হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
চান্দ্র বৎসরের সর্বশেষ মাসটি হচ্ছে যিলহজ্জ। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যিলহজ্জ মাস তন্মধ্যে একটি। এ মাসেই দ্বীন ইসলামের পাঁচ ভিত্তির অন্যতম ভিত্তি ‘হজ্জ’ পালিত হয় বলেই এ মাসটি যিলহজ্জ নামে পরিচিত। হাজী ছাহেবগণ হজ্জ আদায়ের উদ্দেশ্যে বহু দূরের রাস্তা অতিক্রম করে মক্কা শরীফে পৌঁছেন। এটা সম্ভব হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক তাদের অন্তরে ঈমান প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন এবং তাঁদের সাথে সন্তুষ্টির ব্যবহার করেছেন বলেই। তাই তো তাঁরা বাইতুল্লাহ শরীফ, তার চার কোণ ও কা’বা শরীফের চাদর তাওয়াফ করেন। আল্লাহ পাক মিনায় তাঁদেরকে আশাপূর্ণ হবার সুসংবাদ দান করেন এবং তায়েফে তাঁদেরকে ভয়, কষ্ট ও সকল বিপদ থেকে নিরাপদ রাখেন, আরাফায় তাদেরকে নিয়ে যান গুনাহ মাফ করার জন্য, গুনাহ থেকে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর দিকে ধাবিত হন, মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করেন আনন্দ চিত্তে, সেখানে তিনি তাঁদের জন্য লিপিবদ্ধ করেন জাহান্নাম থেকে নাযাতের মহাপুরস্কার। তাঁরা নিজের নফস্কে, নিজের আমিত্বকে মিটিয়ে দেন, মু-ন করেন নিজেদের মাথা এবং বেশী বেশী পাঠ করেন মহা ক্ষমাশীল ও দয়াময় রব তায়ালার তাসবীহ- “লাব্বাইকা, আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা- শারীকালাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্কা লা- শারীকালাকা।” অর্থঃ- “আমি হাজির আছি হে আল্লাহ্ পাক! আমি হাজির আছি। আমি হাজির আছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও সমস্ত নিয়ামত এবং সমস্ত রাজত্ব আপনারই, আপনার কোন শরীক নেই।” হাজী ছাহেবগণ কুরবানী করেন, কুরবানীর পশু নহর করে লাভ করেন মহা প্রতিদান। তাঁরা কংকর ছুড়ে মারার সময় আল্লাহ পাক তাঁদের গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন এবং তাঁদের বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দান করেন। যখন তাঁরা বিদায়ী তাওয়াফ করেন এবং ফিরে আসার দৃঢ় ইরাদা করেন তখন সাইয়্যিদুছ্ ছাক্বালাইন, শাফিউল উমাম, রসূলে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতে উদ্বেলিত হয়ে সেই দিকে ছুটে যান। তিনি এমন রসূল যাকে আল্লাহ পাক বহু মু’জিযা দিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর কারণে মুদ্বার ও নযর গোত্রকে গৌরবান্বিত করেছেন। তাঁর দ্বীনকে করেছেন সরল-সঠিক এবং তাঁর শরীয়তকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অভিধানের প্রতিটি অক্ষর তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সাক্ষ্য বহন করে। তিনি ইরশাদ করেন,
من زار قبرى وجبت له شفاعتى.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করবে তাঁর জন্য আমার শুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।” (সুবহানাল্লাহ) (দারে কুতনী) তিনি আরো ইরশাদ করেন,
من زار بعد وفاتى فكانما زارنى فى حيوتى.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আমার বিদায়ের পর আমাকে দেখলো সে যেন আমাকে আমার জীবদ্দশায় দেখলো।”(ইবনে নুবাতা) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من مات فى احدن الحرمين بعثه الله من الامنين يوم القيامة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হারামাইন শরীফাইনের কোন এক স্থানে ইন্তিকাল করবে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাঁকে নিরাপত্তা লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে উঠাবেন।”(বাইহাক্বী) বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওযা শরীফ যিয়ারত করবে সে দশটি মর্যাদা লাভ করবে। এক- সে লাভ করবে সর্বোচ্চ সম্মান দুই- সে সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছবে, তিন- তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে, চার- সে মহাপুরস্কার লাভ করবে, পাঁচ- সে সুখ-শান্তি লাভ করবে, ছয়- সে দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্রতা লাভ করবে, সাত- তাঁর বিপদ-আপদ দূরিভূত হয়ে যাবে, আট- কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করবে, নয়- পরকালে কল্যাণ হাছিল করবে, দশ- আল্লাহ পাক-এর রহমত লাভ করবে। আয় বারে ইলাহী! আমাদেরকে দুনিয়ায় আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যিয়ারত লাভে ধন্য করুন, তাঁর শাফায়াত নসীব করুন, তাঁর হাউযে কাওছার থেকে পানি পান করার তাওফীক দিন, সর্বোপরি তাঁর মুহব্বত, ইতায়াত ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার সন্তুষ্টি-রিযামন্দি নসীব করুন। (আমীন)
মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা