মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৪৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

 আরবী বছরের এগারতম মাস যিলক্বদ। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস বলে ঘোষণা করা হয়েছে যিলক্বদ মাস তন্মধ্যে একটি। এ মাসটি হজ্জের মাস সমূহের অন্তর্ভূক্ত। এ মাসটিতেই সাধারণত হজ্জ ও ওমরাহ পালনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। সুতরাং হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্য এ সম্পর্কিত জরুরত আন্দাজ মাসয়ালা-মাসায়িল জানা আবশ্যক। তবেই তা পূর্ণরূপে আদায়ে সক্ষম ও সম্ভব হবে। ভীরের কালে মুসলমানদের কষ্ট দেয়া, অহংকার প্রদর্শন, লোক দেখানো উদ্দেশ্য, অন্যের প্রতি অযথা আক্রমন ও বাড়াবাড়ি ইত্যাদি হজ্জ ও ওমরাহ কবূল হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। সেই সাথে একটা বড় অন্তরায় হচ্ছে ছবি ও বেপর্দা।  কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে হজ্জ ও ওমরাহ পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সাথে সাথে এও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, হজ্জ ও ওমরাহ পালনে যেন কোন প্রকার অশ্লীল-অশালীন, ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ না করা হয়। বরং হজ্জের পাথেয় হিসেবে তাক্বওয়া বা পরহিযগারী অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

الحج اشهر معلومت فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.

অর্থঃ- “হজ্জের মাসগুলো সুনির্দিষ্ট। অর্থাৎ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ। যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে নির্জন অবস্থান ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমুলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ কর তা আল্লাহ পাক জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। আর শুধুমাত্র আমাকেই ভয় কর হে আক্বলমন্দ।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭)

 উল্লেখ্য, ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া স্পষ্ট অশ্লীল-অশালীন এবং ফাসিকী বা নাফরমানীমুলক কাজ এবং উভয়টিই শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।  কাজেই, যারা ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে হজ্জ ও ওমরাহ পালন করবে তাদের সে হজ্জ ও ওমরাহ পালন কোন পর্যায়ের হবে তা সহজেই বোধগম্য। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “মানুষের মাঝে এমন একটা সময় আসবে  যে সময় ধনী ব্যক্তিরা হজ্জ করবে আনন্দ ভ্রমনের জন্য, মধ্যবৃত্ত লোকেরা ব্যবসার জন্য, গরীব শ্রেণীর লোকেরা ভিক্ষার জন্য এবং নামধারী আলিম, ক্বারী, মাওলানা ছাহেবরা সুনাম-সুক্ষাতি ও রিয়া বা লোক প্রদর্শনের জন্য।” (দাইলামী, কানযুল উম্মাল)

 শুধু হজ্জের  ক্ষেত্রেই নয় বরং নামায, রোযা, দান-ছদকা, জিহাদ, তাবলীগ ইত্যাদি প্রতিটি ইবাদত-বন্দিগীর ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে, তা আদায় করা সত্বেও খালিছ নিয়ত ও সঠিকভাবে আদায় না করার কারণে তা আদায় ও কবুলযোগ্য হবে না। বরং আদায়কারী জাহান্নামী হয়ে যাবে। কাজেই, ইবাদত করতে হলে আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে করতে হবে। উনাদের আদেশের বিপরীত হালাল-হারাম, জায়িয-নাজায়িয একাকার করে তা করা শরীয়ত সম্মত নয়। আল্লাহ পাক বলেন,

ولاتلبسوا الحق بالباطل.

অর্থঃ “তোমরা হক্বকে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করোনা।” (সূরা বাক্বারা-৪২) সুতরাং, হারাম কাজের মাধ্যমে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কোন ইবাদতই সম্পাদন করা জায়িয নেই।  উদাহরণস্বরূপ ছতর আবৃত্ত করা ফরয। ছতর খোলা হারাম ও কবীরা গুনাহ। এখন কেউ যদি ছতর না ঢেকে নামায পড়ে তার নামায কবুল হওয়া তো দূরের কথা তা আদায়ই হবে না।  আরো বলা যায় যে, কোন ইমাম ছাহেবের পিছনে যদি কোটি মুছল্লীও থাকে কিন্তু ইমাম ছাহেবের ডানে-বামে ছবি থাকে তাহলে সেই কোটি লোকেরও নামায হবে না। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে হজ্জের ক্ষেত্রে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়ার মতো হারাম ও কবীরা গুণাহ করে তা আদায় করলে কি করে তা আদায় ও কবুল হতে পারে?  তাই, যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “ছবি তুলে ও পর্দা তরক করে অর্থাৎ বেপর্দা হয়ে হজ্জ করলে হজ্জ কবুল হওয়া তো দূরের কথা তা আদায়ই হবে না।”

অতএব, এ থেকে পরহেয থাকা প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। (আমীন)

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা