মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২০১তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের বারতম মাস যিলহজ্জ। এ মাসেই আল্লাহ পাক হজ্জ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যিলহজ্জের দশম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। এ মহান দিনে সূর্যোদয়ের পর দু’রাকায়াত ঈদুল আযহার ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। অতপর যারা সামর্থ্যবান তথা মালিকে নিছাব তাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কুরবানী করবেনা তারা যেনো ঈদগাহের নিকটে না আসে।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, আদম সন্তান কুরবানীর দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে আল্লাহ পাক-উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে কুরবানীর পশু তার শিঙ, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, “ঈদুল আযহার দিনে বান্দার কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ পাক তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা হবে ক্বিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশ্তে পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো কুরবানী করে অফুরন্ত ফযীলত লাভ করবেন। কিন্তু যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারাও যাতে কুরবানীর ফযীলত থেকে বঞ্চিত না হন সেজন্য বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদ আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ম্দ্দুা জিল্লুহুল আলী তিনি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর আলোকে ফতওয়া প্রদান করেছেন যে, যে সকল লোক এককভাবে কুরবানী দিতে অক্ষম বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তাদেরকে দেখা যায় তারা কুরবানীর দিনে কয়েকজন মিলে গরু, ছাগল ইত্যাদি কিনে গোশত বণ্টন করে অথবা হাট-বাজার থেকে গোশত কিনে খেয়ে থাকে। সুতরাং, যেসকল লোক এককভাবে কুরবানী দিতে অক্ষম বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তাদের জন্য করণীয় হলো, কিছু লোক মিলে গরু বা ছাগল ইত্যাদি কিনে এক বা একাধিক নামে কুরবানী করা। কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।
যেমন, ৪০ জন বা ৫০ জন মিলে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নিলো। অথবা একটা খাসি তিনজন বা পাঁচজনে মিলে খরীদ করে যদি এক নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, এতেও কুরবানী শুদ্ধ হয়ে যাবে।
তবে স্মরণীয় যে, যারা শরীক হয়ে এ ধরনের কুরবানী দিবে তারা প্রত্যেকে চাইবে যে, নিজেদের নামে কুরবানী দিতে, তখন হয়তো ফিৎনা বা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য নাম দেয়ার ক্ষেত্রে উত্তম তরীক্বা হলো, যে সকল প্রাণীতে শুধু এক নামে কুরবানী করা যায়, তা অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার হাবীব  হুযূর  পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া উচিত। আর যে সকল প্রাণীতে সাত নামে কুরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে, তা যদি এক নামে কুরবানী করা হয় তাহলে সেটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক নামেই কুরবানী করা উচিত। আর যদি সেটা সাত নামে কুরবানী করা হয় তাহলে প্রথমত এক নাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর  পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নাম মুবারকে এবং বাকী ছয় নামের মধ্যে পর্যায়ক্রমে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত হাযিরা আলাইহাস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহ্লে বাইত আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম-উনাদের নাম মুবারক-এ কুরবানী দিয়ে সকল শরীক সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নিবে। তখন এতে কোন ফিৎনা সৃষ্টি হবেনা। সাথে সাথে কুরবানীর দিন আল্লাহ পাক-উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে কুরবানী করা, তাও আদায় হলো। আর কুরবানীর বরকতময় গোশতও লাভ হলো। এতে যেমন তাদের কুরবানী নিশ্চিতরূপে  আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুল ও মঞ্জুর হবে, সাথে সাথে তা তাদের জন্য ফযীলত, বারাকাত, ফুয়ূযাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাযাত  সর্বোপরি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর  পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের খাছ সন্তুষ্টি লাভ করার ওসীলাও হবে।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর  পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন। সুতরাং উম্মতেরও দায়িত্ব ও কর্তব্য যে, সামর্থ্য থাকলে উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া। আর এ ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ নির্দেশও রয়েছে।
অতএব, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের ওয়াজিব কুরবানীর পাশাপাশি সামর্থ্য থাকলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামেও কুরবানী দেয়া। আর যারা এককভাবে কুরাবনী দিতে অক্ষম বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারা একাধিকজন মিলে কুরবানীর পশু কিনে উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী দেয়া। আল্লাহ পাক সকলকে কুরবানী দিয়ে কুরবানীর অফুরন্ত ফযীলত হাছিল করার তাওফীক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা