মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৫৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী সপ্তম মাসের নাম রজব। এ মাসটি চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের একটি। বছরের যে পাঁচটি রাতে বিশেষভাবে দু’য়া কবুল হয় রজব মাসের পহেলা রাতটি তারমধ্যে সর্বপ্রথম। এ মাসের প্রথম শুক্রবার রাতটি রাগায়িবের রাত। আর সাতাশ তারিখ রাতটি মি’রাজ শরীফের রাত। ইত্যাদি কারণে মাসটির মর্যাদা-মর্তবা ফুটে উঠেছে।

এ মাসেই মাহে রমাদ্বান শরীফের আমলের প্রস্তুতি শুরু হয়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসের চাঁদ দেখামাত্র দু’য়া করতেনঃ

اللهم بار ك لنا فى رجب وشعبان وبلغنا رمضان.

 (আল্লাহুম্মা বারিক্লানা ফী রজাবা ও শা’বান ওয়া বাল্লিগ্না রমাদ্বান)

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক! রজব ও শা’বান মাসে বরকত দান করুন এবং রমাদ্বান মাস পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক দিন।” (হিল্ইয়াতুল আওলিয়া, তবাক্বাতুল আছফিয়া, মীযানুল ই’তিদাল)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “রজব’ হচ্ছে বীজ বপনের মাস, শা’বান হচ্ছে পানি সেঁচ করার মাস এবং রমাদ্বান শরীফ হচ্ছে ফসল কাটার মাস। যে ব্যক্তি রজব মাসে ইবাদত-বন্দিগীর বীজ বপন করবেনা এবং শা’বান মাসে চোখের পানি দ্বারা তাতে পানি সেঁচ করবেনা, সে কি করে মাহে রমাদ্বান শরীফে সেই ফসল কাটার আশা করতে পারে। অর্থাৎ সে ব্যক্তির পক্ষে হাক্বীক্বীভাবে রমাদ্বান শরীফের রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করা সম্ভব হবেনা।

অতএব, এ মাস আসা মাত্রই প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের দায়িত্ব কর্তব্য হবে, নিজের বদ আক্বীদা ও আমল তথা কুফরী আক্বীদা ও আমল থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগ্ফার করে সঠিক আক্বীদা ও আমলে নিয়োজিত হয়ে যাওয়া। কারণ, আক্বীদা যদি সঠিক না হয় অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের যে আক্বীদা সে মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করা না হয় তাহলে যে বা যত আমলই করা হোক না কেন, তা আল্লাহ পাক-এর নিকট কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য হবেনা।

আর আক্বীদা ও আমল সঠিক করার জন্য অবশ্যই উচিত, যামানার মাঝে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল নায়িব ও ওয়ারিছ, যিনি যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, তাঁর ছোহবত ইখতিয়ার করা। যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমামের ছোহবত ব্যতীত সঠিক আক্বীদা পোষণ করা এবং সঠিক আমল করা কখনই সম্ভব নয়। যার কারণে হাদীছ শরীফে শতাব্দীর মুজাদ্দিদ প্রেরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। (আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত)

মুজাদ্দিদগণের তালিকায় ‘লাওহে মাহফুযে’ লিপিবদ্ধ আছে যে, বর্তমান হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, “মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।” আর সপ্তম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, “সুলত্বানুল হিন্দ হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি।” যিনি এ রজব মাসের ৬ তারিখ সোমবার যমীনে তাশরীফ আনেন এবং এ মাসেরই ১৪ তারিখ সোমবার ৯৭ বছর বয়স মুবারকে যমীন থেকে বিদায় নেন।

তিনি এমন এক মর্যাদাসম্পন্ন ওলী যাকে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওযা শরীফের পাশে ডেকে সুলত্বানুল হিন্দ, সুলত্বানুল মাশায়িখ ইত্যাদি লক্বব মুবারক দিয়ে তাঁর হিদায়েতের কেন্দ্রস্থল ঠিক করে হিন্দুস্থানে আসার জন্য নির্দেশ করেন। সেই নির্দেশ মুবারক পেয়ে তিনি সেখানে আসেন এবং দ্বীনি দাওয়াত ও তা’লীমে মশগুল হয়ে যান। বর্ণিত রয়েছে, তাঁর দ্বীনি দাওয়াতের ওসীলায় এক কোটিরও বেশী বিধর্মী দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হন। (সুবহানাল্লাহ)

তিনি আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধগুলো তথা সুন্নতের এতো সুক্ষ্মাতীসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ, পালন ও বাস্তবায়ন করার কোশেশ করেন, যার কারণে তিনি ইন্তিকাল করার সাথে সাথে তাঁর কপাল মুবারকে কুদরতীভাবে সোনালী অক্ষরে লিখা ভেসে উঠেছিলো-

هذا حبيب الله مات فى حب الله

অর্থাৎ- “ইনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আল্লাহ পাক-এর মুহব্বতে ইন্তিকাল করেছেন।” অর্থাৎ আওলিয়ায়ে কিরামগণের মধ্যে আল্লাহ পাক তাঁকে ‘হাবীব’ হিসেবে কবুল করে নেন। (সুবহানাল্লাহ)

সুলত্বানুল হিন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রধান খলীফা হযরত বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমার শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইন্তিকালের বিশদিন পর আমি মুরাক্বাবা হালতে তাঁকে দেখে সালাম ও কদমবুছী করে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আমার শায়খ! আল্লাহ পাক আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ পাক আমাকে তাঁর আরশের অধিবাসী করেছেন।’ অর্থাৎ যারা দায়িমীভাবে আল্লাহ পাক-এর দীদারে চব্বিশ ঘন্টা মশগুল, আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (সুবহানাল্লাহ)

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা