-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
আরবী মাসের সর্বশেষ মাসটি হচ্ছে যিলহজ্জ। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যিলহজ্জ মাস তন্মধ্যে একটি। এ মাসের বুযূর্গী ও সম্মান বর্ণনার অপেক্ষা রাখেনা। আল্লাহ পাক ইরশাদ ইরশাদ করেন,
وواعدنا موسى ثلثن ليلة واتممناها بعشر.
অর্থঃ- “আর আমি হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে ওয়াদা করেছি ত্রিশ রাত্রির এবং তা পূর্ণ করেছি আরো দশ দ্বারা।” (সূরা আ’রাফ/১৪১) হযরত মুফাস্সিরীনে কিরামগণ বলেছেন, সেই দশ ছিল যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন। হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ইবাদত-বন্দিগীর জন্য যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক-এর নিকট প্রিয়তর দিন আর নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এ দিনগুলোতে ইবাদত করা কি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়?” তিনি বললেন, “জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়। তবে যদি কেউ আপন জান-মাল নিয়ে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং সবকিছু আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় বিসর্জন দেয়।” হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, “পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ দিন হচ্ছে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা সুন্নত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমান এবং প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। (সুবহানাল্লাহ্) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, এক যুবকের অভ্যাস ছিল যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা দিতেই সে রোযা রাখতে আরম্ভ করে দিতো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা জানতে পেরে যুবককে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিনগুলোতে তোমার রোযা রাখার কারণ কি? সে আরজ করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক- এ দিনগুলো পবিত্র হজ্জের প্রতীক এবং হজ্জ আদায়ের মুবারক সময়। হজ্জ আদায়কারীগণের সাথে আমিও নেক আমলে শরীক হই, এই আশায় যে, তাঁদের সাথে আমার দুয়াও আল্লাহ পাক কবুল করে নিবেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, “তোমার এক একটি রোযার বিনিময়ে একশত গোলাম আযাদ করার, একশত উট আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় দান করার এবং জিহাদে সাজ-সামানে ভরপুর একটি ঘোড়া জিহাদের জন্যে দেয়ার ছওয়াব রয়েছে, তন্মধ্যে ৮ই যিলহজ্জ (ইয়াওমুত্ র্তাবিয়া)-এর রোযার বিনিময়ে এক হাজার গোলাম আযাদ করার, এক হাজার উট দান করার এবং সাজ-সামানাসহ জিহাদের জন্য এক হাজার ঘোড়া দান করার সমতুল্য ছওয়াব রয়েছে, আবার ৯ই যিলহজ্জ (ইয়াওমুল আরাফা)-এর রোযার বিনিময়ে দুই হাজার গোলাম আযাদ করার, দুই হাজার উট দান করার এবং জিহাদের সাজ-সামানাসহ দুই হাজার ঘোড়া দান করার ছওয়াব রয়েছে। হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আরাফার দিনের রোযা দুই বৎসর রোযা রাখার সমতুল্য। আর ঈদুল আযহা বা কুরবানীর দিনে বান্দার কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ পাক তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, কুরবানীর দিন আল্লাহ পাক-এর নিকট বান্দার সবচাইতে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে পশু কুরবানী করা। এখানে একটি মাসয়ালা স্মরণযোগ্য যে, কুরবানী করার সামর্থ্য যাদের নেই বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারা যদি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত নিজ চুল, নখ, মোঁচ ইত্যাদি কাটা হতে বিরত থাকে তাহলে তারা একটি কুরবানীর ছওয়াব লাভ করবে। মূলতঃ সকলের জন্যেই এ আমলটি মুস্তাহাব-সুন্নত এবং কুরবানীর ফযীলত লাভের কারণ। (নাসাঈ, মিশকাত, শরহে নববী ইত্যাদি) অতএব, প্রত্যেকের উচিত হজ্জের উক্ত দিনসমূহে যথারীতি ইবাদত-বন্দিগী করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিলের কোশেশ করা।
মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা