-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী বছরের বারতম মাস ‘যিলহজ্জ।’ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের অন্যতম মাস এটি। বিভিন্ন দিক থেকে এ মাসের বুযুর্গী ও সম্মান। এ মাসেই আল্লাহ পাক হজ্জ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক-এর নিকট যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদত-বন্দিগীর চেয়ে বেশী প্রিয় আর কোন দিনের ইবাদত-বন্দিগী নেই। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা খাছ সুন্নত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য।
যিলহজ্জের দশম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। এ মহান দিনে সূর্যোদয়ের পর দু’রাকাত ঈদুল আযহার ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। অতপর যারা সমার্থবান তথা মালিকে নিছাব তাদের উপর কুরবানী করা শরীয়ত ওয়াজিব সাবস্ত্য করেছে।
কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন, হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা কুরবানী করবেনা তারা যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে।”
কাজেই, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের উচিত কুরবানীর দিন কুরবানী করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্য হাছিল করা।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আদম সন্তান কুরবানীর দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকেন তন্মধ্যে আল্লাহ পাক-এর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো কুরবানী করা। কিয়ামত দিবসে কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে স্বাক্ষ্য দান করবে। কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে আল্লাহ পাক কুরবানীদাতার আমলনামায় অসংখ্য নেকী দান করেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ঈদুল আযহার দিনে বান্দার কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ পাক তার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা হবে ক্বিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি কুরবানী দাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশ্তে পৌঁছিয়ে দিবে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “কুরবানীর পশু ক্বিয়ামতের দিন সওয়ারী বা বাহন হিসেবে গন্য হবে।”
সুতরাং কানা, খোড়া, রোগাক্রান্ত, কানকাটা, দন্তহীন ইত্যাদি যাবতীয় দোষযুক্ত পশু কুরবানী করা পরিহার করতঃ সম্পূর্ণ দোষমুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা উচিত।
উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো কুরবানী করে অফুরন্ত ফযীলত অর্জন করবেন। কিন্তু যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারাও ইচ্ছা করলে একাধিকজন মিলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক নামে গরু, খাসি, দুম্বা বা ভেড়া কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত লাভ করতে পারে।
অতএব, সকলের উচিত কেবলমাত্র আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিলের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা। এর মধ্যে যেন কোন রকম গইরুল্লাহ বা রিয়া তথা লৌকিকতা স্থান না পায়। এ বিষয়ে কালামুল্লাহ শরীফে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ তায়ালার দরবারে কুরবানীকৃত পশুর গোশত কিংবা রক্ত কিছুই পৌঁছেনা। বরং শুধুমাত্র তোমাদের তাক্বওয়া তাঁর দরবারে পৌঁছে থাকে।”
অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশুর কোন কিছুই গ্রহণ করেন না। তাঁরা দেখেন, কে উনাদের সন্তুষ্টির জন্য উনাদের নির্দেশ মুতাবিক কুরবানী করলো। আর কে গইরুল্লাহ’র জন্য নিজের খেয়াল-খুশী মতো কুরবানী করলো। অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আজকে কুরবানীর পশু কেনা হচ্ছে প্রতিযোগিতা করে এবং পশু কেনার পর পশুর ছবি তোলা হচ্ছে এমনকি পশুকে কুরবানী করার দৃশ্য ভিডিও করা হচ্ছে; অথচ শরীয়তে এ সবকিছুই হারাম।
অতএব, জানা আবশ্যক, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন ফরমাবরদারীর মধ্যে কোন নাফরমানী তথা হারাম-নাজায়িয, কুফর-শিরক, বিদয়াত-বেশরা ইত্যাদি যুক্ত করা হলে তা কস্মিনকালেও কবুল হবে না। তা কুরবানীই হোক অথবা অন্য কোন বিষয়েই হোক। আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে সর্বপ্রকার গইরুল্লাহ থেকে হিফাযত থাকার তাওফিক দান করুন। (আমীন)
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা