মাহে জুমাদাল ঊলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী মাসের পঞ্চমতম মাস জুমাদাল উলা। মুলতঃ প্রতিটি মাস, দিন, সময়, মুহূর্তই মূল্যবান যদি তা কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক পরিচালিত হয়। আর কালামুল্লাহ শরীফের একটি আয়াত শরীফ কিংবা হাদীছ শরীফ কিংবা একটি ওয়াকেয়া হিদায়েত লাভ ও মকবুল বান্দা হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, আওলাদে  রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ থেকে একটি ওয়াকেয়া উল্লেখ করা হলো।

বর্ণিত রয়েছে, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত হাসান  বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম যামানায় মনিমুক্তার ব্যবসা করতেন। রোম থেকে মনিমুক্তা এনে বছরাতে বিক্রি করতেন। একবার তিনি রোমে গেলেন। রোমের এক উজিরের সাথে উনার সম্পর্ক ছিল। সেই উজির উনাকে বললো, হে হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আজকে আপনাকে আমি একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাব, একটা নতুন জিনিস দেখাব। উনি বললেন, ঠিক আছে, নিয়ে চলেন। নিয়ে যাওয়া হলো অনেক দূরে একটা মাঠের মধ্যে। সেই মাঠে একটা বড় তাবু টাঙ্গানো। সে তাবুর মধ্যে কিছু একটা রাখা হয়েছে। উনি দূর থেকে লক্ষ্য করলেন, সেই রোমবাসীদের মধ্যে রোমের বাদশা সেখানে গেছে। তার উজির-নাজির সকলেই সেখানে গেছে। দেখা গেল, কিছুক্ষণ পর কিছু সৈন্য-সামন্ত তাদের ঢাল-তলোয়ার নিয়ে সেই তাবুটাকে প্রদক্ষিণ করলো এবং তারা কি যেন বলতে বলতে, কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। এরপর দেখা গেল, কিছু সংখ্যক আলিম-জ্ঞানী লোক তাঁরাও সেই তাবুটাকে প্রদক্ষিণ করে কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলতে বলতে চলে গেল। এরপর কিছু বৃদ্ধ লোক তাঁরাও সেই তাবুটাকে প্রদক্ষিণ করলো এবং কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলে চলে গেল। এরপর দেখা গেল, কিছু খুব ছূরত মহিলা। তাদের মাথায় স্বর্ণ-মনি-মুক্তার মালা রয়েছে সে সমস্ত নিয়ে তারা সেই তাবুটাকে প্রদক্ষিণ করে কিছু বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। এরপর বাদশা নিজেই সেটা প্রদক্ষিণ করে কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলে সেখান থেকে বের হয়ে আসলো।

ঘটনা যখন শেষ হয়ে গেল, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই উজিরকে বললেন, হে ভাই উজির! আমি তো তোমাদের ভাষা বুঝি না। সেই তাবুকে প্রদক্ষিণ করে তোমরা কি বললে এবং কি করলে? আমিতো কিছুই বুঝলাম না। এটা শুনে উজির বললেন, হে হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এখানে বাদশার একটা ছেলে শায়িত। সে খুব উপযুক্ত ছিল। বাদশা মনে করেছিল, বাদশার পর তাকে গদীনশীন করা হবে। কিন্তু হঠাৎ অসুখে সে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর তাকে এখানে দাফন করা হয়। এজন্য প্রত্যেক বছর তার মৃত্যুর দিন বাদশা এখানে আসে। আপনি যে দেখলেন, কতগুলি সৈন্য-সামন্ত; তারা কি বললো, জানেন? সৈন্য-সামন্ত তাদের ঢাল-তলোয়ার নিয়ে তারা তার কবরকে প্রদক্ষিণ করলো এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে বললো, হে শাহজাদা! যদি ঢাল দিয়ে, তলোয়ার দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো, তাহলে আজকে তোমাকে আমরা অবশ্যই রক্ষা করতাম সেই মৃত্যু থেকে। কিন্তু তোমাকে এমন এক অস্তিত্ব খালিক্ব-মালিক আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন মৃত্যু দিয়েছেন যাঁর কাছে আমাদের ঢাল-তলোয়ারের কোনই মূল্য নেই। কাজেই তোমাকে রেখে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনই পথ নেই। এরপর আসলো জ্ঞানী ব্যক্তিরা। এসে বললো, হে শাহজাদা! যদি জ্ঞান দিয়ে, আক্বল-বুদ্ধি দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো, আমরা রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি তোমাকে নিয়ে গেছেন, তাঁর কাছে আমাদের আক্বল, জ্ঞান-বুদ্ধি, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। এই কথা বলে তারাও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। এরপর আসলো বৃদ্ধ লোকেরা। তারা এসে বললো, হে শাহজাদা! যদি কান্নাকাটি, রোনাজারি, আহাজারি করে, মায়া-মুহব্বত দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো আমরা রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি তোমাকে নিয়ে গেছেন তাঁর কাছে এগুলোর কোনই মূল্য নেই। একথা বলে তাঁরাও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। এরপর আসলো সেই মহিলারা। তারা বললো, হে শাজহাদা! ছূরত দিয়ে, মাল দিয়ে যদি তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো আমরা রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি তোমাকে নিয়ে গেছেন তাঁর কাছে এগুলোর কোন মূল্য নেই। তাই আমাদের চলে যেতে হলো। শেষ পর্যন্ত বাদশা বললো হে শাহজাদা! যদি আমার সমস্ত রাজত্বের বিনিময়ে, সমস্ত ধন-সম্পদের বিনিময়ে তোমাকে রক্ষা করা সম্ভব হতো আমি রক্ষা করতাম। কিন্তু যিনি তোমাকে নিয়ে গেছেন তার কাছে এই সমস্ত ধন-সম্পদ, রাজত্বের কোনই মূল্য নেই। তাই তোমাকে রেখে যাওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। একথা বলে তিনিও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন।

হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই ঘটনা যখন দেখলেন, দেখে খুব চিন্তিত হয়ে গেলেন। উনি খালিছ তওবা করলেন যে, সত্যিই তো দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, এখান থেকে কিছুই নিয়ে যাওয়া যাবে না। ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, বাড়ী-গাড়ী, কিছুই নেয়া যাবে না। শুধু নেয়া যাবে নেক আমল।

এজন্য কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………….

 “দুনিয়া অন্তর লাগানোর জায়গা নয়। দুনিয়া হচ্ছে নছীহত হাছিলের জায়গা। খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক করে সময় নষ্ট করে দেয়ার জায়গা দুনিয়া নয়। এখানে আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফাত, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তায়াল্লুক নিসবত হাছিল করার জায়গা। (চলবে)

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা