আল্লাহ্ পাক-এর ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের একটি হচ্ছে যিলক্বদ। তাই এ মাসের ফযীলত-বুযুর্গীর কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ মাসে ঝগড়া-ফাসাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, কাটাকাটি-মারামারি হারাম। এক কথায় শরীয়ত বিরোধী সকল প্রকার কার্যকলাপ হতে পবিত্র ও মুক্ত থেকে খালিছভাবে আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত-বন্দিগীতে মনোনিবেশ করাই এ মাসের শিক্ষা। এ মাসটি হজ্জ ও ওমরাহ পালনের মাস। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اتموا الحج والعمرة لله.
অর্থঃ- “তোমরা আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণরূপে পালন কর।” (সূরা বাক্বারা/১৯৬) আমল সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য ইলম্ হাছিল পূর্ব শর্ত। অতএব যার প্রতি হজ্জ ফরয, হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়িল সম্পর্কে ইলম্ অর্জন করা তার জন্য ফরয। এ নিমিত্তে কতিপয় মাসয়ালা এখানে আলোকপাত করা হলো- হজ্জের ফরয হচ্ছে ৩টি। যথা- (১) ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ মীক্বাত হতে ইহরাম বাঁধা, (২) ওকুফে আরাফা অর্থাৎ ৯ই যিলহজ্জ দ্বিপ্রহরের পর হতে তথা সূর্য ঢলার পর হতে ১০ই যিলহজ্জ ছুব্হে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকা এবং (৩) তাওয়াফে যিয়ারত অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ তারিখের মধ্যে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করা।
আর হজ্জের মূল ওয়াজিব ৫টি। যথা- (১) ছফা-মারওয়া পাহাড়ের সায়ী করা, (২) মুযদালিফায় অবস্থান, (৩) রমী বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা, (৪) মাথা মুন্ডন করা, (৫) তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ করা। বাংলাদেশ তথা পাক ভারত উপমহাদেশের লোকেরা সাধারণতঃ ইয়েমেন হয়ে হজ্জে গমণ করে থাকে। সে হিসেবে তাদের মীক্বাত (ইহ্রাম বাঁধার স্থান) হচ্ছে ‘ইয়ালামলাম।’ মক্কা শরীফের অধিবাসী নন এমন ব্যক্তিদের জন্য হজ্জ ও ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে হোক অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে হোক আগে মদীনা শরীফ গিয়ে রওযা পাকের যিয়ারত করে এরপর অন্য কাজ সম্পন্ন করাই উচিত। যারা সরাসরি হজ্জ করতে না গিয়ে আগে মদীনা শরীফ গিয়ে সেখানে অবস্থান করার পর হজ্জ আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, তাদেরকে মদীনা শরীফের অধিবাসীদের মীক্বাত ‘যুলহুলাইফা’ নামক স্থান হতে হজ্বের ইহ্রাম বাঁধতে হবে। ইহ্রাম অবস্থায় মেয়েদের চেহারা বা মুখমন্ডলে কাপড় স্পর্শ করা বা লাগানো যাবেনা। আবার পর্দার খিলাফও করা যাবেনা। কারণ মেয়েদের জন্য ইহ্রাম অবস্থায় হোক আর ইহরামের বাইরে হোক সর্বাবস্থায়ই পর্দা করা ফরযে আইন। বেপর্দা হওয়া হারাম ও কবীরা গুণাহ্। যে মহিলা হজ্জ পালন কালে কবীরা গুণাহ করবে তার হজ্জে মাবরূর নছীব হবেনা। তাই এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ইহ্রাম অবস্থায় মেয়েদের করণীয় হচ্ছে, তারা মুখমন্ডলের উপর এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে যাতে কাপড় মুখমন্ডলে স্পর্শ না করে। অর্থাৎ নেকাব মুখমন্ডল থেকে কিছুটা দূরে নেট(জালি) জাতীয় কোন কিছুর সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখবে। যদি একদিন বা এক রাত্রি মুখমন্ডলে কাপড় স্পর্শ করে তাহলে তাদের উপর দম অর্থাৎ একটি কুরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি এক দিন বা এক রাত্রির কম সময় কাপড় স্পর্শ করে তাহলে এক ফিৎরা পরিমাণ ছদকা করা ওয়াজিব হবে। হজ্জ ও ওমরাহ পালনকালে যে সকল দুয়া-তাসবীহ পাঠ করা মুস্তাহাব-সুন্নতরূপে বর্ণিত রয়েছে তা যদি কারো জানা না থাকে বা জানা থাকলেও পড়া সম্ভব না হয় তাহলে তার জন্য সহজ আমল হচ্ছে, সে যেন সব স্থানেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি (যে কোন) দুরূদ শরীফ পাঠ করে। আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ক্বিরান, তামাত্তু ও ইফরাদ তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে ‘হজ্জে ক্বিরান’ আফযল ও সুন্নত। একইসাথে হজ্জ ও ওমরাহ্ পালন করাকে হজ্জে ক্বিরান বলে। আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদের সকলকে আপনার ও আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ, ওমরাহ্ ও যিয়ারত করার তাওফীক দান করুন। য (আমীন)
মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা