মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ১৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাস, দিন ও তারিখগুলো থেকে কতক মাস, দিন ও তারিখ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কাছেও সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত।

আলোচ্য রজব মাস এবং তার মধ্যস্থিত পহেলা রজবের রাত, পহেলা জুমুয়ার রাত, ছয় রজব, চৌদ্দ রজব এবং সাতাশ রজবের রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখ্য, এ রজব মাসকে স্বয়ং আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু তাঁর কালামে পাকে এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। একইভাবে এ মাসের পহেলা তারিখের রাত দু’য়া কবুলের খাছ রাত। পহেলা জুমুয়ার রাত আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মা আলাইহাস সালাম-এর রেহেম শরীফে তাশরীফ নেয়ার রাত এবং সাতাশ তারিখের রাত মি’রাজ শরীফের রাত। কাজেই এসব রাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও বুযুর্গী বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। এ মাসের ছয় ও চৌদ্দ রজব আল্লাহ পাক-এর মাহবুব ওলী মাশহুর ও মাকবুল চীশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, সুলত্বানুল হিন্দ, আওলাদে রসূল, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি, আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিছাল ও বিলাদত শরীফ সংঘটিত হওয়ার কারণে উক্ত দিন দু’টি ফযীলতপূর্ণ, মর্যাদামণ্ডিত।

          এমনিভাবে এ মাস ও এর দিন এবং রাতের অনেক অনেক বুযুর্গীর বর্ণনা হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফাযায়িলের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। আরো বর্ণিত রয়েছে আমলের কথা।

          জ্ঞাতব্য, আমল কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত যেহেতু ইখলাছ এবং আমলের জন্য শ্রেষ্ঠতম মাস মাহে রমাদ্বান শরীফের প্রস্তুতিও যেহেতু শুরু হয় এ রজব মাস থেকেই সে কারণে “ইখলাছ”-এর ব্যাখ্যাই এ লেখায় পেশ করা হলো।

          ইখলাছ’ অর্থ একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা। ইখলাছের আরেক নাম ইহসান। শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের মধ্যে সরাসরি ও রূপান্তরিতভাবে একাধিক স্থানে উল্লেখ রয়েছে। যেমন কালামুল্লাহ শরীফে শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

وما امروا الا لیعبدوا الله مخلصین له الدین حنفاء ویقیموا الصلوة ویؤتوا الزکوة وذلک دین القیمة.

“বান্দারা তো আদিষ্ট হয়েছে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে ইখলাছের সাথে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায আদায় করতে ও যাকাত দিতে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।” (সূরা আল বাইয়্যিনাহ-৫)

          আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان الله لایقبل من العمل الا ما کان له خالصا وابتغی به وجهه

          “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ঐসব আমল কবুল করেন না, যা ইখ্লাছবিহীন ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্য ব্যতীত করা হয়। (নাসায়ী শরীফ)

          বুঝা গেল, বান্দা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যাই করুক না কেন তা যদি ইখলাছের সাথে না করে তাহলে তা আল্লাহ তায়ালার দরবারে কস্মিনকালেও কবুলযোগ্য হবে না। শুধু যে কবুলযোগ্যই হবে না তা নয় বরং ইখলাছবিহীন আমলগুলো রিয়া বা লৌকিকতার মধ্যে গন্য হবে। হাদীছ শরীফের ভাষায় যা গুপ্ত শিরিকের অন্তর্ভুক্ত। ফলে রিয়াকারী ব্যক্তি যত বড় আমলই করুক তার কোনরূপ ফায়দা সে লাভ করতে পারবে না। বরং তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঐ সকল নামাযীদের জন্য আফসুস, অর্থাৎ তাদের জন্য ওয়ায়িল-জাহান্নাম, যারা গাফলতির সাথে এবং মানুষকে দেখানোর জন্য নামায আদায় করে।” (সূরা মাউন-৪, ৫, ৬)           আর ছহীহ্ মুসলিম শরীফের হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “শহীদ জিহাদের ময়দানে জীবন দেয়ার পরও, ক্বারী ছাহেব কুরআন শরীফ শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়ার পরও, আলিম ছাহেব ইল্ম অর্জন ও ইল্ম তা’লীম দেয়া ও প্রচার-প্রসার করার পরও এবং দানশীল প্রতিটি নেক কাজে দান বা সাহায্য করার পরও সর্বপ্রথম হিসাবের কাঠগড়ায় দ-ায়মান হবে এবং সর্বপ্রথম জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

          কাজেই, প্রত্যেক ব্যক্তি সে যেই হোক-পুরুষ হোক, মহিলা হোক, ইমাম হোক, মুছল্লী হোক, আমীর হোক, মুরুব্বী হোক, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত্ তাফসীর, মাওলানা, মৌলভী সকলের জন্যেই ইখ্লাছ অর্জন করা ফরয। আর এই ইখ্লাছ অর্জন করতে হলে একমাত্র উপায় হলো, একজন হক্কানী-রব্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ক্বাল্বী যিকির ও ইল্মে তরীক্বত বা তাছাউফের অন্যান্য সবক আদায়ের মাধ্যমে রিয়াসহ যাবতীয় বদ খাছ্লত দূর  করে ইখ্লাছ অর্জনের কোশেশ করতে হবে।

          আল্লাহ পাক সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা