মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৫০তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম মাস এটি। দুনিয়ার অসংখ্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ মাসে সংঘটিত হয়েছে। এ মাসের দশ তারিখ  দিনটি হচ্ছে ইয়াওমে আশুরা। যে দিনটি স্মরনীয় ও মার্যাদা মন্ডিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। অর্থাৎ এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, এ দিনে আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং এ দিনেই তাঁর তওবা ও দুয়া কবুল করেছিলেন। হযরত ইদরীস আলাইহিস সালামকে আকাশে তুলে নিয়েছিলেন। হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম এবং উনার সঙ্গী-সাথীগণকে বন্যা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামকে নমরূদের তৈরি আগুণ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে কথা বলেছিলেন এবং তাওরাত শরীফ নাযিল করেছিলেন। এ দিনেই আল্লাহ পাক বনী ইসরাঈলের জন্যে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছিলেন। হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সম্প্রদায় পার হয়ে গিয়েছিলেন। আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায় ডুবে গিয়েছিল।  এ দিনেই আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। হযরত আইয়ূব আলাইহিস্ সালামকে শিফা দান করেছিলেন। হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ দিনে হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালামকে ক্ষমা করা হয়েছিল। হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম-এর রাজত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ দিনে আল্লাহ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে আসমানে তুলে নিয়েছেন। এ দিনে আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা বৃদ্ধির ঘোষনা দিয়েছেন। এখানে একটা জরুরী মাসয়ালা হলো, হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, নবীদের গুণাহ ক্ষমা করা হয়েছে বা তওবা কবুল করা হয়েছে। তবে কি নবীদের কোন গুণাহ ছিল? কখনও নয়। নবীগণ মা’ছুম, নিষ্পাপ। আক্বাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “নবীগণ প্রত্যেকেই ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কুফরী। এ দিনেই বেহেশ্তের যুবকদের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর শাহাদাত বরণ বাহ্যিকভাবে দুঃখজনক মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তাঁর বুলন্দ মর্যাদারই কারণ।

মূলতঃ এ থেকে উম্মাহকে নছীহত হাছিল করতে হবে যে, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কখনও নাহক্বের সাথে হাত মেলাননি এমনকি আপোষও করেননি। তিনি হক্বের উপর কায়িম থেকে শহীদ হন। হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ছানা-ছিফত কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। আর তার বিপরীত ইয়াযীদ ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে সবাই লা’নত দিতে থাকবে। উল্লেখ্য, অনেকে ইয়াযীদকে দোষারোপ করতে যেয়ে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখন তোমরা কাউকে দেখবে, আমার ছাহাবীগণকে গালী-গালাজ, দোষারোপ করছে তখন তোমরা বলবে, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমার উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হোক।” কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা এবং তাঁদের প্রতি হুসনে যন বা সুধারনা পোষণ মুহররমুল হারাম মাসের অন্যতম শিক্ষা। আশুরা উপলক্ষে ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ দু’দিন রোযা রাখা সুন্নত। এ রোযার ফযীলত সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমাদ্বান মাসের রোযার পর আশুরার রোযা সবচেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ। আশুরার দিন যদি কোন ব্যক্তি রোযা রাখে, আল্লাহ পাক তাকে ষাট বছর দিনে রোযা রাখার এবং রাত্রির ইবাদতের ফযীলত দান করবেন। তিনি আরো বলেন, কোন ব্যক্তি যদি আশুরার দিন রোযা রাখে আল্লাহ পাক তাকে পূর্ববর্তী এক বছরের গুণাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন। আশুরার রোযায় কোন ব্যক্তি যদি অপর কোন রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করায় সে যেন সমস্ত উম্মতে মুহম্মদীকে ইফতার করালো। কোন  ব্যক্তি যদি আশুরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ায় আল্লাহ পাক তাকে এক বছরের স্বচ্ছলতা দান করবেন। আশুরার সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, কেউ যদি এ দিনে গোসল করে আল্লাহ পাক তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন এবং এক বছরের মধ্যে মৃত্যু ব্যতীত তার আর কোন কঠিন রোগ হবে না। কেউ যদি এই দিনে মেশ্ক মিশ্রিত (ইছমিদ) সুরমা চোখে দেয় আল্লাহ পাক তাকে এক বছর চোখের রোগ থেকে শিফা দান করবেন। আশুরার দিনে কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলায় এবং কোন খুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় আল্লাহ পাক তাকে বেহেশ্তের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং বেহেশ্তের খালিছ শরবত সালসাবীল ঝরণা থেকে পানি পান করাবেন। অর্থাৎ সে জান্নাতী হবে।

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা