মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৬১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম মাস এটি। দুনিয়ার অসংখ্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ মাসে সংঘটিত হয়েছে। এ মাসের দশ তারিখ  দিনটি হচ্ছে ইয়াওমে আশুরা। যে দিনটি স্মরনীয় ও মার্যাদা মন্ডিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। অর্থাৎ এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম-এর কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এদিনেই সংঘটিত হয়েছে। ফলে, উম্মাহর জন্য এদিনটি এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন এবং রহমত, বরকত ও সাকীনা হাছিলের দিন। তাই এ দিনে বেশকিছু আমলের কথা হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে- ১. ১০ই মুর্হরম উপলক্ষ্যে দু’টি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। সম্ভব হলে উক্ত দিনে যারা রোযা রাখবে তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। ২. সাধ্যমত পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো। ৩. গোসল করা। ৪. চোখে সুরমা দেয়া। ৫. গরীবদেরকে পানাহার করানো। ৬. ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো।  এসব প্রত্যেকটি আমলই সুন্নত এবং অশেষ ফযীলত লাভের কারণ।

উল্লেখ্য, কিছু লোক আশুরা উপলক্ষ্যে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-এর ওয়াকেয়া বর্ণনা করতে গিয়ে তাদের শানের খিলাফ কথা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছেন বা একটা গুনাহ করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক তাঁকে গযবে ফেলেছিলেন  অর্থাৎ তাঁেক মাছের পেটে চল্লিশ দিন আবদ্ধ থাকতে হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

অথচ শরীয়তের মাসয়ালা তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন  নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কখনও কোন ভুল বা ত্রুটি করেননি এবং তাঁরা কোন গুনাহখতাও করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই অনিচ্ছাকৃতও নয়। কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত এবং প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

যদি তাঁদের সাথে ভুল বা গুনাহর বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয় তাহলে একইসাথে এটাও সম্পৃক্ত হয়ে যায় যে, আল্লাহ পাকই ওহী নাযিলে ভুল করেছেন এবং তিনিই তাঁদেরকে গুনাহ করিয়েছেন (নাঊযুবিল্লাহ) যা চিন্তা-কল্পনা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ প্রত্যেকেই সকল প্রকার গুনাহখতা, ভুলত্রুটি, এমনকি অপছন্দনীয় বিষয় থেকেও মা’ছূম ও পবিত্র। (শরহে আক্বাঈদে নছফী, ফিক্বহুল আকবর, তাকমীলুল ঈমান ইত্যাদি)

অতএব, মনে রাখতে হবে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে  হলে তা আক্বাঈদী মাসয়ালা ঠিক রেখে করতে হবে। অন্যথায় তা শুদ্ধ হবেনা।

একইভাবে মুর্হরম উপলক্ষে শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুশ্ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাতের বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়াযিদকে দোষারোপ করার পাশাপাশি বিশিষ্ট ছাহাবী কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও দোষারোপ করা হয়। (নাঊযুবিল্লাহ) অথচ ছাহাবীগণের যে কাউকে দোষারোপ করা স্পষ্ট কুফরী। (সূরা ফাতহ-২৯)

শরীয়তে তথা হাদীছ শরীফে ১০ই মুর্হরম পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভাল খাদ্য খাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশুরার দিন অর্থাৎ ১০ই মুহররম তারিখে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য স্বচ্ছলতা দান করবেন। (তবারানী শরীফ, মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ)

উল্লেখ্য, বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে নববর্ষ উপলক্ষে বছরের পহেলা দিন- পহেলা মুর্হরম হোক, পহেলা বৈশাখ হোক, পহেলা জানুয়ারী হোক, ভাল বা বিশেষ খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে অথচ এর মধ্যে আলাদা কোন ফযীলত বা বরকত নিহিত নেই। আর এ দিন মুসলমানের জন্য কোন আনন্দ বা খুশী প্রকাশেরও দিন নয়। বরং যারা মজুসী বা অগ্নি  উপাসক কেবল তারাই নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে অর্থাৎ বছরের পহেলা দিন উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করে।

নববর্ষ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করা যেহেতু মজুসীদের রসম-রেওয়াজ তাই মুসলমানের জন্য এ দিনে আলাদাভাবে কোন খুশী প্রকাশ করা এবং আলাদাভাবে কোন ভাল বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা জায়িয নেই।

বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইমাম আবূ হাফস্ কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কেউ যদি নববর্ষ উপলক্ষে একটা ডিমও ব্যয় করে তাহলে তার অতীত জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তাই এ ব্যাপারে খুব সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। শরীয়তের মাসয়ালা খুবই সুক্ষ্ম এবং বাস্তবসম্মত। শরীয়ত এখন না মানলেও একদিন তা মানতেই হবে।  কাজেই সময় থাকতেই শরীয়তের মাসয়ালা মুতাবিক আমল করা ঈমানদারের কর্তব্য।

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল ঊলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা