মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৪৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের বারতম মাস ‘যিলহজ্জ।’ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের অন্যতম মাস এটি। বিভিন্ন দিক থেকে এ মাসের বুযুর্গী ও সম্মান বিদ্যমান। এ মাসেই আল্লাহ পাক হজ্জ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক-এর নিকট যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদত-বন্দিগীর চেয়ে বেশী প্রিয় আর কোন দিনের ইবাদত-বন্দিগী নেই। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা খাছ সুন্নত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি আমল কখনও ছাড়তেন না। ১. যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের রোযা, ২. আশুরার রোযা, ৩. প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা, ৪. ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকায়াত সুন্নত নামায। স্মরনীয় যে, যিলহজ্জ মাসের দশম দিনের রোযা হচ্ছে কুরবানী পর্যন্ত। অর্থাৎ কুরবানীর গোশ্ত দিয়ে ইফতার করা। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে ছুবহে ছাদিক থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত কিছু পানাহার না করে কুরবানীর পর পানাহার করা বা কুরবানীর গোশ্ত দিয়ে খাওয়া শুরু করা খাছ সুন্নত। এতে একটি রোযার ফযীলত পাওয়া যায়। তাই যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের রোযা বলা হয়েছে। যিলহজ্জের দশম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। এ দিনের মরতবা অপরিসীম। এ দিন সূর্যোদয়ের পরে দু’রাকায়াত ঈদুল আযহার নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। এটা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। এ নামায ঈদুল ফিতরের নামায অপেক্ষা তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। কেননা, নামাযের পরেই কুরবানী রয়েছে। ঈদের নামাযের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি ঈদের নামায আদায় করতঃ ঈদগাহ হতে বের হয়ে আসে, তার প্রতি ক্বদমে আল্লাহ পাক তাকে হাজার নেকী দান করেন।”

আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি ইখলাছের সাথে ঈদের নামায আদায় করবে তার আমলনামায় দশ হাজার নেকী লিখা হবে এবং যে ব্যক্তি ইখলাছের সাথে ঈদের খুতবা শ্রবন করবে, তাকে বহু গোলাম আজাদ করার ছওয়াব দান করা হয়।” ঈদুল আযহার নামাযে গমনকালে কিঞ্চিত উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হয়। এবং খুৎবার মধ্যে এর বিধান রয়েছে। প্রথম খুৎবায় নয়বার আর দ্বিতীয় খুৎবায় সাতবার। এ তাকবীর পাঠ সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ঈদের দিনে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করায় একটি হজ্জ ও একটি ওমরাহ’র ছওয়াব লাভ হয়। এই তাকবীর ৯ই যিলহজ্জ ফজরের নামায হতে শুরু করে ১৩ই যিলহজ্জ আছরের নামায পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে একবার পাঠ করা ওয়াজিব এবং তিনবার পাঠ করা মুস্তাহাব-সুন্নত। কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন, হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা কুরবানী করবেনা তারা যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে।” কাজেই, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের উচিত কুরবানীর দিন কুরবানী করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্য হাছিল করা। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ঈদুল আযহার দিনে বান্দার কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ পাক তার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা হবে কিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি কুরবানী দাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলসিরাত পার করে বেহেশ্তে পৌছিয়ে দিবে। হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, “কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন সওয়ারী বা বাহন হিসেবে গন্য হবে।” সুতরাং কানা, খোড়া, রোগাক্রান্ত, কানকাটা, দন্তহীন ইত্যাদি যাবতীয় দোষযুক্ত পশু কুরবানী করা পরিহার করতঃ সম্পূর্ণ দোষমুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করতে হবে। উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো কুরবানী করে অফুরন্ত ফযীলত অর্জন করবেন। কিন্তু যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারাও ইচ্ছা করলে কয়েকজন মিলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক নামে গরু, খাসি, দুম্বা বা ভেড়া কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত লাভ করতে পারে। এছাড়া হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত চুল, নখ ইত্যাদি কাটা হতে বিরত থাকলেও কুরবানীর ফযীলত লাভ হয়।” আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে যিলহজ্জ মাসের উক্ত দিনসমূহের আমলগুলো যথাযথ সম্পাদন করার মাধ্যমে আপনার ও আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা