হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
আল্লাহ পাক-এর নিকট আসমান জমিন সৃষ্টিকাল থেকে মাসের সংখ্যা বারটি। তারমধ্যে চারটি হারাম বা পবিত্র মাস। উক্ত হারাম মাসসমূহের অন্যতম হচ্ছে মুর্হরম। যে মাসের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে বহু হাদীছ শরীফ। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
اكرموا المحرم من اكرم المحرم اكرمه الله بالجنة ونجاه من النار.
অর্থঃ- “তোমরা মুর্হরম মাসকে সম্মান কর। যে ব্যক্তি মুর্হরম মাসকে সম্মান করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” এ মাসটি বান্দার জন্য ইবরত ও নছীহত গ্রহণের খাছ মাস। আল্লাহ পাক বলেন,
تلك الايام ندا ولها بين الناس.
অর্থঃ- “আমি মানুষের মাঝে সময়ের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকি।” (সূরা আলে ইমরান/১৪০) যার ফলে, মানুষ একবার শিশু, একবার কিশোর, একবার সে যুবক, আবার একবার সে বৃদ্ধ, একবার সূখ, একবার দুঃখ, একবার অভাব, একবার স্বচ্ছল, একবার সে জীবিত এবং একবার তার মৃত্যু হয়। তাই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে সতর্ক করে বলেন, “মৃত্যু আসার পূর্বে তাড়াতাড়ি তওবা করে নাও, সম্পদ নষ্ট হওয়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি দান-ছদকা (যাকাত) কর, দূর্ণামে পড়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি কন্যার বিবাহের ব্যবস্থা কর, নতুন কোন কাজ শুরুর পূর্বেই মৃতকে দাফন কর, ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি নামায আদায় কর, মালাকুল মউত আসার পূর্বেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর, হায়াত শেষ হওয়ার পূর্বেই নেক কাজ করে নাও, লজ্জিত হওয়ার পূর্বেই পাওনাদারদের সন্তুষ্ট কর।”(ইবনে নুবাতা) তিনি আরো ইরশাদ করেন, “পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি অবস্থায় পতি হওয়ার পূর্বে গণীমত মনে কর। যথা- বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থ্যতাকে, অভাবের পূর্বে সচ্ছলতাকে, মৃত্যু আসার পূর্বে হায়াতকে, কর্মব্যস্থতার পূর্বে অবসর সময়কে।” (মুনাব্বিহাত) মুলতঃ সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যিনি মুল্যবান হায়াতকে নেক আমলের মাধ্যেমে কাটিয়ে দেন এবং যিনি শরীয়তের খিলাফ কাজে এক মূহুর্ত সময় ব্যয় করেন না। আর হতভাগা সেই ব্যক্তি যে জাহিল ও গোমরাহ লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করে এবং শরীয়তের খিলাফ কাজে নিজের মুল্যবান হায়াতকে অতিবাহিত করে। বর্ণিত আছে যে, এ মাসেরই দশ তারিখ দশই-মুর্হরম “আশুরা” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়। বিশেষকরে আশুরার দিনে আহলে বাইতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুবারক শাহাদত বরণ করেন। এর ফলে আল্লাহ পাক-এর মহান দরবারে তাঁর মর্যাদা বুলন্দ হয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতঃ কারণেই এ দিনটি আমাদের সবার জন্য এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, রহমত, বরকত, সাকীনা হাছিল করার দিন। তাই এ দিনে কতিপয় আমলের কথা হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে। বর্ণিত রয়েছে, “এ দিন যে ব্যক্তি রোযা রাখলো সে যেন সারা বছরই রোযা রাখলো। যে ব্যক্তি এদিনে কোন বস্ত্রহীনকে বস্ত্র পরিধান করাবে আল্লাহ পাক তাকে কঠিন আযাব থেকে নাজাত দান করবেন। যে ব্যক্তি এ দিনে কোন রোগীর সেবা করবে এর বিনিময় স্বরূপ আল্লাহ পাক তাকে অফুরন্ত ছওয়াব দান করবেন। এ দিনে যে ব্যক্তি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে অথবা কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াবে অথবা কোন পিপাসার্তকে পান করাবে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় আহার করাবেন এবং সালসাবীল (জান্নাতী ঝর্ণা) থেকে পান করাবেন। যে ব্যক্তি এ দিনে গোসল করবে সে মৃত্যু ব্যতীত অন্য সকল রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং অলসতা ও জ্বরা-ব্যাধি থেকেও নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি এ দিনে চোখে সুরমা (ইসমিদ মিশ্রিত) ব্যবহার করবে তার চোখও কোন দিন ব্যাধিগ্রস্ত হবেনা। যে ব্যক্তি এদিনে সাধ্যমত তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়াবে আল্লাহ পাক গোটা বছরের জন্য তার রিযিক প্রশস্ত করে দিবেন। (সুবহানাল্লাহ) আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে সম্মানিত মুহররম মাসের যথাযথ সম্মান ও হক্ব আদায় করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –
মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা