, ছাদের উপর কে? উত্তর আসল, তোমারই একজন বন্ধু। আমার একটি উট হারিয়েছে, সেটি তালাশ করছি। তিনি বললেন, তুমি তো দেখছি বেশ বোকা! রাজ প্রাসাদের ছাদের উপর উট আসবে কেমন করে? ছাদের উপরের লোকটি বললেন, হে গাফিল! তুমি মখমলের পোশাক পরে স্বর্ণের সিংহাসনে বসে আল্লাহ তায়ালাকে অন্বেষণ করছ। এটা ছাদের উপর উট অন্বেষণ করার চেয়ে অধিক বোকামি নয় কি?
এমনিভাবে তিনি একের পর এক আরো অনেক সাবধান ও সতর্কবাণী শুনতে লাগলেন অতঃপর বুঝতে পারলেন যে, তাঁকে দুনিয়ার মায়াজাল হতে মুক্ত করে নিজের দিকে আকর্ষণ করাই আল্লাহ পাক-এর ইচ্ছা। ফলে, তিনি যামানার লক্ষ্যস্থল ওলী হযরত ফুযায়িল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ পূর্বক আল্লাহ পাককে হাছিল করার কোশেশে মশগুল হয়ে গেলেন। (সুবহানাল্লাহ)
মুলতঃ যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হয়ে যান তখন কায়িনাতের সবকিছুই তাঁর অধীন হয়ে যায়। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত আল্লাহ পাক-এর ওলীগণ।
বর্ণিত রয়েছে, একবার হযরত ইব্রাহীম আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি দজলা নদীর তীরে বসে নিজের ছেঁড়া কাপড় সেলাই করছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, আপনি বলখের বাদশাহী ত্যাগ করে কি লাভ করেছেন? তিনি নিজ হাতের সুইটি নদীতে ফেলে দিলেন এবং নদীর দিকে অঙ্গুলী ইশারা করলেন। তখনই নদীর হাজার হাজার মাছ এক একটি স্বর্ণের সুঁচ মুখে নিয়ে সেখানে ভেসে উঠল। হযরত ইবরাহীম আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি স্বর্ণের সুঁচ চাইনা, আমার নিজের সুঁচটি চাই, এ কথা বলা মাত্র একটি ছোট ও দুর্বল মাছ তাঁর সুঁচটি মুখে করে এনে তাঁর সামনে রেখে গেল। হযরত ইবরাহীম আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি লোকটিকে বললেন, আমি বলখের বাদশাহী ত্যাগ করে যা লাভ করেছি তন্মধ্যে সর্বনিম্ন হচ্ছে এটি। (সুবহানাল্লাহ)
অতএব, গইরুল্লাহ্র মোহ ত্যাগ করে প্রকৃত আল্লাহওয়ালা হওয়াই প্রত্যেক বান্দা এবং উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ পাকও সেটা বলেছেন,
كونوا ربانين.
অর্থাৎ- “তোমরা সকলেই আল্লাহওয়ালা (আল্লাহ পাক-এর ওলী) হয়ে যাও।” (সূরা আলে ইমরান- ৭৯)
ছাহাবীগণ ছাহাবী হয়েছেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত গ্রহণ করে, তাঁর নিকট বাইয়াত হয়ে। কিন্তু এখন তো নুবুওওয়াত-রিসালতের যামানা নেই। এখন হচ্ছে বেলায়েতের যামানা। কাজেই এখন কেউ আর ছাহাবী হবে না। বরং এখন হবে ওলী। তাই ওলী হওয়ার জন্য অবশ্যই একজন ওলীর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর ছোহবত গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, যাঁরাই ওলীআল্লাহ হয়েছেন তাঁরা কোন না কোন একজন ওলীআল্লাহর নিকট বাইয়াত ও ছোহবত গ্রহণ করেই ওলীআল্লাহ হয়েছেন। ওলীআল্লাহর নিকট বাইয়াত ও ছোহবত গ্রহণ করা ব্যতীত কেউ কখনো ওলীআল্লাহ হননি।
আল্লাহ পাক-এর বেশুমার শুকরিয়া যে, বাংলার যমিনে আল্লাহ পাক এ যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমামকে পাঠিয়েছেন। সুতরাং এ মহান নিয়ামতের কদর করে নিজেকে ধন্য করে নেয়া সকলেরই জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। আমীন
মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা