মাহে জুমাদাল ঊলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

জুমাদাল উখরা মাস হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণের সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক আলোচনার মাস। কারণ এ মাসেই ছাহাবাগণের সাইয়্যিদ আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর দীদারে মিলিত হন।

উল্লেখ্য, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ছিলেন বেমেছাল বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁদের সে বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার একমাত্র উৎস আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত। এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, ছাহাবীগণের সম মর্যাদা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের কোন উম্মতই লাভ করতে পারবেনা। তাঁদের সততা, বিশ্বস্ততা, শরাফত, আত্মত্যাগ, খিদমত, সদাচার, আল্লাহভীতি, তাক্বওয়া, ইহ্সান, ইখলাছ, সহানূভূতি, বীরত্ব, সাহসিকতা সবই ছিল নজীরবিহীন। তাঁরা ছিলেন নিস্কলুষ ও পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারকের অধিকারী। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাঁরা প্রত্যেকেই পথ প্রদর্শক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

امنوا كما امن الناس

অর্থাৎ, ছাহাবীগণ যেরূপ ঈমান এনেছেন তোমরাও তদ্রুপ ঈমান আন। (সূরা বাক্বারা-১৩)

আরো ইরশাদ হয়েছে-

فان امنوا بمثل ما امنتم به فقد اهتدوا.

অর্থাৎ, লোকেরা যদি ছাহাবায়ে কিরামগণের ন্যায় ঈমান আনে তাহলেই তারা হিদায়েত লাভ করবে। (সূরা বাক্বারা-১৩৭)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعدلهم جنت تجرى تحتها اانهر خلدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم.

অর্থাৎ, ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে যারা উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, তাঁদের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। তাঁদের জন্য আল্লাহ পাক এরূপ বেহেশ্ত নির্ধারিত রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে। তাঁরা সেই বেহেশ্তে চিরকাল অবস্থান করবেন। এটা তাদের জন্য বিরাট সফলতা। (সূরা তওবা-১০০)

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,ঞ্জ“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবীগণের অনুসরণ করা। কারণ- তাঁরা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, আত্মার দিক থেকে অধিক পবিত্র, ইলমের দিক থেকে অত্যন্ত গভীর, লোক দেখানো আমল হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। আল্লাহ পাক তাঁদেরকে তাঁর প্রিয়তম হাবীবের ছোহবত এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে মনোনীত করেছেন। সুতরাং তাঁদের মর্যাদা বা শান সম্পর্কে অবগত হও এবং তাঁদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসাধ্য তাঁদের আখলাক্ব ও আদর্শকে গ্রহণ কর। কারণ তাঁরা হিদায়েত ও  ছিরাতুল মুস্তাক্বীম-এর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ, মিরকাত, রযীন ইত্যাদি)

বুঝা গেল, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম এর মত ও পথের বাস্তব অনুকরণ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। কাজেই, কেউ হাক্বীক্বী বান্দা ও উম্মত হতে চাইলে তাকে অবশ্যই ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব, সীরত-ছূরত সবদিক থেকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরা যেভাবে মাল-জান উৎসর্গ করে দিয়েছেন সেভাবে তাঁকেও মাল-জান উৎসর্গ করে দিতে হবে।

মূলতঃ ছাহাবায়ে কিরাম এটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর ছোহবতের কারণে। তদ্রুপ পরবর্তী কোন উম্মত আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত ও পথের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হলে এবং উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টির জন্যে নিজের মাল-জান কুরবানী করতে হলে তাকে অবশ্যই যামানার মধ্যে যিনি আল্লাহ পাক-এর  হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল নায়িব বা প্রতিনিধি তথা যিনি যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম তাঁর ছোহবত ইখতিয়ার করতে হবে।

তাই হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

الشيخ لقومه كالنبى فى امته.

অর্থাৎ- “নবী-রসূল তাঁর উম্মতের নিকট যেরূপ সম্মানিত ও অনুসরনীয়, শায়খ বা মুর্শিদ তাঁর ক্বওমের নিকট তেমনিই সম্মানিত ও অনুসরণীয়।” (মকতুবাত শরীফ, দায়লামী শরীফ)

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা