মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৩৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

 -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

হিজরী সনের একাদশতম মাস যিলক্বদ। যিলক্বদ শব্দটি আরবী। আরবী ভাষায় শব্দটির ছহীহ্ উচ্চারণ ‘যুল ক্বা’দাহ্’।’ ‘যু’ অর্থ মালিক, অধিকারী এবং ‘ক্বা’দাহ্’ অর্থ বসা, উপবেশন করা। একত্রে ‘যুলক্বা’দাহ্ শব্দদ্বয়ের অর্থ হচ্ছে উপবেশনকারী। এ মাসটিকে যেহেতু হারাম বা সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এ মাসের হুরতম-ইজ্জত রক্ষার্থে আরবগণ ঘরে বসে থাকতো এবং যুদ্ধ বিগ্রহ হতে বিরত থাকতো। মূলতঃ শরীয়ত বিরোধী সকল প্রকার কার্যকলাপ হতে বিরত থেকে এ মাসটির ইজ্জত-হুরমত রক্ষা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটি হচ্ছে হজ্জের  মাস। যেমন বর্ণিত রয়েছে, হজ্জের মাস তিনটি- শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ। শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখ থেকে হজ্জের প্রস্তুতি শুরু হয়। আর যিল হজ্জের দশ তারিখ হজ্জ শেষ হয়। অর্থাৎ এ নিদিষ্ট দিনসমূহের মধ্যে প্রত্যেক আযাদ বা স্বাধীন, বালেগ, সুস্থ, দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের এবং হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয়, যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে এবং গমনাগমনের রাস্তা নিরাপদ হয় তবে তার প্রতি হজ্জ ফরয। আর স্ত্রী লোকের জন্য অতিরিক্ত একটি শর্ত হচ্ছে স্বামী কিংবা কোন মাহরাম সঙ্গী থাকা। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 الحج اشهر معلومت فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولافسوق ولاجدال فى الحج.

 অর্থঃ- “হজ্জের মাসসমূহ সুনির্দিষ্ট। যে ব্যক্তি এ সময়ের মধ্যে হজ্জ পালন করে তার হজ্জ পালন কালে কোন প্রকার অশ্লীলতা, বেপর্দা-বেহায়াপনা, নাফরমানী ও কোনরূপ ঝগড়া-কলহ বা যুদ্ধ-বিগ্রহ করা জায়িয নয়।” (সুরা বাক্বারা/১৯৭) বড় দুঃখ ও আফসুসের বিষয়, কালামুল্লাহ শরীফে এত সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও হজ্জ আদায় কালে ঘাটে ঘাটে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলা হয়, এমনকি হজ্জে যাওয়ার অনুমতি নিতেই প্রত্যেককেই আলাদাভাবে জমা দিতে হয় বহুসংখ্যক ছবি। অথচ শরীয়তে ছবি শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, যদিও আম ফতওয়া মতে আম বা সাধারণ লোকের জন্য মা’জুর হিসেবে ছবি তুলে হজ্জ করা মুবাহ ফতওয়া দেয়া হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খাছ ফতওয়া হচ্ছে, সর্বক্ষেত্রেই তা নাজায়িয ও হারাম। আর খাছ লোকের জন্য ছবি তুলে হজ্জ করা কোন মতেই জায়িয় নেই। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 حسناب الابرار سيئات المقربين.

 অর্থাৎ- “সাধারণ লোকের জন্য যা নেকী, নৈকট্যশীল বা খাছ লোকের জন্য তা  গুনাহ্র কারণ।” আরো উল্লেখ্য, হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো, যাতায়াতের রাস্তা নিরাপদ হওয়া তথা জান-মালের নিরাপত্তা থাকা। যদি জান মালের কোন রকম ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা থাকে তাহলে হজ্জ ফরয হবেনা।  আর যদি ঈমানের কোন রকম ক্ষতি তথা (হারাম, নাজায়িয ও কুফরীর) আশঙ্কা থাকে সেক্ষেত্রে মাসয়ালা কি হবে? সেটা কেউ ফিকির করেছেন কি? হ্যাঁ, সে মাসয়ালার ফিকির করেছেন যামানার মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। তিনি বলেছেন, জান-মালের নিরাপত্তার চেয়ে ঈমানের নিরাপত্তা বড়। অতএব, ঈমানের ক্ষতি হলেও হজ্জ ফরয হবেনা। হজ্জের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 الحج المبرور ليس له جزاء الا الجنة.

 অর্থাৎ- “মকবুল হজ্জ এমন একটি আমল যার  একমাত্র প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত।” (বুখারী ও মুসলিম) আলোচ্য হাদীছ শরীফে “মাবরূর” শব্দের অর্থ মকবুল। অর্থাৎ ছগীরা-কবীরা গুনাহ হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থেকে যে ব্যক্তি হজ্জ করে তার হজ্জে মাবরূর নছীব হয়ে থাকে। আর যার দ্বারা ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি হারাম ও কবীরা গুনাহ সংঘটিত হবে তার হজ্জে মাবরূর নছীব হতে পারেনা। আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে খালিছভাবে হজ্জ ও ওমরাহ পালন করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –

 মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা